চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সিএসআর খাতে ব্যয়ে ব্যর্থ ১৬ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতায় (সিএসআর) অংশগ্রহণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও তা পালন করেনি ব্যাংকবর্হিভূত বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১৮টি প্রতিষ্ঠান সিএসআর খাতে অর্থ ব্যয় করেছে। বাকি ১৬টি প্রতিষ্ঠান এই খাতে কোনো টাকা ব্যয় করেনি।

আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা অনিয়মের কারণে ব্যাংকের মতো আর্থিক খাতও সমস্যায় পড়েছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় এই খাতে আয় কমেছে। অন্যদিকে বেশি সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এতে তাদের ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই সিএসআর খাতে ব্যয় করতে পারছে না।

এখন আয় বাড়াতে হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে হবে বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আর্থিক  প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ব্যাংক থেকে অর্থ ধার নিয়ে ঋণ বিতরণ করে। এতে তাদের সুদ হার বেশি পড়ে। এ কারণে গ্রাহক এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ

তিনি বলেন, ব্যাংকের মত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারে। এই আমানতই তারা ঋণ হিসেবে পুনরায় বিতরণ করতে পারে। এতে ব্যাংক থেকে তাদের ঋণ নেয়ার নির্ভরতা কমে আসবে। ঋণও দিতে পারবে কম সুদে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সিএসআর খাতে অর্থ ব্যয় করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা নেই।

‘‘ব্যাংকগুলোর মত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তাই আমানত সংগ্রহ করার জন্য তারা বেশি পরিমাণে সুদ দেয়। এ কারণে তাদের লাভ কমে গেছে। আর্থিক অবস্থাও ভাল নয়। তাই হয়তো সিএসআর খাতে ব্যয় করতে পারছে না।’’

এ অর্থনীতিবিদের মতে, অর্থমন্ত্রী ব্যাংকখাতে মার্জারের (একীভূত)  কথা বলছেন। আমি মনে করি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও মার্জার নিয়ে ভাবা দরকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সমন্বিতভাবে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে (জানুয়ারি-জুন) ২৪০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা সিএসআর বাবদ ব্যয় করেছে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলো ২৩৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মাত্র ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছে।

সাবেক তত্ত্বাবধারক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
সাবেক তত্ত্বাবধারক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এই ব্যয় তার আগের ৬ মাসের (২০১৮ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত) তুলনায় ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা কম। ওই সময় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় করেছিল ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

বর্তমান বিশ্বে টেকসই উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে সিএসআর ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সিএসআর হলো এক ধরনের ব্যবসায়িক শিষ্টাচার বা রীতি যা সমাজের প্রতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনকে ব্যবসার নিয়মের মধ্যে অর্ন্তভুক্ত করে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত কার্যক্রমের ফলে উদ্ভূত নানারকম পরিবেশগত বিরূপ প্রভাব দূর এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে বিদ্যমান ক্ষোভ, অসমতা ও দারিদ্র্য কমানোই সিএসআর এর উদ্দেশ্য।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০০৮ সালের জুন মাস থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সিএসআর মূলধারাকে অন্তর্ভুক্ত করে সিএসআর কার্যক্রমে অর্থ ব্যয়ের দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। তখন থেকে সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে বিভিন্ন খাতে লভ্যাংশের ২ শতাংশ টাকা ব্যয় করে আসছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

সিএসআর-এর টাকা ব্যয়ে ব্যর্থ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো
১. অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানি লি.
২. বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লি.
৩. সিএপিএম ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড ফাইন্যান্স লি.
৪. এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি.
৫. ফার্স্ট ফাইন্যান্স লি.
৬. ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাক্চার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি লি.
৭. ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি.
৮. লংকান অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্স লি.
৯. মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি.
১০. ন্যাশনাল ফাইন্যান্স লি.
১১. ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লি.
১২. পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লি.
১৩. প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লি.
১৪. রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লি.
১৫. ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লি. এবং
১৬. ইউনাইটেড ফাইন্যান্স লি.।

জানা গেছে, দেশের নন-ব্যাংকিং খাতের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের সংকট বাড়ায় তাদের ঋণ দানের সক্ষমতা কমে আসছে। ইতোমধ্যে নানা সংকটে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পারায় অবসায়ন (লিকুইডেশন) করা হয়েছে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে। আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে ঝুঁকিতে।