তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস-বিডিআরের সদর দপ্তর পিলখানায় অর্ধশতাধিক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনাকে নৃশংস ও বর্বরোচিত উল্লেখ করে আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, সেই বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিলো সেনা কর্মকর্তাদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের পাশাপাশি সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে সেনা কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ নিরুৎসাহিত করা।
রোববার সকাল ১০ টা ৫৫ মিনিটে আলোচিত সেই ঘটনায় রায় ঘোষণা শুরু করেন বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ। এই বেঞ্চের অন্য দুই বিচারপতি হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।
এক পর্যায়ে রায় ঘোষণা দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবি করে আদালত বলেন, এ মামলার রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার, শতাধিক পর্যবেক্ষণ আছে, ৩ বিচারপতির মধ্যে পর্যবেক্ষণের ভিন্নতা থাকলেও রায় ঘোষণার ক্ষেত্রে তারা একমত।
২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি শুরু হয়ে গত ১৩ এপ্রিল ৩৭০তম দিনের শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআরের সদর দপ্তরে পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয় এবং মামলার বিচার চলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ সংলগ্ন অস্থায়ী এজলাসে।
২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকা মহানগর তৃতীয় বিশেষ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আর বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু (মারা গেছেন), স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৭ জনকে খালাস দেন আদালত।
ওই রায়ের পর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ‘ডেথ রেফারেন্স’ হাইকোর্টে আসে। সেই সঙ্গে আসামিরা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল ও জেল আপিল করেন। বিচারিক আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জনের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।