দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ চলায় আগামি ৫ আগস্ট পর্যন্ত সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ২৮ জুলাই ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত স্থগিত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের ৬ আইনজীবী এবং ওই আসনের ৭ জন ভোটারের করা রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্র পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও বিপুল বাগমার।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির বিবেচনায় ২৮ জুলাই সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ স্থগিত চেয়ে গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের ৫ আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির রোববার ই-মেইলের মাধ্যমে নোটিশটি পাঠান। তবে এই নোটিশের জবাব না পেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো: মুজাহিদুল ইসলাম, আল-রেজা মো: আমির, মো: জোবায়দুর রহমান, মো: জহিরুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, মেজবাহ উল ইসলাম এবং সিলেট-৩ আসনের ৭ জন ভোটার ২৮ জুলাই নির্বাচন স্থগিত চেয়ে সোমবার হাইকোর্টে রিট করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আপাতত ৫ আগস্ট পর্যন্ত এই ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন এবং এই আদেশটি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন।
এর আগে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ২৮ জুলাইয়ের উপনির্বাচন স্থগিত চেয়ে দেয়া লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, ‘২০২১ সালের ১১ মার্চ সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে সিলেট-৩ আসন শূন্য হয়। এরপর ২০২১ সালের ১৫ মার্চ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত ১১ মার্চ এই আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২৯ এপ্রিলের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয় যে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ১২৩ এর দফা ৪ অনুযায়ী উক্ত শূন্য পদ পূরণে ৮ জুন ২০২১ তারিখের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রহিয়াছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ১২৩ এর দফা ৪ শর্তানুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মতে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত দৈব দুর্বিপাকের কারণে নির্ধারিত মেয়াদ অর্থাৎ শূন্য হইবার নব্বই দিনের মধ্যে উল্লিখিত শূন্য আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না। এমতাবস্থায় সিলেট-৩ শূন্য আসনের নির্বাচন নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে অনুষ্ঠান সম্ভব না হওয়ায় পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হইবে। তাই গত ২ জুন নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ১৪ জুলাই ভোট গ্রহণের দিন ধার্য করে। তবে গত ১৫ জুন নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের তারিখ পরিবর্তন করে ২৮ জুলাই নির্ধারণ করে।’
লিগ্যাল নোটিশে আরও বলা হয়, ‘সংবিধানের ১২৩ এর দফা ৪ এর শর্তানুসারে সিলেট উপ- নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত। তাই ২৮ জুলাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য উপ-নির্বাচন স্থগিত করা যাবে না- এমন বক্তব্য আইনের সঠিক ব্যাখ্যা নয়। এক্ষেত্রে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত চলমান করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির বিবেচনায় এবং এই লকডাউনের সময়ে নির্বাচন আয়োজন না করে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্য যেকোন সময় ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা। কারণ, এই সময়ে ৩ লাখ ৫২ হাজার ভোটারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠান সরকারের বর্তমান লকডাউন নীতির বিরোধী। তাই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির বিবেচনায় আগামি ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য সিলেট-৩ আসনের ভোটগহণ স্থগিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায়, উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হব।’
অন্যদিকে শনিবার সিলেট জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে উপনির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে আগামী ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন আর পেছানোর সুযোগ নেই। ভোটারদের মাস্ক পরে ও সামাজিক দূরত্ব মেনে ভোটকেন্দ্রে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই উপনির্বাচনের সব কার্যক্রম লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবে।’