বছর ঘুরে আবারো সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান আমাদের দ্বারপ্রান্তে হাজির হয়েছে। শনিবার রাতে তারাবিহ নামাজ এবং সেহরী খাওয়ার মাধ্যমে মাসব্যাপী এই সাধনা শুরু হবে। এই মাস মুসলমানদের জন্য শুধু উৎসবের মাস নয়, বরং এই মাস মানবিকতা এবং তাকওয়া অর্জনের মাস। কেননা যেসব মানুষ সারা বছর তিন বেলা খাবার পায় না, সেসব গরিব মানুষের দুঃখ, কষ্ট রমজানের উপবাসের মাধ্যমে অনেকটা অনুভূত হয়। এছাড়া রোজা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারায় বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা সংযমী হও।’ কুরআনের এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, মহান আল্লাহ তায়ালা মূলতঃ রমজানের রোজা দ্বারা এবং এই মাসে মুসলমানদের জীবন বিধান পবিত্র কুরআন নাজিল করে তার বান্দাদেরকে সংযমী এবং তাকওয়া সম্পন্ন প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। আমাদের জাতীয় জীবনের প্রায় সবক্ষেত্রে আমরা যখন চরম অসহিন্ষুতাদেখতে পাই, তখন সংযমের এই রমজান আমাদেরকে পরমত সহিন্ষুতাসহ সবক্ষেত্রে সংযমী হিসেবে গড়ে তুলবে বলে আমরা আশাবাদী। অবশ্য বছরের অন্যান্য মাসের চেয়ে রমজানে বাংলাদেশ সহ অন্যান্য মুসলিম বিশ্বে এর প্রতিফলন দেখতে পাই। অন্যান্য মাসের চেয়ে এই মাসে অপরাধ সংঘটনের মাত্রাও অনেকাংশে কম থাকে। এ বিষয়ে সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরিফের হাদীসে জানা যায়, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) রাসুল (সা.) এর বরাতে বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আসে তখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দিয়ে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়।’ এর ফলে মানুষ শয়তানের প্ররোচনায় প্ররোচিত না হয়ে খুব সহজে সিয়াম সাধনা ও ত্যাগের মহিমায় বিভিন্ন ইবাদত, বন্দেগীর মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ হওয়ার চেষ্টায় মগ্ন হতে পারে। রমজান সম্পর্কিত কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মানবতার শিক্ষাই হচ্ছে রমজানের প্রকৃত শিক্ষা। ধর্ম, বর্ণ ও জাতিগত সকল ভেদাভেদ ভুলে গরিব, দুঃখী মানুষ সহ সবার দুঃখ-কষ্ট বুঝার মতো মানবিক বিষয়ের প্রশিক্ষণ দেয়াই হচ্ছে রমজান মাসের মূল শিক্ষা। শুধু তথাকথিত উপবাসের বদলে রোজার এই প্রকৃত শিক্ষাকে ধারণ করে নিজেদেরকে মানবিক হিসেবে গড়ে তুলতে সকল মুসলমানদেরকে মনোযোগী হওয়ার জন্য আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাই। সকল মুসলমানের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা রইলো।