সিডনিতে শুক্রবার বন্দুকবাজির সঙ্গে জড়িত মুসলিম কিশোরের পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। ছেলেটির নাম ফরহাদ খলিল মোহাম্মদ জাবার। জাতিগতভাবে সে ইরাকি কুর্দিশ। জন্ম ইরানে। ১৫ বছরের এই মুসলিম কিশোরটি অস্ট্রেলিয়ায় এখন নতুন আলোচনার শিরোনাম! শুক্রবার এই ছেলেটি সিডনির প্যারামাটায় পুলিশ সদর দফতরের সামনে চেং নামের পুলিশের এক আইটি কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে! ওই সময়ে পুলিশের গুলিতে নিজেও নিহত হয়েছে সে।
ঘটনায় স্তম্ভিত অস্ট্রেলিয়ান সমাজ। প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বলেছেন দূর্ভাগ্যজনক ঘটনায় নিঃসন্দেহে অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ও ব্যথিত। আমাদের খুঁজে দেখতে হবে কেনো আমাদের কিশোর তরুণরা এভাবে জঙ্গী কার্যক্রমের দিকে ঝুঁকছে।
ঘটনাটির পর মুসলিম এলাকাগুলোতে সতর্কতা আরও বাড়ানো হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো বিচ্ছিন্ন ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে কেউ কোথাও যাতে মুসলিমদের হয়রানি না করে। অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম নেতারা ঘটনার নিন্দা করেছেন। কিন্তু এই কিশোরের হঠাৎ এই সশস্ত্র ভূমিকা পুলিশ সহ সবাইকে চমকে দিয়েছে। কারণ তার অপরাধের পুরনো রেকর্ড ছিলোনা। তার কোনো লেখা বা সঙ্গী নিয়েও সন্দেহ বের করা যায়নি। তার একটা টুইটার একাউন্ট ছিল। কিন্তু ২০১৩ সালের পর সেটিতে কোন পোস্ট নেই।
সিডনির উত্তর প্যারামাটা এলাকার বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকতো ফরহাদ। তার আইএস সঙ্গ সন্দেহের একমাত্র কারণ তার বোন! ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ইস্তাম্বুলের উদ্দেশে সিডনি ছেড়ে চলে গেছে তার বোন। ধারনা করা হচ্ছে আইএস’এর সঙ্গে যোগ দিতে সেখান থেকে সে সিরিয়া অথবা ইরাকে যাবে। সিডনি ছাড়ার আগে নিজের সব জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে গেছে ফরহাদের বোন। কোনো রকম ক্লু রেখে যায়নি।
শুক্রবার গোলাগুলিতে পুরনো একটি অস্ত্র ব্যবহার করেছে ফরহাদ। সেই অস্ত্রে গুলি করতে করতে সে পুলিশ সদর দফতরের দিকে এগোচ্ছিল। সেই সময়েই গুলিতে পুলিশের আইটি শাখার কর্মী চেং নিহত হন। পুলিশের একজন সিনিয়র কনস্টেবলের গুলিতে নিহত হয় ফরহাদ। পুলিশ বলেছে ওই সময় তাকে গুলি করে না থামালে অনেক লোক ক্ষয় হতে পারতো। কিন্তু ফরহাদ এই অস্ত্রটি কি করে পেয়েছিলো,কোথায় অস্ত্র চালানো শিখেছিলো, এসব তথ্য পুলিশ এখনো বের করতে পারেনি।
শুক্রবারের ঘটনাস্থলের তিনশ মিটার লাগোয়া আর্থার ফিলিপ হাইস্কুলে পড়তো ফরহাদ। স্কুল থেকেও পাওয়া যায়নি তার ব্যাপারে বিশেষ কোনো তথ্য। পুলিশের একজন গোয়েন্দা শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় তিনি ফরহাদকে একটি কালো শার্ট কালো ট্রাউজার পরা অবস্থায় প্যারামাটা মসজিদে দেখেছেন। এর মাধ্যমে জানা গেলো অস্ট্রেলিয়ার মসজিদগুলোতেও গোয়েন্দা নজরদারি চলে!
কিন্তু পুলিশ এখনও হতভম্ব কারণ এ ঘটনার আগাম কোনো হুমকি বা তথ্য তাদের কাছে ছিলোনা। উল্লেখ্য অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়েকশো যুবক গেছে আইএস’এর সঙ্গে যুদ্ধ করতে! অস্ট্রেলিয়ার সৈন্যও যুদ্ধ করছে আইএস রণাঙ্গনে। সেখানে নিজেদের তরুণ মুসলিম নাগরিকদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করছে অস্ট্রেলিয়ান সৈন্যরা!
এ নিয়ে দেশটি বিব্রতকর এক অবস্থার মধ্যে আছে। আইএস’র পক্ষে যুদ্ধে যারা গেছে তারা দেশে ফিরলে তাদের বিচারের সম্মুখীন করার জন্য নতুন একটি আইন পাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্ট। এর কিছুদিন পর পার্লামেন্টে নতুন আরেকটি আইন পাশ করা হয়। সে আইনে আইএস যুদ্ধে তার যে সব নাগরিক যোগ দিয়েছে তাদের নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সরকারকে। কিন্তু এতদিন এদেশ থেকে আইএস এর পক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছে তারা দেশ ছেড়ে গেছে লুকিয়ে।
আইএস ভালোবাসায় দেশের ভিতর অস্ত্র চালিয়েছে ফরহাদই প্রথম। তাও আবার দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল শহরের পুলিশ সদর দফতরের সামনে! পনেরো বছর বয়েসি এক মুসলিম কিশোরের এ ঘটনা পুরো অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তার গৌরবে টান দিয়েছে!