দু’দিন আগে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছিলেন চলার পথের কিছু অভিজ্ঞতা আর কাহিনী নিয়ে ছোটগল্প লিখবেন। একই সঙ্গে জানাবেন ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা।
তার সূত্র ধরে এবার তিনি প্রকাশ করলেন ‘একটি ছেলে ও আলাদিনের জাদুর চেরাগ’ সিরিজের প্রথম ছোটগল্প। ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘দুর্নীতি দমন এবং দুর্নীতিবাজকে ধরিয়ে দিতে একজন নাগরিকের করণীয় কী কী’ শিরোনামে তিনি লিখেছেন:
আজ থেকে ৪৮ বছর আগে এই বাংলার মানুষ একটি স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে তিরিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। আর সেই স্বপ্ন ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। এমন একটি দেশ যেখানে সকল মানুষের থাকবে সমান অধিকার- মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে- গরিব/ধনী, নারী/পুরুষ সবার সমান অধিকার। সেই স্বপ্নের দেশে থাকবে ন্যায় বিচার ও এমন সমাজ ব্যবস্থা যেখানে সকল নাগরিক সমান সুযোগ পাবে তার যোগ্যতা অনুযায়ী। এমন একটি সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ যেখানে সবার জন্য থাকবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, বাসস্থানের ব্যবস্থা, শিক্ষার ব্যবস্থা, এমন একটি সোনার দেশ যেখানে চিকিৎসার অভাবে কেউ মারা যাবে না। কত সুন্দর এই সোনার বাংলার স্বপ্ন, তাই না?
আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন একটি সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে। এই অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে ও আরও গতিশীল করতে আমাদের সকলের কিছু না কিছু করণীয় আছে।
একটি সুস্থ সবল মানুষের জীবন ও স্বপ্ন যেমন কেড়ে নিতে পারে ক্যানসারের মতো একটি ব্যাধি, ঠিক তেমনি একটি জাতির প্রাণ ও স্বপ্ন ধূলিসাৎ করতে পারে আরেক ধরনের ক্যান্সার যার অপর নাম দুর্নীতি। আজ আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই সোনার বাংলা বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা এই দুর্নীতি নামক ক্যানসার।
আমরা জানি বর্তমান সরকার দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে। এবং এর নমুনা আমরা দেখেছি কিছু হাই প্রোফাইল ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তদন্ত প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে যা সকল সংবাদ মাধ্যমে নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে।
তাই আজকে আমাদের সকলের দায়িত্ব সরকারকে এই মহতী উদ্যোগে সহায়তা করা কেননা আমরা সবাই কিন্তু কোন না কোনভাবে এর জন্য দায়ী। আমি আপনি সবাই এর সাথে জড়িত কারণ আমরা নিজেরা সরাসরি না করলেও আমরা এর সাক্ষী। বললে ভুল হবে না যে আমরা কাউকে না কাউকে চিনি যে চোখের সামনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে কিন্তু আমরা শুধু চুপে চুপে আলাপ সমালোচনা করেছে কোন ব্যবস্থা নেই নাই। এখন হয়তো প্রশ্ন করবেন, কি আর ব্যবস্থা নিবো, আমাদের কথা কেউ কি শুনবে? হ্যাঁ, শুনবে আমরা যদি সঠিক প্রক্রিয়ায় সহায়তার হাত বাড়াই।
সর্বপ্রথম আমাদের বুঝতে হবে দুর্নীতি কী, এর সংজ্ঞা জানতে হবে:
দুর্নীতি (ইংরেজি: Corruption) দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক, নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন আদর্শের নৈতিক বা আধ্যাত্মিক অসাধুতা বা বিচ্যুতিকে নির্দেশ করে। বৃহৎ পরিসরে ঘুষ প্রদান, সম্পত্তির আত্মসাৎ এবং সরকারী ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করাও দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত।
দুর্নীতির সংজ্ঞা আমরা বুঝলাম এখন এর আলামত কীভাবে চিহ্নিত করতে হয় সেই দিকে দৃষ্টি দেই। ধরেন কোন এক গ্রামের ছেলে যার বাবা হয়তো ১০ বছর আগে একটা ছোট্ট কাঠের স’ মিল চালিয়ে কোন মতে পরিবার চালাতো। আর আজ,
দুর্নীতিবাজ চিহ্নিত করার তালিকা
১. হঠাৎ তাদের ৩-৪ কোটি টাকার ৩ তালা পাকা বাড়ি
২. বড় ভাই কোন ৫-৬ কোটি টাকার ইট খোলার মালিক
৩. পেট্রোল/সিএনজি ফিলিং স্টেশন প্রক্রিয়াধীন
৪. গ্রামের স্কুলে শত বার্ষিকী অনুষ্ঠানে ৩-৪ কোটি টাকা ব্যয় করে অনুষ্ঠান
৫. টিভি চ্যানেলের মালিক/অংশীদার
৬. ঢাকা শহরে নামে বেনামে একাধিক রেস্তোরাঁ
৭. নামে বেনামে একাধিক ফ্ল্যাট/অ্যাপার্টমেন্ট
৮. আমেরিকা বা ইউরোপে মিলিয়ন ডলারের বাড়ি
৯. ২-৩টি গাড়ি একত্রে যার মূল্য ৩ কোটি টাকার উর্ধ্বে
১০. ………
এখন এইসব দেখে আপনি বলছেন, আরে এইটা তো আমাদের গ্রামের রোকনের কাহিনী এবং ওকে নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনাও করেছেন বন্ধু বান্ধব আর পরিবারের সাথে কিন্তু এ নিয়ে আর কিছু করেন নাই কারণ কিছু যে করার আছে সেটা হয়ত আপনি জানেনও না। এই ধরনের দুর্নীতিবাজরাই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে সব কিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে-নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত আর মিসগাইড করছে।
এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। সাধারণত এদের আয় (ইনকাম) এর সাথে ব্যয় আর সম্পত্তির মিল থাকে না। আর এসব যাচাই বাছাইয়ের দায়িত্ব হচ্ছে NBR (ন্যাশনাল রেভিনিউ বোর্ড) এর এবং পরবর্তীসময় অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করার দায়িত্বটি দুর্নীতি দমন কমিশনের।
একজন নাগরিক তাহলে কী প্রক্রিয়াতে অভিযোগ করতে পারে কোন সম্ভাব্য দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে? এই বিষয়ই আমি আগামীতে জানতে চাইব NBR এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে – হয়ত ফেসবুক লাইভ এর মাধ্যমে।