১৪ বছর আগের সেই দিনটা মনে হলে শিহরিত হয় সারাদেশ। আজ ২০১৮ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার রায় আবার মনে করে দিল সে সময়টাকে। গুলিস্তানের আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে রক্তাক্ত রাজপথ আর মানুষের আর্তচিৎকার আহাজারি আজও ভুলেনি মানুষ।
কিন্তু লাশ আর রক্তের হোলিখেলা শেষে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর জেলমাখা চুলে পরিপাটি সাজে ভাবলেশহীন ভাবে বলেছিলেন ‘উই আর লুকিং ফর শত্রুজ’। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে গিয়ে তার কি একবার ও মনে হয়নি, ‘ আল্লাহ অন্যায়ের বিচার দুনিয়াতে করে।’ অথচ আজ তিনি মনে করছেন, ‘তার সাজা মৃত্যুদণ্ড ন্যায় বিচার হয়নি। আর সে কারণে এ রায়ের জন্য আল্লাহর কাছে বিচার চাইলেন।’
ক্ষমতার দাম্ভিকতায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিল তারেক জিয়া। আর সে কারণে যে নোংরা রাজনীতি বিএনপি সেদিন করছে তার ফল তারা ভোগ করছে এখন, এটাই সত্য। গুলিস্তানের সে সমাবেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ শত নেতাদের প্রাণ কেড়ে নিয়ে আজীবন ক্ষমতায় থাকার অংকটা বিধাতাই মেলাতে দেয়নি সেদিন বিএনপিকে হিসাবের বুমেরাং হয়ে বিএনপি আজ নিজেদের ঘর সামলাতে পারছে না।
কেউ ফেরারী কেউ বন্দী জীবন কাটাচ্ছে সাজা মাথায় নিয়ে। আজকের রায় তাদের রাজনীতিতে আবার এক বৈরীতা এনে দিল। যদিও তাদের ধারনা ছিল তারেক জিয়ার ফাঁসি হবে বাবরদের সাথে। কিন্তু আইন কেন তা দিলো না তা বোঝা যাবে পুর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলে।
বিগত ১৪ বছরে তারেক জিয়া, বাবর,সালাউদ্দিন পিন্টু সহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সহযোগীরা কোনদিন একবারের জন্য কি অনুতপ্ত হয়েছিলেন সে পরিবারের স্বজনদের জন্য,যারা এখনও অসুস্থ হয়ে শরীরের স্প্রিন্টার যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে?
কিংবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিটি পুঙ্গ হয়ে কতটা অসহায়ত্ব নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। অথচ এখন সাজার পর বাবর আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে নিজেকে অসহায় সাজানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কঠিন সত্য হলো যে, মিঃ বাবর আপনি যে আল্লাহর কাছে আজ বিচার দিচ্ছেন, সে আল্লাহ স্বজন হারানো সেই মানুষদের প্রার্থনা ও আর্তচিৎকার শুনছে।
গগনবিদারী গ্রেনেডের বিস্ফোরণের পর ঢাকা শহরের সে রাতের হাসপাতালের দৃশ্যগুলো তারেক জিয়া আর তার দলের মানুষের মনে রেখাপাত করেনি বলে বিচারের জন্য জজ মিয়ার নাটক সাজিয়েছে তারা। সময়ের ধারাপাতে সে জজমিয়াই তুলে এনেছে সত্য ঘটনা আদালত আর জনগনের সামনে।
আজকের রায়ের পর মিঃ বাবর সাহেবের জন্য বড় করুণা হচ্ছে এই ভেবে যে, যারা জন্য তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রাণ কেড়ে নিতে চেয়েছেন, সে তারেক জিয়া বহাল তবিয়তে লন্ডনে বসে শুনছে তার মৃত্যদণ্ডের সংবাদ। আর হুকুমদাতা হিসাবে তারেক জিয়ার সাজা হলো যাবজ্জীবন। যদিও এমন রায়ে জনগনের প্রত্যাশা আসেনি কিন্তু স্বস্তি এসেছে। স্বস্তির কারণ হল এই ভেবে ২৪ টি তাজা প্রাণ কেড়ে নেবার দায় সহ শত শত আহত মানুষ তাদের পঙ্গু জীবনের জন্য ন্যায় বিচার পেয়েছে।
বিচারের রায়ের পরবর্তী পদক্ষেপ আপীলে যাবে তা অনুমেয়। তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনাটাও আইন প্রক্রিয়া। আপাতদৃষ্টিতে তিনি মুক্ত জীবনে বসবাস করছেন পরিবার নিয়ে বিদেশে ফেরারী হয়ে।
আজ রায়ের পর বাবরের আল্লাহর কাছে বিচার চাইবার বক্তব্যটি হতে পারে তার আবেগী কথা। তবে তার এ কথায় একটা খটকা থেকে যায়। তা হলো তিনি কার জন্য আল্লাহর কাছে বিচার চাইলেন?
২১ আগস্টের ঘটনাতে তারেক জিয়া হুকুমদাতা হয়ে ও মৃত্যুদণ্ড দণ্ডিত হলেন না। আর বাবর পিন্টু সহ ১৭ জন হুকুম পালনকারীরা মৃত্যদণ্ডে দণ্ডিত হলেন। এটাই কি অন্যায় বিচার হলো তার প্রতি। নাকি সামগ্রিক বিচারকে রাজনৈতিক বিশ্লেষণের অপব্যাখ্যা দিয়ে আদালতের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে বিচারের আর্জি দিলেন বাবর সাহেব।
হয়ত এ আবেগের অন্তরালের ঘটনা সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা দুষ্কর হবে। তথাপি এ রায় পরবর্তী প্রক্রিয়াতে যেন সে ভয়াল ঘটনার স্বীকার মানুষরা যেন ন্যায় বিচার পায় সে প্রত্যাশা একান্ত কাম্য।
নির্মমতা হলে ও একটা কথা বলতেই হয় মিঃ বাবর লুকিং ফর শত্রুজ বলে যেমন আলোচিত হয়েছিলেন আজ আবার মৃত্যদণ্ডের সাজা নিয়ে আল্লাহর কাছে বিচার চেয়ে সমালোচনায় এলেন। তবে বাবর সাহেব পারলে আয়নাতে নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে নিজের মনকে একবার জিজ্ঞেস করবেন, ‘আপনার আল্লাহ কি আপনাকে কারো প্রাণ নেবার ক্ষমতা কি দিয়েছিল সেদিন? তাহলে আজ কোন হিসাবে আপনার সাজা মৃত্যদণ্ডের জন্য আল্লাহর বিচার চাইছেন।
আল্লাহ কোন অন্যায়কে ক্ষমা করে না। এ কথাটা সর্বকালের জন্য সত্য এটা মনে রাখতে পারলে এমন জঘন্য ঘটাতেন না সেদিন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)