চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ না কাটাতে হাইকোর্টের নির্দেশ

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা বন্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা আবেদনটি শুনানির জন্য ২০ মে দিন ধার্য করা হয়েছে, ওইদিন পর্যন্ত যাতে গাছ কাটা না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।

আজ আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। শুনানিতে তিনি আদালত অবমাননার রুল জারির আর্জি জানান। তবে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বিষয়টি শুনানির সময়ের আর্জি জানান। এরপর আদালত এবিষয়ে শুনানির জন্য ২০ মে দিন ধার্য করে এই পর্যন্ত যাতে গাছ কাটা না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিক নির্দেশ দেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধে নোটিশ দেয়ার পর গত রোববার আদালত অবমাননার অভিযোগে হাইকোর্টে একটি আবেদন করা হয়। সে আবেদনে উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধ করে রেস্তোরাঁ নির্মাণ কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামিম আকতার ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মঞ্জুরুর রহমানের বিরুদ্ধে রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটায় এদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না, সে মর্মে ওই আবেদনে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।

আদালত অবমাননার আবেদন করার পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘হাইকোর্টে করা আবেদনে আদালত অবমাননার রুল চাওয়ার পাশাপাশি উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধ ও রেস্তোরাঁ নির্মাণ কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোন প্রকল্পের অধীনে সরকার উদ্যানে কী কী কাজ করছে তার বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন হলফনামা আকারে আদালতে দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।’

এর আগে আদালত অবমাননার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধ করতে গত বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ৩ জনকে ইমেইলে নোটিশ পাঠান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওই নোটিশে হাইকোর্টের রায় উল্লেখ করে বলা হয় যে, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা নিছক একটি এলাকা নয়। এই এলাকাটি ঢাকা শহর পত্তনের সময় হতে একটি বিশেষ এলাকা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে এবং এর একটি ঐতিহাসিক ও পরিবেশগত ঐতিহ্য আছে। শুধু তাহাই নয়, আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্র এই এলাকা। এই পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ এলাকাটি একটি বিশেষ এলাকা হিসাবে সংরক্ষণের দাবি রাখে। এখানে এমন কোন স্থাপনা থাকা উচিত নয় যাহা এই এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বিন্দুমাত্র ম্লান করে। আর পরিবেশগত দিক থেকে রমনার উদ্যান বা রমনা রেসকোর্স ময়দান ঢাকা শহরের দেহে ফুসফুসের ন্যায় অবস্থান করছে। কোনভাবেই ইহাকে রোগাক্রান্ত করা যায় না। যেহেতু স্মরণকাল হইতেই এটি উদ্যান হিসাবে পরিচিত, সেহেতু আইন অনুসারে ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান’ সংজ্ঞার আওতাধীন এই জায়গার শ্রেণী সাধারণভাবে অপরিবর্তনীয়। ইহাকে অনাবশ্যক স্থাপন দ্বারা ভারাক্রান্ত করা অবৈধ হইবে।’ নোটিশে আরো বলা হয়, ‘আদালতের রায় উপেক্ষা করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে ব্যবসায়িক স্বার্থে রেষ্টুরেন্ট/দোকান প্রতিষ্ঠার জন্য পরিবেশ ধ্বংস করে অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যা হাইকোর্টের রায়ের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।’

অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘আন্তর্জাতিক মানের স্মৃতিকেন্দ্র’ গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘কিছু গাছ’ কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, কিছু গাছ কাটা হলেও সেখানে আরও এক হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর গাছ কাটা নিয়ে ‘খণ্ডিত তথ্য’ প্রচারে জনমনে ‘বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করা হয় ওই বিবৃতিতে।