এবারের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছে রোমান্টিক ঘরনার সিনেমা ‘পোড়ামন টু’। ২০১৩ সালে মাহিয়া মাহি ও সাইমন অভিনীত ‘পোড়ামন’ মুক্তি পায়। সেই ছবিটি সিনেমাপ্রেমীদের মন ছুঁয়ে যায়, ব্যবসায়ীক ভাবে সফলতাও পায়। তবে সেই সফলতাকে ছাড়িয়ে গেলো ‘পোড়ামন টু’!
গত ১৬ জুন মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি ১৩ জুলাই পর্যন্ত এসে প্রায় ৮৭টি হলে প্রদর্শিত হচ্ছে। দেশের চলচ্চিত্রে যে সংকটাবস্থা চলছে সে অবস্থান থেকে নবাগত নায়ক সিয়াম ও নায়িকা পূজা চেরির সিনেমা প্রায় পঞ্চম সপ্তাহ ধরে চলছে এটি সহজ কথা নয়।
পূজা চেরি এর আগে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘নূর জাহান’ দিয়ে শুরু হলেও দেশীয় চলচ্চিত্রে এটি তার প্রথম কাজ। অন্যদিকে ছোট পর্দায় জনপ্রিয় অভিনেতা সিয়ামের অভিষেক চলচ্চিত্র এটি।
বাংলা চলচ্চিত্রের ‘সুপারস্টার’ খ্যাত শাকিব খানের মুক্তি পাওয়া তিনটি সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ‘পোড়ামন ২’। গণমাধ্যমের খবর, চলচ্চিত্র বোদ্ধারা আগামী দিনের তারকা সিয়ামকে দেখছেন! দুর্দান্ত অভিনয়ে জন্য সিয়াম-পূজা জুটিতে মুগ্ধ বাংলা চলচ্চিত্রের একসময় পর্দা কাপানো অভিনেত্রী শাবনূর নিজেও। বিভিন্ন গণমাধ্যমে শাবনূর বলেছেন, সিয়াম-পূজা জুটি একসময়ের সালমান শাহ-শাবনূর জুটি!
সত্যিই একটি ছবি করেই এমন প্রশংসা কুড়ানো কতটুকু সার্থক এমন কৌতুহল থেকেই ‘পোড়ামন টু’ দেখতে সিনেমা হলে যাওয়া। বাংলা সিনেমা দেখতে যাচ্ছি মনে মনে একটা ভয় নিয়েই যাচ্ছি, সবার মতো আমাকেও কি বলতে হবে টাকা পানিতে দিয়ে আসলাম? বা এই সিনেমা দেখতে হলে যেতে হয়, ইন্টারনেট থেকেই তো দেখা যায়!
নব্বই দশকের হিট জুটি সালমান শাহ ও শাবনূর এর কাজ সিনেমা হলে কখনো দেখার সৌভাগ্য হয়নি। সেই আকাঙ্ক্ষা নিয়েই সিয়াম-পূজার কাজ দেখতে যাওয়া। সিনেমা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর মনে হলো আমি সালমান শাহকে দেখতে পাচ্ছি। সাবলীল অভিনয়, কমেডি, নাচ সবকিছু মিলে মনে হচ্ছে সালমান শাহ’র মতো কাউকে দেখছি।
সিনেমাটি মন ছুঁয়ে যাওয়ার কতগুলো কারণ ছিলো। একটি ‘পোড়ামন টু’-এ বাংলাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা সালমান শাহকে স্মরণ করা হয়েছে। এর আগে কোনো সিনেমায় খ্যাতিমান এই অভিনেতাকে স্মরণ করা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। আরেকটি কারণ বর্তমানে বেশিরভাগ সিনেমা বা গানের শুটিং করতে ইউরোপ বা আমেরিকায় ছুঁটে যান পরিচালকরা কিন্তু এই ছবির পরিচালক রায়হান রাফী বাংলাদেশের গ্রামকে এতো সুন্দর করে তুলে ধরেছেন তা সত্যিই অবাক করার মতো। সিনেমার গানগুলোও দারুণ একটির চেয়ে আরেকটি আরও বেশি সুন্দর।
তবে আমায় সবচেয়ে অবাক করেছে পূজা চেরির অভিনয়। হুইল পাউডার হোয়াইট বিজ্ঞাপনে কাজ করা ছোট্ট এই মেয়েটি এতো দুর্দান্ত অভিনয় করবে ভাবতে পারিনি! সাধারণত সিনেমার নায়িকাদের মতো নেকামো জিনিসটি পূজার মধ্যে দেখিনি। পূজার মধ্যে আমি সাবলীলতা দেখিছি। ভানের জলে গা ভাসিয়ে না দিয়ে সঠিকভাবে নিজেকে ধরে কাজ করলে বাংলাদেশে আরেকটি শাবনূর আমরা পেতে পারি।
‘পোড়ামন টু’ শেষ পর্বে কষ্টের মাত্রাটা বেশি। যারা সিনেমা দেখে তারা সবাই জানেন রোমান্টিক ঘরানার সিনেমায় সুখের পাশাপাশি দুঃখটাও বেশি থাকে। কিন্তু ‘পোড়ামন টু’ দুঃখটা আমার কাছে সালমান শাহ ও শাবনূর অভিনীত হিট সিনেমা ‘আনন্দ-অশ্রুর’ কথা মনে করিয়ে দেয়। নায়ক-নায়িকার মিল না দেখার আক্ষেপটা মনে হয় অনেক পোড়ায় সিনেমাপ্রেমীদের।
আসলে মানুষ জীবনের কষ্টের মাঝে যখন আনন্দ নিতে, বিনোদিত হতে সিনেমা দেখতে যায়। সেখানেও যদি তাকে কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়, এটা হয়তো অনেকে মেনে নিতে চান না। বা আরো হতাশায় নিমজ্জিত হন অনেকে। তবে শেষ পর্যন্ত ‘পোড়ামন ২’ নিয়ে সন্তুষ্টই থাকতে দেখা গেলো ছবির দর্শকদের।