প্রায় ধ্বংসের পথে চলচ্চিত্র শিল্প। এই শিল্প বাঁচাতে সবার আগে প্রয়োজন যুগোপযোগী সিনেমা হল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, গত কয়েক দশকের ব্যবধানে হাজারের বেশি সিনেমা হল থেকে বর্তমানে হল সংখ্যা সত্তরটিতে এসে ঠেকেছে! এমন অবস্থায় দেশের সিনেমা হল বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
দেশের বন্ধ হয়ে যাওয়া হলের সংস্কার ও নতুন সিনেমা হল গড়তে স্বল্প সুদে প্রায় ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে ঋণের পরিমাণ নিয়ে সরকারিভাবে কিছু না জানা গেলেও সেটার পরিমাণ প্রায় ৭০০ কোটি টাকার মতো বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্র শিল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক সংগঠনের নেতারা।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সামগ্রিকভাবে বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন সিনেমা সংশ্লিষ্ট এই নেতারা।
তবে হল মালিক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশিদ বলছেন, ‘করোনার কারণে অনেক হল মালিক স্বচ্ছলতা হারিয়েছেন, এরকম অনেকেই আমাদের বলছিলেন যে, ঋণ না দিয়ে সরকার যদি এই বরাদ্দকৃত অর্থ অনুদান হিসেবে দিতেন, তাহলে বেশি উপকৃত হতেন। ৪ শতাংশ সুদ দেয়া অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।’
তবে সরকারের এই ঋণ সুবিধাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, বাংলা সিনেমার জন্য নিঃসন্দেহে এটি সুসংবাদ। সরকার সিনেমা হল বাঁচাতে বিরাট পরিসরে যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এক সময় বহু সিনেমা হল ছিলো। কিন্তু দিনে দিনে তা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, সেটা সবাই জানেন। সরকারের এমন উদ্যোগের ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়া হলগুলো যেমন সংস্কার হবে, তেমনি নতুন করে সিনেমা হল তৈরীতেও অনেকে এগিয়ে আসবেন। আর হল সংকটের বিষয়টি কেটে গেলে সিনেমা নির্মাণেও গতি আসবে।
পরিচালক সমিতির এই নেতা বলেন, শুধু সিঙ্গেল স্ক্রিন নয়, যারা মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ করতে চান তারাও সরকারের বিশেষ বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন।
তবে একই সঙ্গে এই নির্মাতা জানান, সিনেমা হল নির্মাণের পাশাপাশি সিনেমা নির্মাণেও সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। অন্তত ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলে ভালো মানের ছবি তৈরি সম্ভব। সে হিসেবে সংশ্লিষ্ট সংগঠন মিলে আবেদনপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছিয়েছি।
হল নিয়ে সরকারের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, গত ১৫-২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের যেসব সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলো পুনরায় চালু করতে এবং নতুন সিনেমা হল নির্মাণ করতেই মূলত সরকারের এই বিশেষ ঋণ সুবিধা। ইতোমধ্যে সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এটিকে আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য সবুজ সংকেত হিসেবে দেখছি।
ঋণ নেয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়টি জানিয়ে প্রযোজক সমিতির এই নেতা জানান, সরাসরি সরকারি কোষাগার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েকটি ব্যাংকে টাকা রাখা হবে। হল মালিকরা সেসব ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন। যা খুবই স্বল্প ঋণে ও দীর্ঘ মেয়াদী কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য।
করোনার কারণে বন্ধ থাকা সিনেমা হল কবে খুলবে জানতে চাইলে সিনেমা সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বসবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা। সেখানে ঋণ বিষয়ে চূড়ান্ত দিক নির্দেশনা পাওয়ার পাশাপাশি সিনেমা হল চালুর বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে।