শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর)। ভোরের আলো তখনও ফুটেনি। গুলশান ২ এর বাসা থেকে তৈরি হয়ে সোজা সাভার স্মৃতি সৌধের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ঢালিউড তারকা শাকিব খান। টেকনিক্যাল, গাবতলীর জ্যাম পেরিয়ে সূর্য উঁকি দেয়ার ঠিক আগেই সাভার স্মৃতি সৌধে পৌঁছে যান বাংলা চলচ্চিত্রের ‘খান সাহেব’।
জানিয়ে রাখা ভালো, এর আগে বহুবার সিনেমার শুটিংয়ে গেলেও এবার শাকিব খানের স্মৃতিসৌধে যাওয়ার উদ্দেশ ছিলো তার দেশ বিদেশের কোটি ভক্তদের ‘বিজয় দিবস’ উপলক্ষে ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানানো।
পথিমধ্যে চলতে চলতে শাকিব খানের সঙ্গে কথা হয় চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে। তিনি যেমনটা বলছিলেন, অনেককিছু ভাবলেও সময়ের কারণে করা হয়ে ওঠেনি। করোনার মধ্যে লম্বা সময়টা আমার কাছে ছিল ফ্ল্যাশব্যাকের মতো। প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসেব মেলাতে গিয়ে দেখলাম, শুধু ইন্ডাস্ট্রির ভালোর জন্য চেষ্টা করে গেলাম। নিজের কাজ আসলেই কতটা তৃপ্তি এলো? তাই পাক্কা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর অনুরোধের ঢেঁকি গেলা নয়, এখন থেকে যে কাজগুলো আমার করা উচিত শুধু তাই করবো। ‘নো মোর সেক্রিফাইস’। ইতোমধ্যে আমার দৈনন্দিন রুটিনও পুরো পরিবর্তন করে ফেলেছি। যে সময়টা আমার, শুধুই আমার থাকবে।
যোগ করে শাকিব খান বলেন, ‘শুধু বিজয় দিবস নয়, আগামীতে বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে আমি কানেক্ট থাকবো তাদের সঙ্গে যাদের জন্যই আমি আজ শাকিব খান। আগে সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিত ছিলাম না। কিন্তু এখন রয়েছি। আগামী বছর কী কাজ হবে, সিনেমা করলে কীভাবে আরও বেশি দেখবে, কীভাবে নতুন নতুন দর্শক সিনেমায় কানেক্ট করা যায় সেই প্ল্যান করেছি। সবকিছু সময় হলে দর্শক জানতে পারবেন। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মেইল দিয়েছে কিছুদিনের মধ্যে তারা ইনস্টা আইডি ভেরিফায়েড করে ফেরত দেবে। আর শাকিব খানের নতুন ইউটিউব চ্যানেলে আমার ব্যক্তিগত আপডেট থাকবে। এসকে ফিল্মসের ইউটিউবে আমার প্রযোজিত সিনেমার আপডেট পাওয়া যাবে। লেটস সি…’
স্মৃতিসৌধ সেদিন কড়া নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো ছিল। বিজয় দিবস উপলক্ষে আগেই সেনাবাহিনী দ্বারা নিরাপত্তা জোরদার ছিল। প্রধান ফটকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিসৌধ রক্ষণের নিরাপত্তাকর্মীরা শাকিবকে রিসিভ করেন। গাড়ি থেকে নেমে দুই’শ কদম হেঁটে সোজা স্মৃতিসৌধের বেদিতে যান তিনি। শাকিব খান যাওয়ার আগেই পরিকল্পনা মতো ক্যামেরা ও সহকারীরা আগে থেকেই সবকিছু প্রস্তুত রেখেছিলেন।
এরমধ্যেই খবর ছড়িয়ে যায় ‘স্মৃতিসৌধে শাকিব খান এসেছেন’! তাকে একনজর দেখতে দৌড়ে চলে আসেন উৎসুক মানুষ থেকে স্মৃতিসৌধের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েকজন। সেলফির আবদার করেন। দূর থেকে কেউ কেউ তার পরিবারের সদস্যদের ভিডিও কলে দেখান সামনে শাকিব খান!
সময় বাড়ার সাথে সাথে দূর থেকে শাকিব খানকে একনজর দেখার জন্য মানুষের উঁকিঝুঁকিও বাড়তে থাকে। ওদিকে, শাকিবও খালি পায়ে আগাতে থাকেন স্মৃতিসৌধের দিকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জনপ্রিয় এ নায়কের নিজ ক্যারিশমায় মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যেই বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে দৃশ্য ধারণ সম্পন্ন হয়।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সদ্য প্রকাশ হওয়া শাকিব খান তার ওই ভিডিও বার্তা দিয়ে নেট দুনিয়ায় ব্যাপক প্রশংসিত। অনেকেই এর মাধ্যমে নতুন শাকিব খানকে দেখেছেন। প্রশংসা পাওয়া ওই ভিডিওতে শাকিব খান বলেন, এই বিজয় দিবসে আমাদের দৃঢ় শপথ হবে, নিজ নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে, নিজেদের প্রতিটি সেক্টরে বিজয়ী হওয়া। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের হাতে যে বিজয় তুলে দিয়েছেন, সেই বিজয়ের সৌরভ আমরাই পৌঁছে দিবো পৃথিবীর আনাচে কানাচে। বাংলাদেশ নামের একটি ফুলের গন্ধে সুরভিত হোক গোটা পৃথিবী। সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
ছবি: নাহিয়ান ইমন