নানা সংস্কারের পর মুসল্লীদের জন্য নামাজ পড়ার জায়গা বহুগুণে বাড়ানো হয়েছে। আনা হয়েছে আরও কিছু টুকিটাকি পরির্বতন। তারপরও মুঘল আমলে তৈরি সাতগম্বুজ মসজিদের মূল স্থাপনাটি এখনও অবিকৃত, অমলিন।
টেকসই মুঘল স্থাপত্যে নান্দনিক নির্মাণ শৈলিতে তৈরি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত এ মসজিদটি যেমন আধুনিক স্থাপত্যবিদ্যাকে চ্যালেঞ্জ জানায়; তেমনি পাঁচওয়াক্ত নামাজে মুসল্লীদের পদচারনায় জমজমাট থাকে পুরো মসজিদ চত্ত্বর। বর্তমানে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত হচ্ছে।
জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়াসহ বিভিন্ন গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী, ১৬৮০ সালে মোগল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর আমলে তার পুত্র উমিদ খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করান। মসজিদটি লালবাগ দুর্গ মসজিদ এবং খাজা আম্বর মসজিদ এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
মসজিদটির ছাদে রয়েছে তিনটি বড় গম্বুজ এবং চার কোণের প্রতি কোনায় একটি করে অনু গম্বুজ থাকায় একে সাতগম্বুজ মসজিদ বলা হয়। এর আয়তাকার নামাজকোঠার বাইরের দিকের পরিমাণ দৈর্ঘ্যে ১৭.৬৮ এবং প্রস্থে ৮.২৩ মিটার। এর পূর্বদিকের গায়ে ভাঁজবিশিষ্ট তিনটি খিলান এটিকে বেশ আকর্ষণীয় করে তুলেছে। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে। দূর থেকে হালকা গোলাপি মসজিদটি অত্যন্ত সুন্দর দেখায়।
ঢাকার খাজা শাহবাজ মসজিদ ও মুসা খান মসজিদের মতো এ মসজিদের কর্ণার গম্বুজগুলোতে ছোট মিনার বিদ্যমান। দ্বিতল বুরুজগুলি নিজেরাই এক একটি স্বতন্ত্র ভবনের মতো। নিচের তলায় উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিম অক্ষে চারটি খিলানপথ রয়েছে। নিচতলার ছাদটি অভ্যন্তরভাগে গম্বুজাকার হলেও এর উপরের অংশ, অর্থাৎ দ্বিতীয় তলার মেঝেটি সমতল। বিস্তৃত পদ্মচূড়া শোভিত গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত দ্বিতীয় তলাটি সামান্য পার্থক্যসহ একেবারেই নিচতলার মতো। নিচতলার মতো চার দিকে চারটি খিলানপথ থাকলেও ছাদের দিকে আর একটি বাড়তি প্রবেশপথ রয়েছে। এই পথ দিয়ে মসজিদের ছাদ থেকে মিনারের উপরের তলে প্রবেশ করা যায়।
মসজিদের ভিতরে ৪টি কাতারে প্রায় ৯০ জনের নামাজ পড়ার মত স্থান রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এর বাইরের অংশে কার্পেট ও চাটাই বিছিয়ে নামাজের জায়গা বৃদ্ধি করায় এক সঙ্গে কয়েকশ মানুষ নামাজ পড়তে পারেন।
মসজিদের নিয়মীত মুসল্লী ষাটোর্ধ বজলুল হক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বিশেষ করে জোহর, আসর এবং মাগরিবের ওয়াক্তে মসজিদের ভেতর এবং বাইরের পুরো চত্ত্বর ভরে যায় মুসল্লীতে।
মসজিদের পূর্বপাশে এরই অবিচ্ছেদ্য অংশে হয়ে রয়েছে একটি সমাধি। কথিত আছে, এটি শায়েস্তা খাঁর মেয়ের সমাধি। সমাধিটি ‘বিবির মাজার’ বলেও খ্যাত। এ কবর কোঠাটি ভেতর থেকে অষ্টকোনাকৃতি এবং বাইরের দিকে চার কোণাকৃতি। বেশ কিছুদিন আগে সমাধিক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল। বর্তমানে এটি সংস্কার করা হয়েছে।
মসজিদের সামনে একটি বড় উদ্যানও রয়েছে। উদ্যানে সবুজ গালিচায় লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ। শীত মৌসুমে সেখানে ফুটেছে অনেক ফুলও।
ইতিহাসবেত্তাদের মতে, একসময় সাত গম্বুজ মসজিদের পাশ দিয়েই বয়ে যেত বুড়িগঙ্গা। মসজিদের ঘাটেই ভেড়ানো হতো লঞ্চ ও নৌকা। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় তা কল্পনা করাও কষ্টকর।
মূল ভবন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে থাকলেও মসজিদটি আসবাবপত্র ক্রয়সহ নামাজ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করা হয় কমিটির মাধ্যমে। এলাকাবাসীর দান থেকে মসজিদে কর্মরত দু’জন ইমাম, এক মুয়াজ্জিন এবং তিন খাদেমের বেতন নির্বাহসহ নামাজ পরিচালনার সব কাজ সম্পন্ন হয় বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান মসজিদটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাজী মো. শামসুল হক।