চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সালমা আহমেদের চারটি কবিতা

ভালোবাসি তাই, ভালোবেসে যাই

বটগাছের নীচে বসে আছি,
ঠাণ্ডা লাগছে, চাদর জড়িয়ে আছি
তবুও শীত মানছে না,
অপেক্ষার কষ্ট এতো দুঃসহ জানা ছিল না।
বসে আছি উন্মুখ হয়ে
সামনের রাস্তা দিয়ে কত মানুষ আসছে যাচ্ছে
রিকশাগুলো চলে যাচ্ছে এক গলি থেকে অন্য গলিতে
ঘড়িতে প্রায় এগারোটা বেজে পঁয়ত্রিশ
রোদটারও আজ বেশ তেজ
আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে,
কষ্ট হচ্ছে আমার, ভীষণ একা লাগছে;
আকাশ অন্ধকার হয়ে উঠছে
মেঘ ডাকছে
হয়ত বৃষ্টি নামবে।
ছাতাটাও আনিনি সাথে
আমি কী চলে যাবো?
ও তো খুঁজে পাবে না আমাকে
না পেলে চলে যাবে অভিমান নিয়ে।
না থাক- বসে থাকি এখানে
আরো কিছুক্ষণ দেখি না হয়
বৃষ্টিতে না হয় একটু ভিজবো
তবুও তো ওর সাথে দেখা হবে
ঘড়িতে ১২টা বাজছে
পথে কোনো বিপদ হয়নি তো!
মনটা অস্থির হয়ে উঠছে
ঝড় আসবে।
আমি কী চলে যাবো?
কোনো এক ১২ নভেম্বর শীতের সকালে,
আমি এসেছিলাম অনিবার্ণের জন্য
অনেকগুলো বছর কেটে গেছে এভাবেই।
তবুও আমি আসি
এই দিনে এই সময়ে
এই বটগাছের নীচে।
এসে বসি কিছুক্ষণ উন্মুখ হয়ে
অপেক্ষায় থাকি অনিবার্ণের।

বলেছিলো আসবে
কিন্তু ও আসে না।
ওর এক বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম
অনিবার্ণ বাসা থেকে বের হয়েছিলো সেদিন।
আর বাসায় ফেরেনি
আমার কাছেও আসেনিতো!
হারিয়ে গেছে নাকি নিখোঁজ!
জানি না।
তবুও অপেক্ষায় থাকি
অনিবার্ণ তোমার জন্য
কোনো এক নভেম্বরে
হয়তো তুমি আসবে!
হয়তো তুমি ভালোবাসবে!
হয়তো কাছে আসবে,
ভালোবাসি তাই, ভালোবেসে যাই।

মেঘ বালিকা
চোখ পড়েছে চোখে
মন ছুঁয়েছে তোকে,
পাখির ডানায় চড়ে
নিয়ে যাবো আজ তোকে
মেঘ বালিকার দেশে।

মন পাবনের নাও ভেসে
পালটি তুলে হাওয়ায়,
তুই যে আজ যাবি স্রোতে মিশে
হাতটি ধরে আমার,
নিয়ে যাবো আজ তোকে
মেঘ বালিকার দেশে।

পথে পথে

শুভ্র এক সকাল
শিউলি ঝরা মেঠো পথ,
তুমি আমি দু’জনা মুখোমুখি বসা
তুমি তাকিয়ে আছো আমার চোখে
আমিও দেখছি তোমায়!
আমার গালে আলতো তোমার মায়া
আমার চোখের পাঁপড়িগুলো কাঁপছে
শিউলি ফুল ঝরছে আমার চুলে
তোমার ভালোবাসার স্পর্শ আমার কপালে
ছড়িয়ে যাচ্ছে সবখানে সেই ছায়া,
শিউলি ফুলের গন্ধে
আমরা বিভোর দুজনাতে,
কখন যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল এলো
খেয়ালই করিনি,
ভালোবাসার গন্ধ পুরো ঘর জুড়ে
কখনো কীভাবে ভালোবাসা শুরু জানি না;
শুভ্র শিউলি ফুলের মাঝে
দুজনার গোপন ভালোবাসার মাখামাখির গল্প
আজ স্বপ্ন ছড়ায় মানস পটে।

পূর্ণিমার আঁধার !

যদিও ভালোবাসার কেউ নেই,
ভালোবাসা আমাদের দুয়ারে খেলা করে
একফোঁটা রোদ্দুর নিয়ে,
যেমন বিস্মিত হামাগুড়ি দেয়া শিশু,
কার্তিকের মাঠে দিগন্ত বিস্তৃত সোনালী ধানের ক্ষেতে নির্জনে একা হেঁটে যেতে যেতে ভাবি –
ভালোবাসা আমাদের পিছু ছাড়ে না,
গভীর অন্ধকারে, আকাশ ভরা তারার পানে চেয়ে,
নির্লিপ্ত সেই দীর্ঘশ্বাসে
একবার জানতে চেয়েছিলাম,
কবে, কখন দেখা হয়েছিলো, ভালোবাসার সাথে।