বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সম্প্ৰতি একের পর এক যে সহিংসতার প্রতিবাদে কানাডার সাস্কাটুন শহরে সমাবেশ করেছে প্রবাসী বাঙালীরা।
নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙতে সাস্কাটুন সার্বজনীন পূজা পরিষদের আয়োজনে শহরের প্রাণ কেন্দ্ৰ সিটি হলের সামনে একত্রিত হন তারা।
এসময় বাঙালীদের একটিই প্রশ্ন ছিল সাম্প্রদায়িক হামলা, উগ্র জঙ্গীবাদ এবং ধর্ম সন্ত্রাস যারা পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে একের পর এক বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বেই তারা কারা? কেন করছে? কি ফায়দা তারা লুটছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে?
ঔপনিবেশিক নিয়ম-নীতির পরিবর্তন না করা, ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগের অসহায় ইতিহাস, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানও একটি নাজুক সীমারেখায়, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে অপরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থা, দলীয় স্বার্থের অপ-রাজনীতি, মৌলবাদের অর্থনীতি গড়ে তুলতে সাহায্য করা, রাষ্ট্র যন্ত্র ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করেনি বাংলাদেশের জন্ম লগ্ন থেকেই এবং সুপরিকল্পিতভাবে স্বার্থানেষী মৌলবাদী মানসিকতাকে লালন করা হয়েছে স্বাধীনতার বিপক্ষের কালো শক্তির সহযোগিতা নিয়ে গত ৪৫ বছর ধরে। এই সকল বিষয়ই দায়ী আজকের সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্মের জন্য।
এই কথাগুলোই প্রতিবাদকারীদের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছিল।
এই মৌলবাদী, প্রতিহিংসা পরায়ণ মানসিকতা থেকে সমাজ কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তা নতুন করে বলবার অপেক্ষা রাখে না। সবার বুকে হতাশা, ধর্মীয় উন্মাদনা ও উগ্র সহিংসতার শিকার হচ্ছে মূলত দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এবং এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা । স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও রাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা না পেয়ে ভিটে-মাটি ছেড়ে দেশ ত্যাগ করছে প্রতিদিন এই মানুষগুলো অথবা ভূমিহীন হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উগ্র মৌলবাদী, জঙ্গী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত হচ্ছে যা এর উন্নয়নকে ব্যাহত করছে, দেশ হারাচ্ছে তার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র।
কিন্তু দেশের আপামর জনসাধারণ নীরব-নিথর হয়ে আছে মৌলবাদের সংস্কৃতিকে মোকাবেলা না করে। নীরবতা সম্মতিতে রূপ নেয় আমরা সকলে জানি। এই নীরবতাই ত্বরান্বিত করছে আমাদের সামাজিক অন্ধকার আর আন্তঃ দ্বন্দ্ব। আমাদের সকলের ভয় জেগেছে আজ মনুষ্যত্বের মরণ দেখে। গুটি কয়েক লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক প্রতিবাদ করছে নিজের নিরাপত্তাকে তোয়াক্কা না করে। আর নীরব নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকা নয়।
সাস্কাটুন এর প্রতিবাদের নেতৃত্ব দানকারী ব্যক্তিদের আহ্বান, আসুন সর্বস্ব দিয়ে সাধ্যমত প্রতিবাদ করি যার যার অবস্থান হতে। সকলের দেয়ালে পিঠ থেকে গেছে, নিজে জাগো অপরকে জাগাও এই বলেই একত্রিত হয়েছিল দেশের অত্যাচারিত মানুষের পাশে।
সাম্প্রদায়িকতার আগুন এবং উগ্র মৌলবাদের বিষবাষ্প প্রবাস জীবনকেও স্পর্শ করতে শুরু করেছে বলে অনেকেই আশংকা প্রকাশ করছিলেন। আরো আলোচিত হচ্ছিলো এমতাবস্থায় পরিবার এবং কমিউনিটির ভূমিকা কি হতে পারে এদের প্রতিহত করতে? সামাজিক প্রতিরোধ কেমন করে গড়ে তোলা যায় , ধর্মের অন্তর্নিহিত মানবিক দিকগুলোকে তুলে ধরে কিভাবে সচেতনতা তৈরী করা যায় এসকল বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল পরস্পরের মধ্যে।
সাস্কাটুন, কানাডা শহরের প্রবাসী বাঙালীরা নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙতে, ধর্মীয় সহিংসতার প্রতিবাদে দেশের সামগ্রিক মৌলবাদের উত্থানে তরুণ সমাজ বিভ্রান্ত, নীরব এবং আত্মমগ্ন কেন তা নিয়েও কমিউনিটি’র সদস্যরা শুধু হতাশাই প্রকাশ করেনি, তাদেরকে কেমন করে মনে করিয়ে দেয়া যায় ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে ছাত্র সমাজের ভূমিকা তা নিয়েও অনেক আলোচনা হয় ।
এমন একটি কঠিন সামাজিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সেদিন প্রতিবাদ শুরু হয় “আমরা করবো জয় ,আমার সোনার বাংলা, কানাডিয়ান জাতীয় সঙ্গীত, তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান গান দিয়ে। আর সাম্প্রদায়িকতা নিপাত যাক বাংলাদেশ মুক্তি পাক , Save our mother, children and land, Respect freedom of speech online and offline, Free Bangladesh from religious racism, Save Atheists and multi faiths, Save Hindus and temple, Hear our voices, Make a multicultural Bangladesh, Love our religious and cultural heritage, Make a multicultural Bangladesh ইত্যাদি পোস্টার প্রদর্শন করা হয়।
ধর্মীয় সহিষ্ণুতা তৈরীর ব্যাপারে ইসলামিক স্কলার এবং আলেম সমাজও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে বলে সকলের বিশ্বাস ও আশা। তবে প্রবাসী বাঙালীর ভূমিকা কি হতে পারে তা নিয়ে আলোচনার জন্য একটি দল গঠন করা হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং কানাডিয়ান সরকার বাংলাদেশের এমন একটি জটিল পরিস্থিতিতে কেমন করে, কতটুকু সাহায্য করতে পারে তা নিয়ে প্রবাসের বাঙালীরা কাজ করতে শুরু করেছে।