নানা ভিন দেশি সংস্কৃতির প্রভাবে দেশীয় সংস্কৃতি যখন নাস্তানাবুদ, এই সময় দেশের শীর্ষ দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামনে থেকে এগিয়ে নিচ্ছেন বাঙালি সংস্কৃতিকে। বাঙালির হাজার বছরের কৃতিত্ব তুলে ধরে ভিন্ন রকমের পরিবেশনা দিয়ে তরুণদের উদ্বুব্ধ করছেন তারা। দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার এই ধারায় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক দল সম্প্রতি নতুন এক সাফল্যের ভাগিদার হলো। ‘মিলিটারি ইন্সটিটিউট অফ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কর্তৃক আয়োজিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। একই প্রতিযোগিতায় রানার্স আপ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দল।
গত ২৮ জুলাই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলো বিশ্ববিদ্যালগুলোর দলগত পরিবেশনা ‘রঙমেশালি’। দেশের ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক বাছাইপর্বে উত্তীর্ণ হয়ে মোট ১৪টি দল চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ করে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্বকারী ‘জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট’ তাদের পরিবেশনায় কাওয়ালি, আবৃত্তি, মাইম ও নৃত্য পরিবেশন করে। দলের সদস্য শহীদুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইন বলেন, “দল হিসেবে একসাথে একবারও রিহার্সাল না করে সরাসরি মঞ্চে পরিবেশনা করে চ্যাম্পিয়ন যারপরনাই খুশির ব্যাপার। আসলে এটা সম্ভব হয়েছে প্রত্যেকে নিজ নিজ বিষয়ে নিখুঁত চর্চা করে যাচ্ছে। এদের কেউ একসাথে অনেকগুলো শিল্পের চর্চা করে না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্বকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ’ এদিন মঞ্চায়ন করে তাদের মৌলিক পরিবেশনা ‘১২ মাসে ১৩ পার্বণ’। মূলত ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশের গ্রামবাংলায় বছরব্যাপী যে বিভিন্ন উৎসবমুখর পরিবেশ চলতে থাকে; সেটিই নাচ, গান আর অভিনয়ের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে তুলে ধরা হয় তাদের পরিবেশনায়।
এই প্রসঙ্গে নির্দেশক রাগীব রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, “আমাদের প্রতিটি মৌলিক পরিবেশনার মাধ্যমেই আমরা এদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি দর্শকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করি। আমরা দলগত পারফর্মেন্সে বিশ্বাসী। দলের প্রত্যেক সদস্যই নিজ নিজ জায়গা থেকে তাদের সেরাটা দিয়েছে বলেই আমাদের আজকের এই দলগত সাফল্য।”
প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন চিরকুট ব্যান্ড, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নাট্যপরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম ও শিহাব শাহীন, অভিনেতা হাসান ইমাম, লায়লা হাসান প্রমুখ। ‘এমআইএসটি লিটারেচার অ্যান্ড কালচারাল ক্লাব’এর প্রতিনিধিরা এখন থেকে প্রতি বছর এই ধরণের আয়োজন চালিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, যার মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতিকে তরুণদের মনেপ্রাণে প্রোথিত করার যে লক্ষ্য তা অনেকটাই বাস্তবায়ন হবে বলে তাদের বিশ্বাস।