করোনা মহামারীতে আক্রান্ত দেশগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। আফ্রিকার দেশ কেনিয়া আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বেসরকারী কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এরকমই একটি স্কুল ‘মিও ব্রেথ্রেন স্কুল’। মহামারীর আগে এই স্কুলের ক্লাসগুলো শিক্ষার্থীদের কলকাকলীতে মুখরিত থাকতো। এখন সেখান থেকে ভেসে আসে মুরগীর ছানাদের কিচিরমিচির।
শ্রেণীকক্ষের ব্ল্যাক বোর্ডে গণিতের জটিল সমাধানের জায়গায় লেখা আছে মুরগীগুলোর ভ্যাকসিন দেয়ার দিন-তারিখ।
সেন্ট্রাল কেনিয়া স্কুলের মালিক জোসেফ ম্যায়না পালন করছেন গৃহপালিত পশু। শিক্ষাদান থেকে আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প আয়ের লক্ষ্যে তিনি পশু পালন করছেন।
গত মার্চে কেনিয়ায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। জোসেফ স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। তাকে এখনো ঋণের কিস্তি দিতে হচ্ছে। ব্যাংকের সঙ্গে তাকে নতুন সমঝোতায় আসতে হয়েছে।
প্রথম দিকে জোসেফের মনে হতো তার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। কিছুদিন পরে তিনি ঠিক করলেন, কিছু একটা করতে হবে। এভাবে নিজেকে শেষ হতে দেয়া যাবে না।
কেনিয়ার শিশুদের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পড়ে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বেসরকারী স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের দেয়া বেতনের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। স্কুল বন্ধ করে দেয়ার অর্থ হলো শিক্ষক এবং অন্য কর্মীদের বেতন বন্ধ।
খুব কম সংখ্যক স্কুল অনলাইনে পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষা কার্ক্রম চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে সামান্য পরিমাণ ফি আদায় করতে পারছেন তাতে স্কুলের খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
দেশটির বেসরকারী স্কুলগুলোতে ৩ লাখের বেশী শিক্ষক রয়েছেন। মহামারীর সময়ে তাদের বেশীরভাগ শিক্ষককে বিনা বেতনে ছুটি দেয়া হয়েছে। আরো দুঃখজনক বিষয় হলো কেনিয়ার ১৩৩টি বেসরকারী স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
এ পরিস্থিতি এড়াতে সেন্ট্রাল কেনিয়ার ‘রোকা প্রিপারেটরি’ স্কুলেও খামার গড়ে তোলা হয়েছে। ২৩ বছর আগে স্কুলটি গড়েছিলেন জেমস কুঙ্গু। তিনি কখনো ভাবেননি এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। স্কুলটি খেলার মাঠে এখন গড়ে তোলা হয়েছে সবজি বাগান। তিনি মুরগীও পালছেন। স্কুলের দুজন কর্মী খামার চালাতে সহযোগিতা করছেন।
স্কুলের মালিকরা যখন বিকল্প আয়ের পথ করে নিচ্ছেন তখন স্কুলের শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। মাসের পর মাস এই শিক্ষকদের কোন বেতন নেই। তবে সরকারী স্কুলের স্টাফরা বেতন পাচ্ছেন নিয়মিত। বেকার শিক্ষকরাও বিকল্প আয়ের পথ খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন।
কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির স্কুলে গত ৬ বছর ধরে শিক্ষকতা করছিলেন ম্যাকরাইন ওটিয়েনো। স্কুল বন্ধ হওয়ার পর ভাড়া দিতে না পারায় তাকে বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করা হয়। খাদ্য আর আশ্রয়ের জন্য ম্যাকরাইন ন্যানি’র (বাচ্চা দেখাশোনা) কাজ নিয়েছেন।
আরেক শিক্ষক গ্লোরিয়া শিক্ষকতা ছাড়তে বাধ্য হয়ে উদ্যোক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি মুদি দোকান দিয়েছেন। ব্যবসায় ভাল করবেন বলে আশা করেন গ্লোরিয়া। তার আর শিক্ষকতায় ফেরার ইচ্ছা নাই। করোনা মহামারী শেষ হলেও তার স্কুল সহসা খুলবে বলেও তিনি মনে করেন না।
কেনিয়ার ‘প্রাইভেট স্কুল এসোসিয়েশন’ মনে করে, বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা সমাধানে ৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার প্রয়োজন। শিক্ষকরা নিজ পেশায় থাকবেন বলেও সংস্থাটি আশা করে।
কেনিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য ঋণ সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করেছে।