চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রোনালদো সেদিন ছিলেন ‘ব্লাডি ফ্যান্টাস্টিক’

বলেছেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন

দুবছরের চুক্তিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী পর্তুগিজ মহাতারকাকে ‘ঘরে’ ফেরাতে কেন্দ্রে কলকাঠি নেড়েছেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। সিআর সেভেন দ্বিতীয়বার ওল্ড ট্রাফোর্ডে ফেরার পর একসময়কার গুরু-শিষ্য একসঙ্গে বসেছেন ক্যামেরার সামনে। আলাপচারিতায় উঠে এসেছে জানা-অজানা হরেক গল্পের ঝাঁপি।

ম্যানইউর সাবেক কোচ, রোনালদো যাকে পিতার মতো মানেন, সেই ফার্গুসন ও রোনালদো রোমন্থন করেছেন ক্লাবের অতীতের মধুর স্মৃতি, শুনিয়েছেন পরিকল্পনা ও তরুণ রোনালদোর ম্যানইউতে আসার গল্প। বলেছেন বছরের পর বছর সম্পর্ক ধরে রাখার পেছনে থাকা সম্মান, ভালোবাসা কথাও।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

ইংলিশ জায়ান্টদের সাবেক কোচ ফার্গুসন বিশেষ সেই সাক্ষাৎকারে জানালেন, যখন তিনি তরুণ রোনালদোকে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামিয়েছিলেন, তখনই নজর কেড়েছিলেন সিআর সেভেন। তবুও পরের ম্যাচে রোনালদোকে খেলানো নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গিয়েছিলেন তখনকার ম্যানইউ বস।

রোনালদোর অভিষেকের স্মৃতি জাগাতে গিয়ে ইতিহাসের অন্যতম সফল কোচ বলেছেন, ‘সিজনের প্রথম ম্যাচে সবসময় আপনি সেরা খেলোয়াড়কেই সুযোগ দেবেন। (বোল্টনের বিপক্ষে) রোনালদোকে তাই বদলি হিসেবে নামানো হয়েছিল। সে মাঠে নামল (৭০তম মিনিটে), তখন তার খেলাটা সত্যিকার অর্থেই চমৎকার (ব্লাডি ফ্যান্টাস্টিক) উপভোগ্য ছিল।’

‘মাঠে তখন অসম্ভব রকমের উপচে পড়া দর্শক ভিড় ছিল, সেই উল্লাস ভালোবাসি। তখন সমাধানে আসতে পারছিলাম না— পরের ম্যাচে রোনালদোকে কি খেলাবো নাকি সাইডবেঞ্চে বসিয়ে রাখবো, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া ছিল অনেক জটিল।’

২০০৩ সালে পর্তুগালের লিসবন স্পোর্টিং ক্লাব থেকে ইংলিশ জায়ান্টদের ডেরায় পা রাখেন তরুণ রোনালদো, তখন তার বয়স সবে ১৮। সেই স্মৃতি টেনে মহাতারকা কৃতজ্ঞতা জানালেন সাবেক কোচ ও গুরু ফার্গুসনকে।

‘চিন্তা করুন, স্পোর্টিং লিসবন থেকে আসা ১৮ বছরের এক তরুণ খেলবেন— গিগস (রায়ান), স্কোলস (পল), রয় কিন এবং সোলশেয়ারের (ওলে গানার) মতো তারকার সঙ্গে। আমি একটু হলেও ভীত ছিলাম।’

রোনালদো বলেন, ‘তিনি (ফার্গুসন) যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করেছেন। মাঝেমধ্যে অনুবাদক নিয়ে তার অফিসে ডাকতেন, কিন্তু সেটাতে আমার সমস্যা হত না। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, তিনি আমাকে দারুণ এক ব্যক্তি ও খেলোয়াড় হয়ে উঠতে সাহায্য করেছেন। প্রথমদিন থেকেই যেটা বলতেন, সেটাই করতেন।’

রোনালদোর মা ম্যানইউতে ২০০৩ সালে বেশকিছু সময় ছিলেন। সেটা জানিয়ে ফার্গুসন বলেন, ‘১৮ বছরের এক যুবক যে অন্যদেশ থেকে এসেছে, আমি মনে করি সে সর্বকনিষ্ঠ, যার সঙ্গে তার মাকেও কিছুটা সময় থাকতে দিয়েছি। আমি মনে করি, যখন অন্যদেশ থেকে আসবেন তখন পাশে পরিবার থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

রোনালদো ক্যারিয়ারের সেরা একটা সময় পার করেছেন ম্যানইউতে। পরে রিয়াল মাদ্রিদে গিয়ে নিজেকে তুলে নিয়েছেন কিংবদন্তির কাতারে, শেষে জুভেন্টাস ঘুরে ফের এসেছেন রেড ডেভিলদের ডেরায়। দীর্ঘ পথচলায় ব্যক্তিগত বহু অর্জনের মাঝে জিতেছে অনেক শিরোপা। পুরো বিষয়টার জন্য তিনি ফার্গুসনের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ বলে জানালেন।

‘সময় বলি, আমার কাছে তিনি ফুটবলে এক বাবার মতো। তিনি আমার জন্য, আমার পরিবারের জন্য, বিশেষভাবে ক্লাবটির জন্য— যা কিছু করেছেন, তার প্রশংসা করছি। তিনি নিজের দায়িত্বে দারুণ ছিলেন।’

ফার্গুসনের সঙ্গে মধুর কোনো স্মৃতি প্রসঙ্গে রোনালদো জানালেন, ‘এটা (একটি সেরা মুহূর্তের কথা বলা) খুব কঠিন হবে। আমরা একসঙ্গে অনেকবেশি সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছি। শুধু জয় নয়, কঠিন সময়। কিন্তু আমি হৃদয়ে, সবচেয়ে কঠিন জিনিস রাখি।’

‘তার হয়তো মনে নেই, আমি বলছি। কারণ এটাকে আমার অসম্ভব সুন্দর ঘটনা বলে মনে হয়। আমার মনে আছে, একদিন আমার বাবা হাসপাতালে ছিলেন। খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। তখন আস্তে আস্তে তাকে বলেছিলাম (ছুটির ব্যাপারে)। তিনি বলেছিলেন, ক্রিস্টিয়ানো, এটা কোনো ব্যাপার না। তুমি দুই-তিন দিনের জন্য সেখানে যাও।’

‘তখন আমাদের খুব কঠিন ম্যাচ ছিল এবং আমিই ছিলাম দলের মূল খেলোয়াড়। তিনি বলেছিলেন, এটা খুব কঠিন হবে কারণ আমরা কঠিন প্রতিপক্ষের সামনে যাচ্ছি। কিন্তু আমি তোমার পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। তুমি যাও, তোমার বাবাকে দেখো।’

‘আমার জন্য এটাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অনেকটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রিমিয়ার লিগ এবং কাপ জেতার মতো। তাই সবসময় তার প্রশংসা করি। শুরুতেই বলেছিলাম, তিনি আমার জন্য যা বলেছেন সবটা করেও দেখিয়েছেন। তাই তার প্রতি আমি আরও বেশি কৃতজ্ঞ।’

সেই সময়টা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন ফার্গুসনও, ‘জানতাম রোনালদোর বাবা অসুস্থ, হাসপাতালে আছে এটাও জানতাম। সেখানে ওর থাকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তখন ফুটবল ক্লাব কোনো ব্যাপারই নয়। আপনাকে বুঝতে হবে, কিছু বিষয় ক্লাবের থেকেও বড়। প্রশ্নাতীতভাবে, তার মাঝে একটি পরিবার। আপনার কখনও কোথাও পরিবারের আগে ক্লাবকে টানা ঠিক হবে না।’