সিলেটের সুরমা নদী বর্জ্য ভাগারে পরিণত হয়েছে। ২০২১ সালে জমেছে হয়েছে ১৯ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য।
সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিদিন প্রায় ৫৪ টনের মতো প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলে সুরমা নদীতে, যার মধ্যে বেশির ভাগই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের তৈরি স্যাশে, প্লেট, চামচ এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের পণ্য।
বুধবার ২৬ জানুয়ারি ভার্চ্যুয়ালি এনভায়রনমেন্ট অ্যাণ্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডোর ‘দ্য প্লাস্টিক ডেলিউজ: ইন দ্য সিলেট সিটি করপোরেশন এরিয়া, বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্যটি উঠে আসে।
এসটিইপিপি (সাসটেইনেবল ট্রান্সিশনস টু এন্ড প্লাস্টিক পলিউশন) প্রজেক্টের অধিনে এসডো এবং ইউনিভার্সিটি অফ পোর্টসমাউথ এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।
গবেষণাটিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্লাস্টিক বর্জ্যের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে, যাতে সিলেটে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের ধারণা পাওয়া যায়।
গবেষণাটিতে দেখা গিয়েছে যে, সকল বর্জ্যের মধ্যে ৬৭% হচ্ছে জৈব বর্জ্য, ১৭% প্লাস্টিক বর্জ্য, ৩% ই-বর্জ্য, ২% মেডিকেল বর্জ্য, এবং ১% অন্যান্য বর্জ্য। পলিমার দিয়ে তৈরি নিরাপত্তা পণ্যের অব্যবস্থাপনাই মূলত সিলেট শহরে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফেলে দেয়া বর্জ্যের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হল একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক যেমন প্লাস্টিকের বা পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের বোতল, ব্যক্তিগত ব্যবহারের পণ্য, স্যাশে বা মিনি প্যাক, খাবারের প্যাকেট, একবার ব্যবহারযোগ্য কাটলারি, প্লাস্টিকের জুতা, অলঙ্কার, ঝুড়ি, ব্যারেল, প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, পিভিসি ফিটিংস, পিভিসি ব্যানার, ফেস্টুন এবং প্লাস্টিকের খেলনা। এই সকল প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্যে, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পরিমাণ প্রায় ৭৮ শতাংশ।
ইতিমধ্যে প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলা হয়, সিলেটে ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্লাস্টিক বর্জ্য বৃদ্ধির হার ছিল ১৭ টন/বছর এবং ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তা কমে বার্ষিক ১২ দশমিক পাঁচ টনে দাঁড়িয়েছিল। ২০২০ সাল পর্যন্ত প্লাস্টিক বর্জ্যের বৃদ্ধির হার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির সময় দেখা গিয়েছে যে, ২০২০-২০২১ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ১৮ টন বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্লাস্টিক বর্জ্যগুলি শুধুমাত্র মানুষের জন্য নয়, পরিবেশের জন্যও মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এই প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই প্রচেষ্টাকে সফল করতে সরকার এবং জনগণকে একত্রে কাজ করতে হবে। তবে আমরা আশাবাদী যে একসাথে আমরা এই প্লাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে সক্ষম হব এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমাতে পারব।’
বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব এবং এসডো-এর চেয়ারপারসন সৈয়দ মারগুব মোর্শেদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘সরকারকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাষ্টিক পণ্য, বিশেষ করে পলি ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করতে বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। তিনি সিলেটের সকল পর্যটন স্থানে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও তদারকি করার জন্য সরকারের এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের প্রতি আহ্বান জানান।’
এসডো-এর মহাসচিব এবং এই গবেষণার টিম লিডার ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, “একটি সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি। প্রকৃতপক্ষে জিরো ওয়েস্ট পরিকল্পনা এবং পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
এসডো’র নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা এই বিষয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং সরকারকে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য প্রচার করতে এবং একটি আইনি কাঠামো প্রয়োগ করতে আহ্বান জানিয়েছেন।