চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সিরিয়ায় হামলায় ট্রাম্পই বিরোধী ছিলেন!

সিরিয়ার সাম্প্রতিক রাসায়নিক হামলার প্রেক্ষিতে দেশটিতে মিসাইল হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়ার সরকারের বিমানঘাটিতে বৃহস্পতিবার এই ৫৯টি টোমাহক ক্রুস মিসাইল হামলা চালানোর নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অথচ তিনিই একসময় বারাক ওবামাকে এ ধরনের হামলায় নিরুৎসাহিত করেছিলেন। রাসায়নিক হামলায় শিশুদের ভয়াবহ দুর্ভোগের চিত্রই তাকে কঠোর পদক্ষেপে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন।

সিরিয়ায় ছয় বছরের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের শাসনাধীন অঞ্চলে এবারই প্রথম সরাসরি হামলা যুক্তরাষ্ট্রের। পূর্ব-ভূমধ্যসাগরের একটি নৌ ঘাঁটি থেকে এই হামলা চালানো হয়। হামলার লক্ষ্যস্থল শায়ারাত বিমান ঘাঁটি, যা যুদ্ধপরিকল্পনার স্থান এবং এখান থেকেই রাসায়নিক হামলা চালানো হয়েছিলো, বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। হামলায় ৬ জন নিহত হয় বলে সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়।

ইদলিব প্রদেশের খান শেইখোন শহরে মঙ্গলবারের রাসায়নিক হামলার জবাবেই যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ। সেই হামলায় ২৬ জন শিশুসহ ৮০ জনেরও বেশি নিহত হন। হামলার পর প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায় অনেক শিশুই শ্বাসকষ্টে ভুগছে, তাদের মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে।

অথচ বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে সিরিয়ায় হামলা চালাতে নিরুৎসাহিত করেছিলেন ট্রাম্প। সেসময়ও রাসায়নিক হামলা হয়েছিলো দেশটির রাজধানী দামাস্কাসে, ২০১৩ সালের আগস্টে সেই হামলায় প্রায় দেড় হাজার জনের মতো নিহত (১ হাজার ৪২৯ জন) হয়, যার জন্য সরকারি বাহিনীকেই দায়ী করা হয়েছিলো।

টুইটারে অত্যন্ত সক্রিয় এই ধনকুবের আবাসন ব্যবসায়ী, রিয়েলিটি টিভি স্টার সেসময় বেশ কয়েকটি টুইট করেছিলেন। সেসময় ওবামা কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে চাইলে ট্রাম্প বলেছিলেন, “এমনটি না করলে সে খুব বড় ভুল করবে। সিরিয়ায় হামলার আগে প্রেসিডেন্টের অবশ্যই কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে। না নিলে তা হবে বড় ভুল!” আবার এমন হামলার বিষয় গোপন রাখতেও বলেছিলেন তিনি, হামলাকে বরং ‘চমক’ রাখতে চেয়েছিলেন। তার বক্তব্যে এমন অনেক দ্বিচারিতা ছিলো।

ট্রাম্পের সেই সময়কার টুইটগুলো দেখে নেয়া যাক:

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক এই হামলার নিন্দা জানিয়ে রাশিয়া একে ‘সামরিক আগ্রাসন’ বলেছে। আসাদের কার্যালয় থেকে শুক্রবার একে ‘অপমানকর’ এবং ‘অদূরদর্শী পদক্ষেপ’ বলা হয়।

ট্রাম্পের এমন কঠোর পদক্ষেপের কারণ কি?, এমন প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক। ইদলিব শহরের সাম্প্রতিক হামলার ভয়াবহ চিত্র বিশ্ব জুড়েই এক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর নিন্দায় মুখর অনেকেই ওয়াশিংটনের কঠোর পদক্ষেপ চায় এবং এজন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপর একটা চাপও ছিলো। তার প্রেক্ষিতেই যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ বলে সিএনএনকে জানায় মার্কিন এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

বিশ্ব নাড়িয়ে দেওয়া ছবির কয়েকটি

মার্কিন এই হামলার কারণ হিসেবে শিশুদের ভয়াবহ দুর্ভোগের চিত্র বড় কারণ হিসেবে বলছে সিএনএন। এসব ছবি বিশ্ববাসীর মতো ট্রাম্পকেও অত্যন্ত বিচলিত করে। “কোন শিশুই যেনো আর এমন ভয়াবহতার শিকার না হয়।” মার্কিন সামরিক হামলার নির্দেশ দেওয়ার পর ট্রাম্প এমনটি বলেন।

সেই সময় শিশুদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করা এক ডাক্তার বলেছিলেন, “আমি কখনোই এমন ভয়বাহ দৃশ্য দেখিনি। অবর্ণনীয়।”

প্রাণঘাতি রাসায়নিক হামলার ব্যবহার বন্ধ করা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। বুধবার তিনি বলেন, রাসায়নিক হামলার শিশুদের দুর্ভোগ সিরিয়া এবং আসাদ বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি ‘অনেকটাই পরিবর্তন করেছে’।

৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধের কোন ইতিবাচক রাজনৈতিক সমাধানও দেখা যাচ্ছে না।