১২ মাসের সেরা মাস রমজান। এ মাসে সিয়াম পালনের বিপরীতে প্রতিদানও বেশি। আসলে ইবাদতপ্রিয় বান্দার জন্য পবিত্র এ মাস সাধনার বসন্ত। পবিত্র কোরআন যেমন শ্রেষ্ট কিতাব, সেই কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাসটিও সামগ্রিক বিবেচনায় তেমনি অতুলনীয় মাসের মার্যাদা লাভ করেছে।
অত্যান্ত নির্ভরযোগ্য একটি হাদীসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক আমলের বিপরীতে প্রাপ্তি ও পুরস্কারের মধ্যে পারস্পারিক তুলনা করে সিয়ামকে অনন্য ইবাদতের মর্যাদা প্রদান করেছেন।
সম্মানিত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মহান আল্লাহর কাছে ৬টি আমলের মর্যাদাগত তুলনা এমন— দুটি আমল অবধারিত করে দেয়। অন্য দু’টির বিপরীতে তার সমপরিমান প্রতিফল পাওয়া যায়। আরেকটি আমল আছে যার বিপরীতে ১০ গুণ বেশি এবং অন্যটি বিপরীতে সাতশ গুণ বেশি প্রতিদান বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অতঃপর আরেকটি আমলের কথা তুলনার বাহিরে নিয়ে উল্লেখ করে বলেছেন, তার প্রকৃত প্রতিদান কী হবে, কতটুকু হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেহই অবগত নন।
এবার সবকটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি ইরশাদ করেন, এবার যে দুটি আমল অবধারিত করে তা হলো, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক না করে তার ওপর বিশ্বাস ও ইবাদত করে মৃত্যুবরণ করেছে ,তার জন্য জান্নাত অবধারিত। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করে সে অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত। কেউ একটা পাপ কাজ করলে তাকে সমপরিমাণ শাস্তি দেওয়া হবে। বেশি নয়। আর কোনো ব্যক্তি যদি পুণ্যময় কোনো আমল করার নিয়্যত করেও করতে পারেনি, তবে তাকে নিয়্যতের কারণেই একটি সাওয়াব দান করা হবে।
কোনো ব্যক্তি যদি একটি পুণ্যের কাজ করে তাকে ১০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ খরচ করবে, সে ক্ষেত্রে এক দেরহামকে বাড়িয়ে দেওয়া হবে সাতশ দেরহামে এবং এক দিনারকে বৃদ্ধি করা হবে সাতশ দিনারে। অতঃপর সিয়ামকে আলাদা করে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, সিয়াম পালনকারী সওয়াব কত, তা একমাত্র আল্লাহই অবগত আছেন। (তাবরানী) অনুরূপভাবে হযরত আবু উসামা রা. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে বললেন, ‘আমাকে একটি আমলের কথা বলুন।’ তিনি বললেন, ‘সিয়াম পালন কর। কারণ তার তুলনা নাই।’ (নাসাঈ)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘পূর্বগত দিনগুলোতে তোমাদের আমলের কারণে আজ তোমরা পরিতৃপ্ত পানাহার কর।’ (সূরা হাক্কা-২৪) এই আয়াতের তাফসীরে বিশ্ব বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও মুফাসিসর হযরত ওয়াকিসহ অনেক নির্ভরযোগ্য ওলামাগণ বলেন, সিয়াম পালনকারীগণ দুনিয়ায় অভুক্ত ও তৃষ্ণার্ত থেকে সিয়াম পালন করার পুরস্কার স্বরূপ আল্লাহ পাক হাশরের দিন তাদের জন্য একটা বিশেষ ভোজ সভার আয়োজন করে তাদেরকে আহবান করবেন। এই আয়াতে সেই আহ্বানের কথাই বর্ণিত হয়েছে।
লেখক: মুফতি আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক উপাধ্যক্ষ, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা