সীমানা বিরোধই উড়িচরের উন্নয়ন- অগ্রগতিতে প্রধান বাধা। সতেরো বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন না হওয়ায় সব ক্ষেত্রেই অচলাবস্থা দেখা দিচ্ছে। উন্নয়নের পরিকল্পনা নেই, বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সম্ভাবনা বিকাশে যেমন উদ্যোগ নেই, তেমনি সংকট উত্তরণেও নেই কোন পদক্ষেপ। উড়িচরবাসীর দাবি, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জের সঙ্গে সীমানা বিরোধ মিটিয়ে এখানে অবিলম্বে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করতে হবে। তাহলেই এগিয়ে যাবে উড়িরচর।
চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের বিভিন্ন এলাকা ভেঙ্গে গড়েছে উড়িরচর। চারিদিকে জলরাশি বেষ্টিত ছোট্ট এ দ্বীপের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের জীবনে রয়েছে হাজারো সংকট। আর সকল সংকটের কেন্দ্রে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা। রাতে এক অন্ধকারপুরীতে পরিণত হয় এ দ্বীপ। সন্ধ্যা থেকে জেনারেটরের আলোতে দ্বীপের হাটগুলোতে মানুষের সমাগম ঘটলেও তা মিলিয়ে যায় রাতে ১০টা না বাজতেই।
১৯৮৫ সালে এ দ্বীপের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়। সেই ক্ষত এখনও স্পষ্ট। বিশ্বজুড়ে আলোড়িত সেই ঘূর্ণিঝড়ের পর এখানে ব্যাপক সহায়তা এলেও পরবর্তীকালে সেভাবে এগোতে পারেনি উড়িরচর। দীর্ঘ সময় প্রভাবশালী দস্যু বাহিনীর দখলে থাকা এই জনপদে সৃষ্টি হয় একের পর এক সংকট।
কথিত আছে, প্রচুর পরিমাণে ‘উড়ি’ ঘাস জন্মাতো বলে এই দ্বীপের নাম হয়েছে উড়িরচর। বয়সী বাসিন্দাদের মতে, সন্দ্বীপের ৬০ মৌজা ভেঙে উড়িরচরের জন্ম হয়েছে। সন্দ্বীপের পূর্বে হরিদ্রা খালীর চর, পশ্চিমে নোয়াখালীর খাসেরহাট সন্দ্বীপ চ্যানেল, উত্তরে সোনাগাজীর চর কচ্ছপিয়া এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মেঘনার মোহনা উড়িরচরের সীমানা ছিল এক সময়। সন্দ্বীপের হুদ্রাখালী, ন্যায়মস্তি, আজিমপুর, শাকনগর, মেহেরপুর, তারাপুর, সুলতানপুর, দরিরচর, চর হরিণা, চর রুনি, কৈয়াডুগি, পায়াডুগি, সামসুরাবাদ, চর পীরবক্স, চর দরজি, চর বধূ, চর রহিম, চর সিদ্ধি, বাধাজোড়া, কাঠগড়, চর বাউয়া, চর ধুবলাপাড়সহ বিভিন্ন এলাকা ভেঙে উড়িরচরে পলি জমেছে।
প্রথম দিকের সেই দ্বীপ বহুবার ভেঙে বর্তমান রূপ ধারণ করেছে। উড়িরচরের যেখানেই আলাপ, সেখানেই দীর্ঘ দাবির তালিকা। ভূমি বন্দোবস্ত দ্বীপবাসীর অন্যতম প্রধান দাবি। দুর্যোগ মোকাবেলায় তারা চান দ্বীপের চারিদিকে বেড়িবাধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো, খাল খনন, পূর্নাঙ্গ হাসপাতাল নির্মাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটের উন্নয়নের দাবি উত্থাপন করেন বাসিন্দারা।
দক্ষিণপ্রান্তে উড়িরচরের প্রধান ঘাট। সন্দ্বীপের কালাপানিয়া, লক্ষ্মীপুরের চরলক্ষ্মী কিংবা সীতাকুন্ডের কুমিরা ঘাট থেকে আসা যাত্রীবাহী ট্রলারগুলো এখানেই ভিড়ে। পশ্চিমে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে যোগাযোগের জন্য রয়েছে আরেকটি ঘাট। সেখান থেকে চর এলাহীর ক্লোজারঘাটে পার হওয়া যায়। নদীপথে দ্বীপে যাতায়াতের পথ এগুলোই। সময়ের সঙ্গে, জোয়ারভাটার সঙ্গে মিল রেখে এখানকার মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। জরুরি প্রয়োজনে মানুষগুলো তাই একেবারেই অসহায় হয়ে পড়ে।
প্রধান ট্রলার ঘাট থেকে খানিক দূরে কলোনী বাজার। বাংলাবাজার, জনতা বাজার, হাজারী বাজার মিয়া বাজার, সাহেব বাজার, সমিতি বাজারসহ আরও অনেক বাজার রয়েছে। এসব বাজারে হাট বসে প্রতিদিনই। দৈনন্দিন কেনাকাটা ছাড়াও স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়া, বিভিন্ন এলাকার খবরাখবর জানাসহ নানান কাজে সন্ধ্যা হলেই মানুষগুলো ছুটেন হাটের দিকে। চায়ের দোকানে টিভিতে চলে সিনেমা কিংবা খবর, টেবিলে চলে চায়ের আড্ডা। এসব বাজারগুলোতে চায়ের আড্ডায় আলাপ হলো এলাকাবাসীর সঙ্গে।
‘আমরা তো আছি বন্দি জীবনে। চাইলেই আমরা দ্বীপের বাইরে যেতে পারি না। মুমুর্ষূ অবস্থায় রোগী নিয়ে যথাসময়ে ডাক্তারের কাছে যেতে পারি না।’-হাজারী বাজারে আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন কৃষক কামাল পাশা (৭০)। তার এই কথার সঙ্গে আরেকটু যোগ করে একই এলাকার কৃষক আবুল কাসেম (৬০) বলেন, ‘শুকনোয় আমরা পানির অভাবে জমি আবাদ করতে পারি না। বর্ষায় আবার পানিতে ডুবে থাকে বাড়িঘর। এখানে জীবনযাপন অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তবুও আমরা বাধ্য হয়ে এখানে থাকি।’
উত্তর উড়িরচরের এই হাজারী বাজারে দেখা মেলে দ্বীপের অপেক্ষাকৃত অবহেলিত এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। এখানকার ১ নম্বর ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৪ হাজার পরিবারের বসবাস। খাসজমির বিস্তৃত প্রান্তরে ছড়ানো ছিটানো বাড়িঘর। বৃহৎ বিলের মাঝখানে মাথাতুলে দাঁড়িয়ে আছে ছোট ছোট ঘুরগুলো। ঝড়-ঝাপটা থেকে বাঁচতে কোন বাড়ির চারপাশে বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। কোন কোন বাড়ি আবার একেবারেই ফাঁকা।
কিন্তু এই বাড়িগুলোতে যাতায়াতের নেই কোন রাস্তা। বর্ষাকালে কোমর কাদাপানি ভেঙে অথবা নৌকায় করে চলাচল করতে হয়। নিজস্ব উদ্যোগে কোন কোন বাড়িতে চলাচলের পথ তৈরি করা হলেও সে সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা।
খানিক দূরে জনতা বাজারে আলাপ আরও কিছু মানুষের সঙ্গে। এদের একজন রবিউল আলম (৬৩)। ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। প্রায় ৪০ বছর আগে সন্দ্বীপের সন্তোষপুর থেকে এই দ্বীপে এসেছেন।
তিনি জানান, নদীভাঙণের ফলে সন্তোষপুরে বাপদাদার ভিটেমাটি হারিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন উড়িরচরে। কিন্তু বিগত ৪০ বছরে এই দ্বীপও ভেঙে ছোট হয়েছে। একদিকে ভাঙছে; আরেক দিকে গড়ছে, জানালেন রবিউল। উড়িরচরের প্রধান কেন্দ্র বলে পরিচিত কলোনী বাজারের আকলিমা হোটেলেও সান্ধ্যকালীন ভিড়। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নূর জামাল (৫৫), ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আকবর হোসেন (৩২), ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফরহাদ হোসেন (৩৫)- এরা জানালেন নানান তথ্য।
প্রাকৃতিক বিপদ এখানকার মানুষের জীবন বারবার বদলে দেয়। অধিক কষ্টে ফলানো ফসল আদৌ ঘরে তুলতে পারবেন কীনা, তা নিয়ে শংকা থেকেই যায়। গত আমনের শেষ সময়ে এই দ্বীপের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে বহু মানুষ ফসল হারিয়েছে, বাড়িঘর হারিয়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় বর্ষাকালে জোয়ারের পানিতেও ডুবে যায় ফসলি মাঠ।
উড়িরচরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেয়া যায়, প্রধান দু’টি সড়ক বাদে আর কোন সড়ক নেই। বলা যায়, পায়ে হাঁটার কিছু পথ আছে। প্রয়োজনে স্থানীয় মানুষেরা তা তৈরি করে নিয়েছেন। কিন্তু বর্ষায় এ পথ দিয়ে চলাচল কষ্টসাধ্য। স্থানীয়ভাবে তৈরি করা নিচু রাস্তাগুলো বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকে। শুধু যোগাযোগ নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ জীবনযাপনের সব ক্ষেত্রেই এখানকার মানুষেরা প্রতিনিয়ত বহুমূখী সংকটের মুখোমুখি। চৌদ্দ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য আর দশ কিলোমিটার প্রস্থের এই দ্বীপের অভ্যন্তরীণ চলাচলে প্রধান বাহন হিসাবে ব্যবহৃত হয় মোটরবাইক। রয়েছে কয়েকটি জীপ গাড়ি; যা যাত্রী বহনে চলাচল করে। ভ্যান, ট্রলি, সাইকেল, রিক্সার প্রচলনও আছে। ৩০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে মাত্র ৪ কিলোমিটার পাকা আর ১৩ কিলোমিটার ইট বিছানো। জেলা সদর চট্টগ্রাম থেকে এই দ্বীপের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার আর উপজেলা সদর থেকে দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার।
দ্বীপের চারিদিকে নদীবেষ্টিত হলেও এখানে জেলের সংখ্যা খুবই কম। শতকরা ৯৯ শতাংশ মানুষের জীবিকা কৃষিকাজের ওপরই নির্ভরশীল। মোট ভূমির বেশিরভাগ আবাদী। মাত্র ৫০০ একর জমিতে বনভূমি থাকলেও তা দিন দিন কমছে। একটি নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা ও ৪টি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় উড়িরচরের শিক্ষা ব্যবস্থা আবদ্ধ হয়ে আছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রম থাকলেও তা খুবই সীমিত আকারে। রয়েছে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক।
১৯৮৫ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল এ দ্বীপ। বহু মানুষ পরিবারের সবাইকে হারিয়ে পথে বসেছিলেন। তাদেরকে নতুন করে জীবন শুরু হয়েছিল শুন্য থেকে। সেই দিনটির পর প্রায় ৩৩ বছর পরেও প্রলয়ের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন বাসিন্দারা। পঁচাশির পর একানব্বই; এরপর আরও অনেক ঝড়-ঝাপটা বয়ে যায় এ দ্বীপের ওপর দিয়ে। মাঝে আরেকবার এসেছিল ‘নোনা জোয়ার’।
জলবায়ু পরিবর্তন আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রসঙ্গ আলাপ উঠতেই দ্বীপের বয়সী ব্যক্তিরা পঁচাশির ঘূর্ণিঝড়ের প্রলয়ের কথা সামনে নিয়ে আসেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে জোয়ারের পানি, বেড়েছে লবনাক্ততা, শুকনোয় রেড়েছে তীব্র পানি সংকট।
মো. ইসাহাক। বয়স ৬৬ বছর। উড়িরচরের ৯নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বিরাশি এখানে ঘর বেঁধে পঁচাশি সালেই ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি। দুই মেয়ে এক ছেলে আর স্ত্রীকে হারান। বাড়িঘরসহ মানুষজন ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ঝড়ের প্রলয়ে। স্ত্রী মনোয়ারা বেগম রানু (২১), বড় মেয়ে মাসুদা আক্তার ডলি (৯), ছোট মেয়ে রুমা আক্তার (৭) এবং একমাত্র ছেলে বাহাদুরের (২) মরদেহ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামে চাকরিরত ইসাহাক ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির খবর পান দু’দিন পরে। চারদিন পরে দ্বীপে এসে জনশূন্য বিরান বাড়িটি দেখতে পান। স্বজন আর সম্পদ হারিয়ে নিথর হয়ে যান ইসাহাক। আবার নতুন করে শুরু হয় তার জীবন।
উড়িরচরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল কাসেম। বয়স ৬২ বছর। পঁচাশির ঘূর্ণিঝড়ের একদিন আগে এখানে আসেন। মাত্র বছর খানেক আগে বিয়ে করে দ্বীপে নতুন ঘর বেঁধে সংসার শুরু করেছিলেন। বছর না ঘুরতেই তার নতুন জীবনের স্বপ্ন মাটির সাথে মিলিয়ে যায়। স্ত্রী জোছনা বেগম (২২) সহ পরিবারের ১৪জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
সত্তর বছর বয়সী মা মমতাজ বেগম, নিজের স্ত্রী, তিন ভাইয়ের স্ত্রীসহ আরও অনেককে হারিয়ে জীবনের গতি একেবারেই থেমে যায়। এরপর শূন্য থেকে আবার জীবন শুরু হয়। উড়িরচরে গিয়ে এমন একজন নারীকে খুঁজে পাই, যিনি পাঁচাশির ঘূর্ণিঝড়ে ভেসে গিয়েও বেঁচে আছেন। নাম আয়শা বেগম। বয়স ৬০ পেরিয়েছে।
একই ঝড়ে তার স্বামী ফজললু হক ভেসে যান। আয়শা বেগমকে কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। একটি ঢেঁকি ধরে তিনি ভাসতে ভাসতে সে পর্যন্ত গিয়েছিলেন। বাঁচার আশা তিনি করেননি। কিন্তু বাঁচলে কী হবে; সেই থেকে আয়শা বেগম অনেকটাই বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন। ঘূর্ণিঝড়ের সময়কালে গর্ভে থাকা মেয়ে রাহিমা বেগমের সঙ্গেই থাকেন তিনি।
উড়িরচর ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষা ক্ষেত্রে এই দ্বীপটি অনেক পিছিয়ে আছে। দ্বীপে পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষক। মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই; আছে একটি নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাস শিক্ষার্থীদের এটিই ভরসা। স্কুলের শিক্ষার চেয়ে দ্বীপের বাসিন্দাদের মাদ্রাসা শিক্ষায় আগ্রহ বেশি। এখানে ২টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা, ৪টি হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও ৩৪টি মক্তব রয়েছে। তবে দ্বীপের একমাত্র নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী চোখে পড়ে।
দ্বীপের দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুরাও পড়তে চায়। বড় হয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। অভিভাবকদেরও আশাবাদ কষ্ট হলেও সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন। কিন্তু সুযোগ না থাকায় অনেকের পক্ষেই সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। লেখাপড়া করাতে না পেরে বাবা-মায়েরা তাই শিশুদের আগেভাগেই কাজে পাঠিয়ে দেন। বইয়ের চেয়ে কাজের পাঠই তখন গুরুত্বপূর্ন হয়ে ওঠে।
দ্বিতীয় শ্রেণির মো. ইলিয়াছ, প্রথম শ্রেণির শারমিন আক্তার, একই শ্রেণির বিবি ময়না, পঞ্চম শ্রেণির মুসলিমা আক্তারসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হলো। ওরা পড়ছে উড়িরচরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে আলহাজ্জ মাহফুজুর রহমান মিতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শিশুদের শিক্ষার পথ দেখানোর কথা ভেবে তিন মাস আগে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন। সিডিএসপি প্রোগ্রামের আওতায় একটি ভবন নির্মিত হলেও শিক্ষক, আসবাবপত্র ইত্যাদি সংকট রয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা মো. সালাহউদ্দিন বলছিলেন, এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে এই এলাকার ছেলেমেয়েদের ৩-৪ কিলোমিটার দূরে গিয়ে মেঘনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে হতো। ফলে অনেকের পক্ষেই স্কুলে যাওয়া সম্ভব ছিল না। আর স্কুলে দিতে না পারায় অভিভাবকেরা শিশুদের পাঠাতেন কাজে। জানালেন, ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হতে না পারলে আমরা পিছিয়ে থাকবো। উড়িরচরের মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত এলাকা এটি। এখানে ছিল না কোন বিদ্যালয়। এই এলাকায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ই প্রয়োজন। কিন্তু তার আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। এরফলে কিছু ছেলেমেয়ে অন্তত বিদ্যালয়মূখী হবে।
উড়িরচর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, বিভিন্ন কারণে এই দ্বীপ ইউনিয়নটি পিছিয়ে আছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা এর অন্যতম কারণ। এখানে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন প্রয়োজন। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে একটি পরিত্যক্ত ভবনে।
এ বিষয়েও সরকারের নজর দেয়া প্রয়োজন। এখানকার সমস্যার বিষয়গুলো আমরা যতটা সম্ভব সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে জানাচ্ছি। কিন্তু সে অনুযায়ী বরাদ্দ হচ্ছে না।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)