চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সিন্ডিকেটের নেপথ্যে কারা?

জি-টু-জি প্লাস পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ১০টি এজেন্সির কাছ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক বা জনশক্তি নেয়ার ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে তা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ড. মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন সরকার।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়নি,  এদেশ থেকে সেখানে শ্রমিক যাওয়া অব্যহত থাকবে। মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এ কথা জানিয়ে বলেন, যে ১০টি এজেন্সির সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে; তা খতিয়ে দেখছে সরকার।

নিঃসন্দেহে বড় আশার কথা শুনিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। এই বাজার বন্ধ হলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ২০১৬ সালে জি-টু-জি প্লাস পদ্ধতি চালু হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে কয়েক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ৯১ হাজার ৩ শত ৭৮ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। সব মিলিয়ে সেখানে বৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ৯ লাখ ৭১ হাজার ৯৬২ জন। তবে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন স্থানে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ১৫ লাখের কম নয়।

অবশ্য সরকারের মতো আশা না দেখে মালয়েশিয়ার এমন সিদ্ধান্তে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের শ্রমবাজারে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

শুধু টিআইবি নয়, একই আশঙ্কা দেশের অর্থনীতিবিদদেরও। তারা বলছেন, মালয়েশিয়ার এ ধরনের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

আমরা জানি, জি-টু-জি প্লাস পদ্ধতির চালু হয়েছিল অল্প খরচে এবং দ্রুততার সাথে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির জন্য। চুক্তির পর কিছুদিন সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলও। এমনকি ৪০ হাজার টাকার মধ্যে অনেকেই সেদেশে যেতে পেরেছে। তবে এক পর্যয়ে সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে সরকারের এই সুন্দর উদ্যোগও নষ্ট হয়ে যায়। জনপ্রতি ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা আদায় করে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ওই সিন্ডিকেট।

শুধু তাই নয়, তাদের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়া কর্মীরা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বেতন না পাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধাও পায়নি তারা। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হয়েছে নির্ধারিত কাজ নিয়েও। যেসব কাজের কথা বলে কর্মী পাঠানো হয়েছিল; শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে তাদের বাধ্য করা হয়েছে যা অনেক শ্রমিকের পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে তাদের অনেকেই বাংলাদেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছে।

এটা অস্বীকার করার উপায় নেই প্রতিযোগিতামূলক বাজার না থাকলে অনিয়ম হবেই। যারা একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ পেয়েছিল; তারা নিজেরা লাভবান হয়ে আজ দেশকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ফেলেছে। তাদের বিরুদ্ধে যথাসময়ে পদক্ষেপ নেয়া হলে আজকের এই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

আমরা মনে করি, এখনো সময় অাছে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকারের এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের। তবে তার আগে এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এই চক্রের বিচারের কোনো বিকল্প নেই।