খুলনা টাইগার্সকে হারিয়ে রাজশাহী রয়্যালসের শিরোপা উঁচিয়ে ধরার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের পর্দা নেমেছে শুক্রবার। টি-টুয়েন্টির চার-ছক্কার আসরে দলীয় সাফল্য-ব্যর্থতার পিঠে ব্যাটসম্যান-বোলারদের ব্যক্তিগত অর্জন ছুঁয়েছে নানা মাত্রা। ব্যাটিংয়ে যেমন দেশিদের দাপট, পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া।
রানার্সআপ দল খুলনার দুই ব্যাটসম্যান, অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও বিদেশি রাইলি রুশো আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের শীর্ষ দুজন। দুজনেই ধারাবাহিকভাবে রান করেছেন। রান তোলায় এবার শীর্ষ দশ ব্যাটসম্যানের ৭ জনই দেশি ক্রিকেটার।
একেবারে শীর্ষজন অবশ্য বিদেশি, খুলনার রাইলি রুশো। ১৪ ম্যাচে ৪৫.০০ গড়ে ৪৯৫ রান করেছেন। ৪ ফিফটি নামের পাশে, সর্বোচ্চ অপরাজিত ৭১ রানের পিঠে স্ট্রাইকরেট ১৫৫.১৭।
মুশফিক একই দলের অধিনায়ক। টাইগারদের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান রুশোর থেকে মাত্র ৪ রান কম করেছেন। ৪৯১ রান নিয়ে তিনি টেবিলের দুইয়ে। দুটি ইনিংস আছে নব্বইয়ের ঘরে, সর্বোচ্চটি অপরাজিত ৯৮ রানের। ১৪ ম্যাচে তারও ৪টি অর্ধশতক। গড়টা বেশ আকর্ষণীয়- ৭০.১৪, স্ট্রাইকরেট ১৪৭.০০ টি-টুয়েন্টির সঙ্গে দারুণ মানানসই।
রান সংগ্রাহকের তিনে আরেক উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান লিটন দাস। চ্যাম্পিয়ন রাজশাহীর ওপেনার ৩২.৫০ গড়ে তুলেছেন ৪৫৫ রান। ১৫ ম্যাচে ৩ ফিফটিতে সর্বোচ্চ ৭৫ রানের পিঠে স্ট্রাইকরেট ১৩৪.২১।
লিটনের রয়্যালস সতীর্থ শোয়েব মালিক যৌথভাবে আছেন একই স্থানে। পাকিস্তানি তারকা ১৫ ম্যাচে লিটনের সমান ৪৫৫ রান করেছেন। সেরা ইনিংসটি ৮৭। ফিফটিও ৩টি। গড় ৩৭.৯১, তবে স্ট্রাইকরেটে টাইগার তারকার থেকে খানিকটা পিছিয়ে তিনি, ১৩০.০০।
টেবিলের পাঁচে আরেক বিদেশি, ইংল্যান্ডের ডেভিড মালান। কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের ব্যাটসম্যান ১১ ম্যাচে ৪৪৪ রান করেছেন, সেঞ্চুরি আছে একটি, ঠিক ১০০ রানে অপরাজিত ছিলেন, সঙ্গে ৩ ফিফটি। ৪৯.৩৩ গড়ের সঙ্গে তার স্ট্রাইকরেট ১৪৫.০৯।
বিপিএল জুড়ে দারুণ কার্যকরী ও ম্যাচ জয়ী ইনিংস দেয়া ইমরুল কায়েস ছয় নম্বরে। ১৩ ম্যাচে ৪৪২ রান চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বাঁহাতির নমের পাশে। সেরা ইনিংসটি অপরাজিত ৬৭। ৪ ফিফটিতে ৪৯.১১ গড়ে রান তুলেছেন। স্ট্রাইকরেট ১৩২.৩৩।
স্ট্রাইকরেট কেবল ১০৯.৩৯। তবে রান তোলায় তামিম ইকবাল আছেন সাতে। ১২ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৭৪ রানের ইনিংসের সাথে ৩ ফিফটিতে ৩৯৬ রান তুলেছেন ঢাকা প্লাটুনের বাঁহাতি ওপেনার। গড় ৩৯.৬০।
সেরা দশের বাকি তিনজনও দেশি। দুই তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুব, নাঈম শেখ ও মোহাম্মদ মিঠুন আছেন যথাক্রমে সংগ্রাহকের আট, নয় ও দশে। চ্যাম্পিয়ন রাজশাহীর আফিফ ১৫ ম্যাচে ৩৭০ রান তুলেছেন ২৬.৭২ গড়ে, স্ট্রাইকরেট ১৩১.২০। মাত্র এক ফিফটি পাওয়ার টুর্নামেন্টে তার সেরা ইনিংসটি ৭৬ রানের।
রংপুর রেঞ্জার্সের নাঈম ১২ ম্যাচে ৩৫৯ রান করেছেন ৩২.৬৩ গড়ে। ২ ফিফটির সর্বোচ্চটি ৭৮ রানের। স্ট্রাইকরেট নজরকাড়া নয়, ১১৫.৪৩। সবচেয়ে বাজে আসর কাটানো সিলেট থান্ডারের মিঠুন সেখানে ১২ ম্যাচে ৩৪৯ রান নিয়ে দশে। ২ ফিফটি তারও, সেরা অপরাজিত ৮৪। ৩৪.৯০ গড়ের সঙ্গে স্ট্রাইকরেট ১২৩.৭৫।
তিনশর উপর রান তুলেছেন আরও দুই দেশি ও এক বিদেশি। রান সংগ্রহে টেবিলের ১১তে কুমিল্লার বাঁহাতি সৌম্য সরকার। ২ ফিফটিতে ১২ ম্যাচে ৩৩১ রান তার। সেরা অপরাজিত ৮৮ রানের সঙ্গে ৩৩.১০ গড়ে ১৪০.২৫ স্ট্রাইকরেটে রান এনেছেন জাতীয় দল তারকা।
চট্টগ্রামের চ্যাডউইক ওয়ালটন ২ অর্ধশতকে সেরা অপরাজিত ৭১ রানের সঙ্গে ৩১৬ রান তুলেছেন। বাকিজন নাজমুল হোসেন শান্ত। রানার্সআপ খুলনার তারকার ১১ ম্যাচে ৩০৮ রান। এক ফিফটির সঙ্গে আছে একটি সেঞ্চুরিও। অপরাজিত ১১৫ রানের। ৩৪.২২ গড়ে করা তার রানের স্ট্রাইকরেট ১৪৩.৯২।
দেশিদের মধ্যে বলার মতো রান করেছেন আরও কয়েকজন। ঢাকার মুমিনুল হক ১০ ম্যাচে ৪২.৪২ গড়ে, ২ ফিফটিতে, ১২২.২২ স্ট্রাইকরেটে ২৯৭ রান করেছেন। খুলনার মেহেদী হাসান মিরাজ ২ অর্ধশতকে করেছেন ২৯০ রান। অপরাজিত ৮৭ রানের পিঠে তার গড় ৩২.২২, স্ট্রাইকরেট ১৩০.৬৩।
ঢাকার অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান ১৩ ম্যাচে করেছেন ২৫৩ রান। তিন ফিফটির সেরা ইনিংসটি অপরাজিত ৬৮, ২৩.০০ গড়ের সঙ্গে স্ট্রাইকরেট ১৩৬.০২। চট্টগ্রাম অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মাত্র ৭ ম্যাচে করেছেন ২০১ রান। ৪০.২০ গড়ের পিঠে স্ট্রাইকরেট সর্বোচ্চ ১৭০.৩৩, সেরা ইনিংসটি ৫৯ রানের।