সারাদেশ যখন বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত তখন ফুটবলে ঘটে যাচ্ছে এক যুগান্তকারী ঘটনা। শুধু ফুটবল নয়, বাংলাদেশের জন্যই এ এক নতুন বিষয়। ইউরোপ-আমেরিকার ক্রীড়াঙ্গনে এরকম ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটলেও বাংলাদেশে ঘটছে প্রথম।
এর আগে অভিবাসী বাংলাদেশীরা কখনও কখনও জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করলেও দেশের ইতিহাসে এই প্রথম একজন বিদেশীকে নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র জাতীয় দলে ফুটবল খেলার জন্য।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সর্বোচ্চ কর্তা ব্যক্তি নিশ্চিত করেছেন, তিনি ইসমাইল বাঙ্গুরা। এখন পর্যন্ত শুধু গিনির নাগরিক, কিছুদিন পর হবেন বাংলাদেশের।
ফুটবল সংশ্লিষ্টরা অভিনব এরকম উদ্যোগের ব্যাখ্যায় বলেছেন, বিষয়টা যেনো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের ফুটবলে: আগে গোল করেও ম্যাচ বের করা যাচ্ছে না।
আরও পরিষ্কার করে তারা বলেছেন, ম্যাচের ৮০ থেকে ৯০ মিনিট, অথবা কখনও কখনও ইনজুরি টাইমে গোল খেয়ে ম্যাচ হেরে যাওয়া অথবা ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়া এখন যেনো এক নিয়তি।
বছরখানেক ধরে আন্তর্জাতিক ফুটবলে এরকম অভিজ্ঞতার প্রধান কারণ হিসেবে ওই ফুটবল বোদ্ধারা বলছেন, দলে একজন দক্ষ এবং কার্যকর স্ট্রাইকারের অভাবে নিশ্চিত অনেক গোল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ।
কেনোভাবে এক গোল করলেও আর গোল করতে না পারায় পরে গোল খেয়ে ড্র বা পরাজয় মেনে নিতে হচ্ছে।
এক কথায় তারা বলছেন, বাংলাদেশের ফুটবলে দক্ষ ফিনিশারের অভাব দীর্ঘদিনের। শত চেষ্টা করেও বের করা যাচ্ছে না নিয়মিত স্কোর করতে পারেন এমন একজন ফরোয়ার্ডকে।
বিষয়টা যেমন মর্মাহত করছে অগণিত ফুটবল ভক্তকে তেমনই যন্ত্রণাকর হয়ে উঠেছে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা বাফুফের কাছেও।
সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে কম চেষ্টা করছেন না জাতীয় দলের হেডকোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ।
তবে ভালো স্ট্রাইকার না পেয়ে গত সাফ ফুটবলের পর বাফুফেকে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন ডাচ কোচ। ফেডারেশনকে তিনি ঢাকার ক্লাব ফুটবলে খেলা বিদেশী ফুটবলারদের মধ্য থেকে সবচেয়ে দক্ষ দুই জনকে জাতীয় দলের জন্য বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
তবে অবশ্যই সেটা তাদেরকে এদেশী করে, অর্থাৎ নাগরিকত্ব দিয়ে।
বিষয়টি এতোদিন ভেবে অবশেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এখন আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিষয়টি উত্থাপন করে প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন।
এক্ষেত্রে বাফুফের পছন্দের তালিকায় সবচে এগিয়ে মোহামেডানে খেলা গিনির ষ্ট্রাইকার ইসমাইল বাঙ্গুরা। আরও একজন আছেন পছন্দের। তিনি আবাহনীর ঘানাইয়ান ডিফেন্ডার সামাদ ইউসুফ।
কাজী সালাউদ্দিন বলেন, সারা পৃথিবীতে এটা হচ্ছে, আর আমাদের যেহেতু ষ্ট্রাইকার সংকট চলছিলো, তাই এমন একজনকে আমাদের এখন দরকার।
‘বাফুফে সভাপতি হিসেবে আমি ইতিবাচকভাবে দেখি বিষয়টা। তবে সবকিছু চূড়ান্ত করতে আরও কিছুদিন লাগবে,’ বলে জানান তিনি।
ফিফার নিয়ম অনুযায়ী কোনো ফুটবলার যদি কোনো দেশের ঘরোয়া লিগে টানা ৫ বছর খেলেন তবে তিনি নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন এবং সেটি পাওয়ার পরই জাতীয় দলের জার্সিতে ওই দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।
ইসমাইল বাঙ্গুরা ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগে নিয়মিত খেলছেন।
ফুটবলপ্রেমিদের আশা, ৩ সেপ্টেম্বর অষ্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের যে ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, তার আগেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে লাল-সবুজের জার্সি পরে মাঠে নামবেন ইসমাইল বাঙ্গুরা।
এর আগে কিংবদন্তীর বক্সার মোহাম্মদ অালী এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ গর্ডন গ্রিনিজকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে খেলোয়াড় কাউকে আসল নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘটনা ঘটছে এই প্রথম।