টানা ৪০ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন পশ্চিম বাংলার কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অবশেষে লড়াই থামলো সত্যজিৎ রায়ের অপুর। দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা সিনেমার অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আজ ভারতীয় সময় ১২টা ১৫ মিনিটে তাঁর মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়া হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাতে খবরটি প্রকাশ করেছে পশ্চিম বাংলার সংবাদমাধ্যমগুলো।
আগে থেকেই সৌমিত্রের অবস্থাকে ‘অত্যন্ত আশঙ্কাজনক’ বলে আসছিলেন চিকিৎসকরা। যেকোনো সময় ‘দুসংবাদ’ শোনার জন্য তাঁর পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও ভক্তঅনুরাগীদেরকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়।
সর্বশেষ ব্রিফিংয়ে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, সৌমিত্রের শারীরিক অবস্থা উন্নতির আর কোনো আশা নেই। ‘মিরাকল’ কিছু না ঘটলে এই সংকটজনক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসাও সম্ভব নয় বলে জানান তারা।
শেষ পর্যন্ত কোনে মিরাকল ঘটেনি। সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন অপুর সংসার, চারুলতা, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনি সংকেত, গণদেবতার মতো অসংখ্য বাংলা ছবির এই কিংবদন্তী অভিনেতা। তার মৃত্যুতে শুধু পশ্চিম বাংলায় নয়, শোকার্ত গোটা বাংলা ভাষাভাষি মানুষ।
সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবির মধ্য দিয়ে ১৯৫৯ সালে চলচ্চিত্রে পা রাখেন সৌমিত্র। এরপর গত ছয় দশক ধরে অভিনয় জগৎকে ঋদ্ধ করে যাচ্ছেন তিনি। অভিনয়ে আসার আগে তিনি রেডিওতে ঘোষক ছিলেন এবং মঞ্চে ছোট চরিত্রে অভিনয় করতেন। ধীরে ধীরে তিনি সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন।
তার অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায় ফেলুদা। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ ছবিতে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেন। প্রথমে ফেলুদা চরিত্রে তার চেয়েও ভালো কাউকে নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তার অভিনীত ফেলুদার প্রথম ছবি ‘সোনার কেল্লা’ বের হওয়ার পর সত্যজিৎ রায় স্বীকার করেন যে, তার চেয়ে ভালো আর কেউ ছবিটি করতে পারত না।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় করোনাতে আক্রান্ত হয়ে গত ৬ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর তিনি করোনা মুক্ত হয়ে কিছুটা সুস্থ হলেও নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন। পাশাপাশি মস্তিষ্কও কাজ করা বন্ধ হয়ে দেয়।