রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি যে বক্তব্য দিয়েছে তা অস্পষ্ট এবং ধৃষ্টতাপূর্ণ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃত্ব।
তারা বলছেন: সু চি তার বক্তব্যে সকল সম্প্রদায়ের মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সব সম্প্রদায় ও ধর্মের মানুষের সুরক্ষা কথা বলেছেন। কিন্তু, আমরা দেখেছি তার অবস্থান বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। আবার, কোনো রকম আন্তর্জাতিক চাপাকে ভয় করে না মিয়ানমার বলে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছে; তাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছেন বলে মনে করছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন: মিয়ানমারে মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করে একদিনের শিশুকেও হত্যা থেকে রেহায় দেওয়া হচ্ছে না। আবাল-বৃদ্ধা-বনিতা নির্বিশেষে হত্যার শিকার হচ্ছে। যেভাবে নারীদের নির্যাতন করে হত্যা করা হচ্ছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
কিন্তু সু চি তার বক্তব্যে নীরিহ মানুষ হত্যা ও নির্যাতনের কথা বেমালুম অস্বীকার করেছে।
আমু বলেন: আমাদের দেশ আয়তনে ছোট, জনসংখ্যা বেশি। এরপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা নির্যাতিতদের আশ্রয় দিচ্ছি। তাদের খাদ্য থেকে শুরু করে সবরকম সুযোগ-সুবিধায় কোনো কার্পণ্য করা হচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে তাদের পুর্নবাসিত করা হোক।
আওয়ামী লীগের আরেক সিনিয়র নেতা এবং প্রেসিডিয়াম মেম্বার তোফায়েল আহেমেদ বলেছেন: সু চি তার বক্তব্যে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এটার মধ্য দিয়ে তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন- রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেতার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকার আন্তরিক না।
অং সান সু চি তার বক্তব্যে রেহিঙ্গা মুসলিমদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বলেছেন: অনেক মুসলমানের বাংলাদেশে চলে যাওয়ার ঘটনায় মিয়ানমার উদ্বিগ্ন। শরণার্থী হিসেবে যারা বাংলাদেশে গেছে যে কোন সময় তাদের পরিচিতি পর্যবেক্ষণ করে তাদের ফিরিয়ে পুনর্বাসনে নিতে প্রস্তুত মিয়ানমার।
কিন্তু, রোহিঙ্গা হিসেবে যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, আগেই তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছে মিয়ানমার সরকার।
তোফায়েল আহম্মেদ আরও বলেন: আমরা ১৬ কোটি মানুষের দেশ। অতিঘনবসতিপূর্ণ। কিন্তু আমাদের হৃদয় আছে। আমাদের মন আছে। এসব দেখে আমাদের মনে একাত্তরের স্মৃতি ভেসে ওঠে। কীভাবে আমাদের মা-বোন সে দিন ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল।
“সুতরাং আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। সে অভিজ্ঞতার আলোকেই মানবিক দিক বিবেচনা করে এদেরকে আমরা আজকের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছি। আমরা মনে করি অনতিবিলম্বে সেখানে গণহত্যা বন্ধ করা উচিত।”
সু চি তার বক্তব্যে আনান কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশ মেনে নেওয়ার কথা বললেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা নির্যাতন এবং গণহত্যা বিষয়ে কেনো কথা না বলায় তার সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের এ নেতা।