সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাগত জানালেও এখন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। ‘শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে’ জানিয়ে তা ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের ক্ষতি করতে পারে’ বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে।
নিউইয়র্ক টাইমসের বরাতে আলজাজিরা জানায়, পেন্টাগন ও গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মার্কিন কূটনীতিকদের মনোভাবও একই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে জানান: ক্রাউন প্রিন্স সালমান সম্ভাব্য পরিণতির ব্যাপারে যথেষ্ট বিবেচনা ছাড়াই বেপরোয়া আচরণ করছেন।
ক্রাউন প্রিন্স সালমানকে তার বাবা কিং সালমান গত জুনে ক্ষমতার পরবর্তী উত্তরসূরি ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ‘বেপরোয়া’ হয়ে উঠছেন ক্রাউন প্রিন্স।
ইতোমধ্যে ‘দূর্নীতি বিরোধী অভিযান’ চালিয়ে ৪ নভেম্বর বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। আটকদের মধ্যে ১১ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, ক্ষমতাধর ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। এছাড়া ইতোমধ্যে দু’জন সৌদি প্রিন্সের মৃত্যুর খবরও গণমাধ্যমে এসেছে।
এছাড়া লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি আকস্মিকভাবেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সৌদি রাজধানী রিয়াদের টেলিভিশন থেকে এ ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ইরান এবং হেজবুল্লাহর তার দেশের আভ্যন্তরিণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।
এখনও সৌদি আরব থেকে ফিরেননি হারিরি। লেবাননের অভিযোগ, ইচ্ছার বিরুদ্ধে হারিরিকে আটক করে রেখেছে রিয়াদ। সৌদি আরব জোর করে হারিরিকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ হেজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহর।
নিউইয়র্ক টাইমসকে বলা স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তার এমন মন্তব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতর অনৈক্যেরই প্রতিফলন। এর আগে সৌদি আরবে এই গণগ্রেপ্তারের প্রশংসা করেছিলেন ট্রাম্প।
টুইটার বার্তায় ট্রাম্প বলেছিলেন: সৌদি আরবের কিং সালমান ও ক্রাউন প্রিন্সের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে, তারা স্পষ্টভাবেই জানে তারা কী করছে। এদের কেউ কেউ তাদের দেশকে কয়েক বছর ধরে শোষণ করছে।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পান মোহাম্মদ বিন সালমান। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হচ্ছে ‘অপারেশন ডিসিসিভ স্টর্ম’ পরিচালনা, যাতে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে হামলা চালায় সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট।
তবে এই যুদ্ধে সাফল্যের দেখা পাচ্ছে না সৌদি জোট। এখনও রাজধানী সানা দখলে রেখেছে হুতিরা, উত্তরাংশের নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে। আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে সংঘাতের আঘাত সইতে হচ্ছে বেসামরিক নাগরিকদের। এখন পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি। দুর্ভিক্ষের সম্মুখিন দেশটি, রয়েছে কলেরার মারাত্মক মহামারি। ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের মাধ্যমে ‘সরাসরি সামরিক আগ্রাসনের’ জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করছে সৌদি আরব।