চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র: লিসা কার্টিস

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক নিরাপত্তা উপদেষ্টা লিসা কার্টিস বলেছেন, বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের চলমান সব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন চায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

শনিবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাটসহ একটি প্রতিনিধি দল।

কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন চেয়ে লিসা কার্টিস বলেন, মিয়ানমার সেনাদের হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন নির্যাতনের কারণে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ প্রশংসার দাবি রাখে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত উত্তেজনা, আতঙ্কের মধ্যেই শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার পৌঁছে শনিবার ক্যাম্প পরিদর্শন করেন লিসা কার্টিস। সকালে হোটেল থেকে বের হয়ে প্রথমে যান টেকনাফের শামলা পুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এর পর উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। সেখানে তিনি বেশ ক’জন রোহিঙ্গা নারী শিশুর সাথে কথা বলেন। তাদের অবস্থার খোঁজ খবর নেন।

পাশপাশি মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসা কয়েকজন নারীর মুখে নির্যাতনের বর্ণনা শুনেন। এসময় অনেকটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তারা। কথা বলেছেন এনজিও কর্মীদের সাথেও। রোহিঙ্গা নারী শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি তিনি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেন।

গেলো বছরের ২৫ আগস্টের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন।

‘ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়দের মান উন্নয়নেও যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকবে’
মার্শিয়া বার্নিকাট বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে আত্মমর্যাদা ও নিরাপত্তার সাথে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশের সাথে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এনিয়ে মিয়ানমারে সাথে সমানভাবে আলোচনা চালিয়ে নিচ্ছে তার দেশ। শুধু রোহিঙ্গা নয় ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়দের মান উন্নয়নেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানান বার্ণিকাট।

আগামীকাল রোববারও তার ক্যাম্প পরির্দশনের কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পতাকা বৈঠকের পরও নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু এলাকার ওপারে মিয়ানমার অংশে এখনো মিয়ানমারের সেনারা টহল অব্যাহত রাখায় নো-ম্যান্স ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গা আর স্থানীয়রা এখনো আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

সীমান্তে এখনো সামরিক সৈন্য সমাবেশ রেখে দিয়েছে মিয়ানমার। কিছুক্ষণ পরপর টহল দিচ্ছে একাধিক গাড়ির বহর। সীমান্তে বিজিবি কড়া সর্তক অবস্থান এবং নজরদারী অব্যাহত রেখেছে। বাড়ানো হয়েছে টহল।

শনিবার সকাল থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু এলাকার নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সরে যেতেই মাইকিংয়ের পাশাপাশি বারবার মিয়ানমারের সৈন্যরা মহড়া দিচ্ছে বলে অভিযোগ থাকলেও শুক্রবারের পতাকা বৈঠকে তা অস্বীকার করে মিয়ানারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

এছাড়া সীমান্তে গুলি ছোড়া ও দফায় দফায় মাইকিংসহ বিজিবি’র প্রতিবাদের মুখে মিয়ানমারের ব্যাখ্যা ছিলো সামরিক সৈন্য বৃদ্ধি তাদের দেশের নিরাপত্তা জনিত আভ্যন্তরিন ও নিয়মিত মহড়ার অংশ। এতে বাংলাদেশের আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারন নেই বলেও আশ্বস্ত করেন তারা।

তৃতীয় দিনেরমতো মিয়ানমার সেনা ও বিজিপি’র টহল অব্যাহত রাখার ঘটনায় শূন্যরেখার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল মনজুরুল হাসান খান। তবে সীমান্তে বিজিবির অতিরিক্ত টহলের পাশপাশি সর্তক অবস্থায় থাকার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তমব্রু সীমান্তের উপারে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশ বিজিপির টহল জোরদার, সৈন্য সমাবেশ, গুলি বর্ষণ ও শুন্য রেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের শূন্যরেখার মৈত্রী সেতুসংলগ্ন পয়েন্টে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দু দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়। যা চলে প্রায় ১ ঘন্টা।

বৈঠকে বাংলাদেশের ৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান। অপর দিকে মিয়ানমারের ৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের ১ নং ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অং সু। বৈঠকে মিয়ানমার সীমান্তে শান্তি অবস্থা বজায় রাখার আশ্বাস দিলেও সীমান্তে তার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী নিপীড়ন ও গণহত্যা চালানো শুরু করলে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দিলেও নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আহ্বানসহ দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার। আর সে সময় থেকে ঘুমধুমের তমব্রু সীমান্তের শুন্য রেখায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার রোহিঙ্গা তাবু টাঙ্গিয়ে বসবাস করছে।