চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সোশ্যাল মিডিয়া ও এক পরিবারের কাহন

নাজু গত ৩ দিন ধরে নিজের সাথে নিজেই লড়াই করছে। চলতি হাওয়ায় গা ভাসিয়ে চলা নারী নয় সে। কিন্তু আজ সে বুঝতে পারছে না কোন পথে হাঁটবে। পারিবারিক সম্বন্ধে নয়নের সাথে নাজুর বিয়ে হয়েছে ১২ বছর আগে। বয়সের ব্যবধান একটু বেশি হলেও নাজুর প্রতি নয়নের ভালোবাসা, কেয়ারিংয়ের কোন কমতি ছিল না। এক ছেলে নিয়ে তাদের সংসার। সবাই বলে নামের মতই ভালোবাসার যুগলবন্দীর উদাহরণ তারা দুজন।

নয়ন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। নাজু ছেলে সংসারের ব্যস্ততার মাঝেও নিজের আগ্রহে ইন্টারনেট জগতের অনেক কিছু রপ্ত করেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে নয়নকে এড করে দিয়েছিল সে নিজেই। নাজু বলতো, সোশ্যাল মিডিয়াতে পুরনো বন্ধুদের যেমন পাবে তেমনি যোগাযোগের জন্য ইমু ভাইবারসহ আরো অনেক সুবিধা আছে ।

প্রথম প্রথম নয়ন তেমন আগ্রহ পেত না এ বিষয়ে। বরং বিরক্ত হতো। এমন কি অনেক কিছু পোস্ট করত না বুঝে। নাজু বারবার সাবধান করত। অনেক সময় নিজে চেক করত তার সাইটগুলো। নয়নের প্রতি কোন অবিশ্বাস ছিল না নাজুর। হয়তো সে কারণে এ ঝড় উঠছে তাদের পারিবারিক জীবনে।

হঠাৎ করে নয়নের মাঝে পরির্বতন লক্ষ্য করে নাজু। বিশেষ করে রাতের বেলাতে নয়নের ফোনে ফেইসবুক, চ্যাটিং রীতিমতো নেশাতে পরিণত হয়। এ নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হয় দুজনের। এমনকি ছেলে ফোন ধরলে ও নয়ন ক্ষেপে যেতো।

এসব দেখে নাজুর সন্দেহ হতে শুরু করে। সে কদিন ধরে নয়নকে কিছু না বলে নিজের মত খোঁজ নিতে থাকে। জানতে পারে নয়ন ফেসবুকে একটা সম্পর্কে জড়িয়েছে। কিন্তু সম্পর্কটা ভালোভাবে বুঝতে হলে নয়নের ফোনটা খুব দরকার। কারো প্রাইভেসিতে হাত দেয়া ঠিক না – নিজের এ নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে লুকিয়ে নয়নের ফেইসবুকের ম্যাসেঞ্জার দেখে নাজু স্তদ্ধ।ফেসবুক জরিমানা-৫শ’ কোটি ডলার-কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা

তাদের ১২ বছরের সংসার যেন ১২ সেকেন্ড তছনছ হয়ে গেল। চোখের সামনে নয়ন আর ইতি নামের মেয়েটির ছবি, ম্যাসেজ বলে দিচ্ছে এ কেবল আর ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুত্বের সম্পর্ক না।

নয়ন নাজুর কাছে ইতির বিষয়টা অস্বীকার করতে পারেনি। নাজুর কাছে এ ভুলের ক্ষমা চাইছে। কিন্তু নাজু পারছে না নয়নকে আর বিশ্বাস করতে। নয়ন সব সোশ্যাল সাইট ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছে এ ঘটনার পর। নিজের সংসার বাঁচাতে। আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তার ধারণা এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বলেই সে মিথ্যা মোহে পড়ছে। নাজু আর ছেলেকে ছাড়া তার জীবনে আর কিছু নেই। তবে নাজু এ যুক্তিটা মানতে পারছে না। আসলে নয়নের মানসিক সংকট ছিল বলেই ইতি নামের মেয়েটির সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। নাজু বিষয়টা জেনেছে বলেই নয়নের এখন এই পরিতাপ এটাই সত্য।

দাম্পত্য জীবনে বিশ্বাস ছাড়া চলা যায় না। তাহলে কি করবে এখন নাজু। সোশ্যাল সাইট কি আসলে দায়ী এ ঘটনার জন্য? সে নিজে তো সোশ্যাল সাইট ব্যবহার করছে অনেক দিন ধরে। তার ব্যক্তি জীবনে তো এমন কিছু সে আসতে দেয়নি। নয়ন একজন বিবেকবান মানুষ। তার ভালো মন্দ বিচার করার বোধ আছে। মানসিক চিন্তা চেতনা দিয়ে তার জানা উচিত সম্পর্কের পরিধি কতটা হবে। তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করাটা ব্যক্তি মানসিকতার বিষয়। এতদিন অনেকের কাছে শুনেছে সোশ্যাল সাইটের কারণে পরিবার ভাঙ্গছে। নারী পুরুষ উভয়ই ভুল করে সর্বনাশ করছে নিজেদের। আজ সে ভাঙ্গনের মুখে তার ঘর।

কিন্তু প্রযুক্তি মানুষকে কাছে আনতে গিয়ে নিজের সত্ত্বাকে বিকিয়ে দিতে বলেনি। নয়ন বিকৃত আনন্দের মোহতে নিজেকে ডুবিয়েছে। নাজু তার অন্ধ দৃষ্টিকে উন্মোচন করেছে বলে সে অনুতপ্ত হচ্ছে।

দীর্ঘদিনের সংসার, ছেলে আর ভালোবাসা কারণে নাজু পারছেনা নয়নকে ছেড়ে যেতে। তবে নাজুর বিশ্বাস ফিরে আনার দায়িত্ব নয়নের। যদি সত্যি সে তার ভুল বুঝতে পারে তাহলে প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকার দরকার নেই।

কারণ অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হয় না। একইভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার না করলেও মন্দ কাজ হবে, যদি নিজের মানসিকতা নিয়ে সংশয় থাকে। সুতরাং সোশ্যাল মিডিয়া সমাজ নষ্ট করছে এটা একটা খোঁড়া যুক্তি মানুষের।

প্রতিটি বিষয়ের ভালো মন্দ আছে। সেখান থেকে নিজেকে বুঝতে হবে কোনটা গ্রহণ করব। অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগ এখন। সব ধরনের মানুষের বিচরণ তথ্য প্রযুক্তির বিশেষ মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়াতে। এতে করে মানুষের কাছে আসার অবাধ সুযোগ হয়েছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আর এ ক্ষেত্রে নিজেকেই বুঝতে হবে এখানে বিচরণ করার জন্য সে কতটা প্রস্তুত। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিলে সামাজিক অবক্ষয় শুরু হয় পরিবার থেকেই। আর ক্রমশ এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে।

সুতরাং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করতে গিয়ে আত্মিক চেতনাবোধের বিসর্জন দেয়াটা মানুষের নিজস্ব মানসিক সংকট ও অপরিমিত বোধের অভাব। যা সমাজ জীবনে ভাইরাল হচ্ছে ফেইসবুকের পোস্টের মত। যুগের সাথে উপযোগী হতে গিয়ে নাজু নয়নের মত সংসার ভাঙ্গনকে রোধ করতে শুধু সোশ্যাল মিডিয়াকে দায়ী করে হতাশ হলে চলবে না। বরং ছুটে চলা এ জীবন পথে নিজেদের পারিবারিক সময়টাকে যন্ত্রময় না করার চেষ্টা করতে হবে সকলকে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)