টিভি নাটকের পরিচিত অভিনেতা সালেহ আহমেদ গেল কয়েক বছর ধরে রয়েছেন অন্তরালে। নাট্যাঙ্গানের অনেক নির্মাতা, শিল্পী তার খোঁজ জানেন না। চ্যানেল আই অনলাইন চেষ্টা করেছে বরেণ্য এই শিল্পীর খোঁজ নেয়ার। সালেহ আহমেদের স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, রাজধানী উত্তরার মাজার চৌরাস্তা দিয়ে উত্তরখান এলাকায় বাসায় সালেহ আহমেদের দিন কাটছে বিছানায় শুয়ে।
চলাফেরা তো দূরের কথা, তিনি ঠিকমতো উঠে বসে পারেন না এখন। কারণ, কয়েক বছর যাবৎ সালেহ আহমেদ বার্ধক্যজনিত নানান রোগে ভুগছেন। এই শিল্পীর সহধর্মীনি মুসলিমা আহমেদ বলেন: সাতবছর আগে তার ব্রেন স্ট্রোক হয়েছিল। তখন থেকে অসুস্থতা পিছু ছাড়ছেনা। কিছুদিন ভালো থাকে, আবার খারাপ হয়ে যায়। এর পাশাপাশি তার ফুসফুস প্রদাহজনিত সমস্যাসহ বাত সমস্যাও রয়েছে। যে জন্য ঠিকমত হাঁটতে পারেন না। এছাড়া কিডনির সমস্যাও রয়েছে।
বর্তমানে স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারেন না। মুখ দিয়ে লালা বের হয়। বাইরের কোনো মানুষকে তিনি চিনতে পারেন না। অবশ্য কেউ তেমন খোঁজ খবর নেয় না। গেল বছরের মাঝামাঝি সময় সালেহ আহমেদের শারীরিক অবস্থা তুলনামূলক ভালো ছিল। কিন্তু ডিসেম্বরে আবার অবস্থার অবনতি হয়। কারণ, ওই সময় ঠাণ্ডার প্রকট ছিল। ঠাণ্ডা লেগে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
মুসলিমা আহমেদ বলেন: লিভারে পানি জমা ও কিডনির সমস্যা এখন আগের চেয়ে কমেছে। তবে ওনার শরীরে পটাসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে। খাইয়ে দিলে ভাত, পানি খেতে পারেন। ডাক্তারের পরামর্শ মতো সবকিছু চলছে।
সালেহ আহমেদকে তিন থেকে চারমাস পরপর চেকআপ করাতে হয়। তার পরিবার জানায়, রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রানা তার চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে শেষবারের মতো চেকআপ করনো হয়েছে সালেহ আহমেদকে। তবে, শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য দর্শক নন্দিত নাটক ও চরিত্রে অভিনয় করেছেন সালেহ আহমেদ। কিন্তু তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী অনেকেই জানেন না তিনি কেমন আছেন। অসুস্থ অভিনেতা সালেহ আহমেদের খোঁজে শিল্পীদের মধ্যে কেউ ব্যক্তিগতভাবে তাকে দেখতে যায়নি। এমনকি কেউ ফোন করে খোঁজ খবর নেয়না বলেও জানান সালেহ আহমেদের স্ত্রী মুসলিমা আহমেদ।
তিনি বলেন, কয়েকমাস আগে একবার আবদুন নূর তুষার ও নাট্য নির্মাতা জি এম সৈকত সালেহ আহমেদকে একবার দেখতে এসেছিলেন। আর অন্যান্যরা হয়তো সবাই ব্যস্ত। কেউ একবার খোঁজ নেয়ার সময় পায়না। আর সালেহ আহমেদ তো ঠিকমতো কথা বলতে পারেননা, তাই এটা নিয়ে তার কোনো আফসোসও নেই। সবার কাছে ওনার দোয়া চাওয়া ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। আমাদের আর্থিক কোনো সমস্যা নেই। তার ওনার চিকিৎসা ব্যয় ভার বহন করতে কোনো সমস্যা হয়না। শুধু দোয়া চাই, আর কিছু না।
সালেহ আহমেদের স্ত্রী জানান, হুমায়ূন ভাই (লেখক হুমায়ূন আহমেদ) মারা যাওয়ার আগে থেকেই তিনি অভিনয় থেকে দূরে চলে যান। এরপর অসুস্থতা লেগেই থাকে। তিনি অসুস্থ হলে হুমায়ূন ভাই অবশ্য ২০১১ সালে তাকে একবার দেখতে এসেছিলেন। এখন উনি ওনার মতো আছেন। আমাদের পরিবারের সদস্য আছে সাতজন আমরাই তার দেখাশোনা করি। আমার তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে তিন বছর আগে মারা গেছে।
বাকি দুই মেয়ে রয়েছে অবিবাহিত, চাকরী করছে। একছেলে সরকারী চাকরী করছে (জনস্বাস্থ্য বিভাগ)। ছেলের বউ, নাতি এই সবমিলিয়ে আমাদের সংসার। আমরা যেখানে থাকি, সেটা নিজেদের বাসা। ভাড়া দেয়া লাগে না। আমার স্বামীর অসুস্থতা ছাড়া আমাদের আর কোনো সমস্যা নেই। ওনার জন্য দোয়া করবেন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে সালেহ আহমেদের জন্ম। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে চাকরির পাশাপাশি ময়মনসিংহে অমরাবতী নাটমঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই অভিনেতা। স্বাধীনতার আগে বিটিভিতে তিনি নিয়মিত অভিনয় করতেন। ১৯৯১ সালে অবসরে যাওয়ার পর হুমায়ূন আহমেদের নাটকে ও চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। ধারাবাহিক ‘অয়োময়’ নাটক এবং ‘আগুনের পরশমণি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জগতে তার দাপুটে পদচারণা শুরু হয়। এরপর অসংখ্য টিভি নাটক এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি, পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক।