বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সুপরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ দেশে বিভাজন সৃষ্টি করছে।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্র নষ্ট করে ফেলেছে। দমবন্ধ করা ও শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে বাঁচতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন: কুমিল্লা শহরের নানুয়ার দিঘিরপাড়ের একটি দুর্গাপূজার মন্ডপে উদ্ভুত ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী যে তাণ্ডব শুরু হয়েছে তা সরকারের গভীর চক্রান্তের অংশ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে রাষ্ট্র সমাজে নৈরাজ্য তৈরি করে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। সরকারী দল, প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে আইনের শাসন, নাগরিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্র উচ্ছেদ করতে সকল শক্তি নিয়োগ করে আসছে। অথচ সম্প্রতি কুমিল্লর নানুয়ার দিঘিরপাড়ের পুজামন্ডপে উদ্ভুত ঘটনায় মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকার সম্পূর্ণরূপে ছিল উদাসীন। দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। সকলেই জানে সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এখন ভয়-ভীতি ও শংকার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননা এবং এর রেশ ধরে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, রংপুর, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় দিবালোকের মতো পরিস্কার যে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততা ও তাদের চোখের সামনেই এধরণের অরাজক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে তা নজীরবিহীন।
এখন উদোরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ের চাপাতে দেশব্যাপী নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে জড়িত করতে সরকার চক্রান্তমূলক নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে পাইকারি হারে গ্রেফতার করছে। নোয়াখালীতে সংঘটিত ঘটনায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নোয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম সুমন, চৌমুহনী সরকারী কলেজের সাবেক জিএস নিজামুদ্দিন রুবেল, জেলা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাতেন সুজন, চৌমুহনী পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রাশেদ সুমন, হাতিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক আরেফিন আলী, স্বেচ্ছাসেবক দলের আকরাম হোসেন, মোহাম্মদ আলী, সম্পদ হাওলাদার রাজু, যুবদল নেতা কামরুজ্জামান ও রফিকসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সূবর্ণচর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক বেলাল উদ্দিন সমুন, হাতিয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহাবায়ক আমিরুল ইসলাম আমিরসহ ৬০ জনকে পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় বিএনপি নেতা মজিবুর রহমানসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে।
এছাড়াও আজ ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী মিথ্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। আওয়ামী সরকার মামলা-হামলার চেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ। বিরোধী দলকে দমন-পীড়ণে পিষ্ট করাই যেন এদের রাজনৈতিক কর্মসূচি। এরা একদলীয় নাৎসীবাদের উপাসক। এরা রাষ্ট্রক্ষমতা জবরদখল করে আদিম উল্লাসে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। এরা বারবার জনদৃষ্টিকে অন্যদিকে ফেরাতে সহিংস পন্থা অবলম্বন করে। এদের মধ্যে মানবতা, মানবিক মর্যাদা, সহিষ্ণুতা, বহুমাত্রিকতার লেশমাত্র নেই। এরা নিজেদের স্বার্থে দেশকে এক অজানা গন্তব্যে নিয়ে যেতে চায়। বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও তাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ছাত্রদলের আব্দুস সাত্তার পাটোয়রীসহ সূবর্ণচরের বেলাল উদ্দিন সুমন এবং হাতিয়া যুবদেলর আমিরুল ইসলাম আমির এর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া নোয়াখালী, চট্টগ্রামে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।