গেল এপ্রিলে প্রথমবারের মতো রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ৪১তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব দেখানো হয় দেশের মেধাবী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বহুল আলোচিত ছবি ‘শনিবার বিকেল’। ছবিটি দর্শকের প্রশংসা কুড়ানোর পাশাপাশি জিতে নেয় দুটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ক্রিটিক জুরি পুরস্কার।
এরপর ছবিটির গন্তব্য সিডনি ফিল্ম ফেস্টিভাল। বর্তমানে ছবিটি নিয়ে সিডনিতেই অবস্থান করছেন নির্মাতা। আর সেখানে থাকতে থাকতেই এবার খবর এলো, চলতি মাসে মিউনিখ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও স্থান করে নিয়েছে ‘শনিবার বিকেল’। শুধু তাই নয়, জার্মানির এই গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগ সিনেকোপ্রো কম্পিটিশনেও লড়বে ছবিটি।
সিডনি থেকে ফারুকী চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, সোমবারের (১০ জুন) শো’টি দুর্দান্ত হয়েছে। আগত দর্শক ছবিটির প্রশংসা করেছেন বলেও জানান তিনি।
মিউনিখ চলচ্চিত্র উৎসবেও উপস্থিত থাকবেন ফারুকী। দর্শকের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্বেও অংশ নিবেন তিনি। ফারুকী বলেন, ১৮ জুন সিডনি থেকে ঢাকায় ফিরছেন তিনি। ঢাকায় ফিরেই মিউনিখ চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করবেন। কারণ ২৮ জুন মিউনিখ চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে ফের দেশ ছাড়বেন এই ‘ডুব’ খ্যাত এই নির্মাতা।
এদিকে মিউনিখ ফিল্ম ফেস্টিভালের ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখা যায়, ‘সিনেকোপ্রো’ বিভাগে ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ ছাড়াও প্রতিযোগিতা করছে চলতি বছরে কানের ‘ফিপরেসকি প্রাইজ’ জয়ী এলিয়া সুলেইমানের ‘ইট মাস্ট বি হেভেন’, ব্রাজিলিয়ান পরিচালক করিম আইনোজের ‘দি ইনভিজিবল লাইফ অফ ইউরিডাইস গুজমাও’ এবং সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভালে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হওয়া চলচ্চিত্র ‘গাজা’।
ওয়েব সাইট মারফত আরো জানা যায়, ২৭ জুন থেকে শুরু হওয়া মিউনিখ চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ৬ জুলাই পর্যন্ত। এরমধ্যে ‘শনিবার বিকেল’-এর মোট চারটি স্ক্রিনিং হবে। জুনের ২৯ ও ৩০ তারিখ দুটি এবং জুলাইয়ের ১ ও ৪ তারিখ দুটি।
এদিকে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যমে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার ‘মেইক দ্য সুইচ’-এ একটি রিভিউ প্রকাশ পেয়েছে ছবিটির। চলচ্চিত্র সমালোচক চার্লি ডেভিড এর লেখা সেই রিভিউতে বলা হয়েছে, ছবির দৃশ্যগুলোকে বাস্তব মনে হয়েছে। পুরো সিনেমাটি ক্যামেরার এক শটে ধারণ করা হয়েছে। এই কৌশলটি পরিস্থিতির অস্থিরতাটিকে অনুভব করিয়েছে, দৃশ্যগুলোকে বাস্তবের মতো করেছে। সেই সঙ্গে সরাসরি সন্ত্রাস না দেখিয়ে বিষয়টি ক্যামেরার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অথবা অভিনয়শিল্পীদের মুখভঙ্গির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে।
ক্যামেরার এক শটে পুরো সিনেমা করার বিষয়টি অভিনয়শিল্পীদের কাঁধে অনেক কঠিন একটি দায়িত্ব। তবে দায়িত্ব খুব ভালোভাবেই পালন করতে পেরেছেন তারা। রিউভিউতে আরো বলা হয়, নুসরাত ইমরোজ তিশা রাইসা চরিত্রটিতে রূপদান করেছেন। উগ্রপন্থীদেরকে নানা ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলেও তারা নিজেদের মতবাদে অটল থাকে। সন্ত্রাসবাদ এবং উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এই ছবিটি পশ্চিমা দর্শকদের সামনে জঙ্গিবাদের ভয়াবহতা তুলে ধরেছে। ছবির সমাপ্তিতে সব ঝাপসা হয়ে অন্ধকার হয়ে যায়। ফলে শেষ পরিণতি আর জানা হয়না, শুধু হারাতে হয় অনেকগুলো প্রাণ।
দেশের প্রেক্ষাগৃহে এখনো মুক্তির অনুমোদন পায়নি ‘শনিবার বিকেল’। বাংলাদেশ-ভারত-জার্মান এই ত্রিদেশীয় যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘শনিবার বিকেল’ বাংলা ভাষা ছাড়াও ইংরেজি ভাষাতেও হয়েছে ডাবিং। টানা ১৫ দিন মহড়ায় মাত্র ৭ দিনেই শেষ হয়েছে ছবির শুটিং।
২০১৬ সালে গুলশানে ঘটে যাওয়া হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা নিয়েই এ ছবির প্লট। ‘শনিবারের বিকেল’ ছবিতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, পরমব্রত, তিশা এবং ফিলিস্তিনি অভিনেতা ইয়াদ হুরানি।