বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগানো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবটমানবী সোফিয়ার বাংলাদেশে আসার আগ থেকেই তাকে দেখার জন্য বাংলাদেশিদের মধ্যে দেখা গেছে প্রচণ্ড কৌতুহল। এই কৌতুহল ছাপিয়ে আরও একটি প্রসঙ্গ মুখ্য হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। সেটা হলো, সোফিয়া, তার পোশাক এবং ওড়না!
অদ্ভুত শোনালেও সত্যি, যন্ত্রমানবী সোফিয়া দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি আসর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭-তে অংশ নিতে বাংলাদেশে আসার আগেই কিছু বিশেষ চিন্তাধারার ব্যক্তি দাবি করতে থাকেন, দেশে এলে সোফিয়াকে ওড়না পরতে হবে! কেননা এটি একটি নারী রোবট। ওই দাবিগুলোর একটি হিসেবে একটি স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে ফেসবুক জুড়ে:
এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সোফিয়া দেশে আসার আগে থেকেই বইছে বিরক্তি, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ আর স্যাটায়ারের ঝড়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন:
সোফিয়া ওড়না পরেই হাজির হলেন তাহলে!
শাড়ি হলেও না হয় বুঝতাম দেশি পোষাক!
ও তে ওড়না।
রোবোমানবীর বাংলাদেশী সংস্কৃতি শিক্ষার প্রথম পাঠ।
বি.দ্র. ঐতিহ্য রক্ষায় ওড়নাটি জামদানী।
P.S. যে কারণে রোবোমানবীর আগমন, সেই ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭ ‘র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, তাকে ওড়না ছাড়াই দেখা গেছে। কেউ কী উদ্যোক্তাদের জিজ্ঞাসা করে জানাতে পারবেন, কেন এই পরিবর্তন?
প্রবাসী লেখক আশা নাজনীন তিরস্কার করে লিখেছেন:
রোবট সোফিয়াকে নিয়ে অনেক বাঙ্গালী পুরুষের যত আগ্রহ, তার অর্ধেক উনাদের নিজের ঘরের অরজিনাল স্ত্রী’কে নিয়ে থাকলেও উনারা জীবনের অন্তত ১২ আনা হইলেও উপভোগ করে যাইতে পারতেন
আর সাক্ষাৎকারে সোফিয়া নাকি বলছে ‘দারুণ লেগেছে বাংলাদেশ’
আমি একটু জানতে চাচ্ছিলাম, ‘হাই, কেমন লেগেছে বাংলার পুরুষদের?’
স্যাটায়ারধর্মী অনলাইন পোর্টাল দ্রিঘাংচু’র সম্পাদক নূর সিদ্দিকী সোফিয়ার আগমন নিয়ে লিখেছেন এক দারুণ স্যাটায়ার। ফেসবুকে তার চুম্বক অংশ পোস্ট করেছেন তিনি। সেখানেও রয়েছে এই ‘ওড়না’ প্রসঙ্গ:
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭তে যোগ দিতে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন রোবট মানবী সোফিয়া। সৌদির নাগরিকত্ব পাওয়া রোবট মানবী সোফিয়ার জন্ম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে আর শেষ হয়েছে হংকংয়ে। সালোয়ার-কামিজ ও জামদানীর ওড়না পড়া অবস্থায় তাঁর সঙ্গে আমি কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। আলাপের চুম্বক অংশটুকু পড়তে পারেন এখানে।
সাংবাদিক : কেমন আছো?
সোফিয়া : ব্যারামে আছি।
সাংবাদিক : কেন?
সোফিয়া : আমি তো রোবট তাই না? হইলাম না হয় মহিলাদের মত দেখতে, তাই বলে ওড়না না কী দিয়া যেন বাইন্ধা রাখতে হবে?
সাংবাদিক : তাতে সমস্যা কী?
সোফিয়া : বোরকা পড়ায়া দিলেও বোধ হয় তুমি বলতা, সমস্যা কী! তোমাকে খুব কিউট লাগছে, এক্কেরে কিউটের ডিব্বা! ওয়াও।
সাংবাদিক : রাগ করছো কেন? আমাদের এখানে তো শিশু শ্রেণিতেই ওড়না পড়া শেখানো হয়।
সোফিয়া : ডিজিটাল চিন্তায় তোমরা এতটা অগ্রসর জানতাম না, স্যরি।
এভাবেই ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মধ্য দিয়ে রোবট সোফিয়া বাংলাদেশে আসার আগে তার ওড়না পরার সম্ভাবনা এবং দেশে আসার পর ওড়না পরার বিষয়টি নিয়ে চলছে সামাজিক মাধ্যমে উপহাস অনেকেই বিভিন্ন পত্রিকার খবরও শেয়ার দিয়ে হতাশা ও বিরক্তি প্রকাশ করছেন:
অনেকে অবশ্য আসাদগেটের রেস্টুরেন্টের সেই রোবট ওয়েটারের প্রসঙ্গও তুলেছেন, যাকে ওড়না পরিয়ে দেয়া হয়েছিল।
সোফিয়ার ওড়না নিয়ে ব্যবসা করতেও ছাড়েনি অবশ্য কিছু মানুষ। সোফিয়াকে পরানো সালওয়ার কামিজ সেটটি ছিল জামদানি কাপড়ের। এ নিয়ে অনলাইনে জামদানি বিক্রেতা একটি ফেসবুক পেজ ছবিসহ স্ট্যাটাসও দিয়েছে!