দীর্ঘ ৩৫ পর আগামী বছর থেকেই সৌদি আরবে সিনেমাসহ অডিও ভিজ্যুয়াল মিডিয়া প্রদর্শন উন্মুক্ত হচ্ছে। প্রায় অর্ধশতাব্দী আগেও দেশটির প্রধান শহরগুলোতে সিনেমার প্রচলন ছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার স্টেট অয়েল কোম্পানি (পরে আরামকো) জন্য কাজ করত এমন পশ্চিমা ব্যক্তিরা সৌদিকে প্রথম সিনেমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।
আরামকোর কর্মীরা আমেরিকান এবং ইউরোপীয় চলচ্চিত্র দেখতে ১৯৩০’র দশকের মাঝামাঝি তাদের আবাসিক এলাকাগুলোতে বড় বড় পর্দা স্থাপন করেন। বৈদেশিক কর্মীদের আবাসিক কমপ্লেক্স থেকে সৌদির চারটি প্রধান শহরে (রিয়াদ, জেদ্দা, টেফ ও আভা) সিনেমা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় শুধু জেদ্দায় থিয়েটার সংখ্যা বেড়ে ৩০টিতে পৌঁছায়। আর টিকিটের দাম এক ধাক্কায় ৩ রিয়েল থেকে বেড় হয় ১০ রিয়েল।
প্রাথমিকভাবে সিনেমা থিয়েটারগুলো মূলত স্পোর্টস ক্লাব, বিদেশী দূতাবাস এবং ব্যক্তিগত সমর্থন পায়। ধনী ব্যবসায়ীরা অনেক থিয়েটার তৈরি করে এবং যদিও তারা কায়রো ও বৈরুতের মত অন্যান্য আরব শহরগুলোর মানদণ্ডের কাছাকাছি যেতে পারেনি। তবে থিয়েটার খোলাটা কঠিন কাজ ছিল না। কারণ থিয়েটার খোলার জন্য কোনও আনুষ্ঠানিক লাইসেন্সের প্রয়োজন ছিল না।
‘সিনেমা অ্যালি’ হিসাবে পরিচিত রিয়াদের আল-মুরব্বা এলাকায় বেশ কয়েকটি সিনেমা হল রয়েছে। এছাড়াও জেদ্দার সবচেয়ে বিখ্যাত ‘বাব শরীফ’ যা জেদ্দার সবচেয়ে প্রাচীনতম স্থানে অবস্থিত এবং হিন্দয়ী জেলায় ‘আবু সাফিয়া’ সিনেমা হল অবস্থিত।
১৯৬০ ও ১৯৭০’র দশকে দেশটির পূর্ব প্রদেশের তেল কোম্পানিগুলো অল্প কয়েকটি ডকুমেন্টারি সিনেমা বানিয়েছিল। আরামকোর বানানো সর্বাধিক বিখ্যাত ডকুমেন্টারির মধ্যে ছিল কিং আব্দুল আজিজের উপস্থিতিতে কিংডমের প্রথম পেট্রোলিয়াম উদ্বোধন সম্পর্কে একটি তথ্যচিত্র।
প্রথম সৌদি পরিচালক হিসেবে গণ্য করা হয় আব্দুল্লাহ আল-মুহাইয়ানকে। ১৯৭৫ সালে রিয়াদ শহরের উন্নয়নের কথা নিয়ে তিনি যে ডকুমেন্টারির মুক্তি দেন সেটাকেই প্রথম সৌদি চলচ্চিত্র হিসেবে ধরা হয়।
১৯৭৬ সালে কায়রোতে তথ্যচিত্রের উত্সবে আল-মুহিহীন অংশগ্রহণ করেন। পরের বছর তিনি একটি আরো গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্রের মুক্তি দেন। লেবাননের গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে একটি তথ্যচিত্র বানান যাতে সুন্দর শহর বৈরুতের ধ্বংসলীলা তুলে ধরেন। এর জন্য ‘নেফারতিতি’র সেরা পুরস্কারও পান।
সৌদি চলচ্চিত্র স্বপ্নে প্রথম আঘাত আসে ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবর্তন মধ্য দিয়ে। যখন জাওয়ায়মান আল-ওয়েতি এবং তাদের চরমপন্থী সহকর্মীরা মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ প্রচেষ্টার অনুসরণ করে। এসময় দেশটির প্রধান প্রধান সমস্ত শহরগুলোতে সিনেমা বন্ধ হয়ে যায়। দূতাবাসগুলো তাদের দরজা বন্ধ করে দেয়। এ সময় সমাজের অনেক ধর্মীয় মানুষের কাছে সিনেমা বানানো বা আঁকার কাজটি ‘নৈতিক অপরাধ’ হিসাবে গণ্য হয়ে ওঠে।
সেই ইভেন্টগুলোই শেষ পর্যন্ত সৌদিতে সিনেমা সংস্কৃতির অনুপস্থিতিতে পরিণত হয়েছিল। গত কয়েক দশক ধরে সৌদি জনগণ সংস্কৃতি ও জ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ উত্স হিসাবে চলচ্চিত্রের গুরুত্বকে বিশ্বাস করে না। এই সময়ের ট্রেস এখনও অনেক সৌদিদের মধ্যে বিদ্যমান। বিশেষত নেতিবাচক ধারণা যে, সিনেমা সমাজের খুব নৈতিক কাঠামোকে উন্মোচন করে, কারণ এতে এমন একটি সামগ্রী রয়েছে যা ইসলামিক নৈতিকতা ও শিক্ষার সাথে বিরোধ করে।
সৌদি আরবে মুভি থিয়েটারের অনুপস্থিতিতে সেখানকার লোকেরা তাদের নিজ বাড়িগুলোতে ছোট ছোট থিয়েটার স্থাপন করে এবং প্রতিবেশী বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভ্রমণের সময় সিনেমা দেখার সাথে সামঞ্জস্য করতে সক্ষম হয়।
বর্তমানে বেশিরভাগ সৌদি, বিশেষ করে তরুণ সমাজ সিনেমার গুরুত্ব বিবেচনা করছে। যদিও কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, এটি খোলার আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ। তবে সিনেমা শিল্পে সৌদিদের আগ্রহের স্বীকৃতি তাদের সৃজনশীলতায়ই লক্ষ্য করা যায়। যা কয়েক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উত্থান হয়েছিল। তারা তাদের প্রতিভার অনুশীলন এবং প্রচারের জন্য এখন ইউটিউব ব্যবহার করেছে।