টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১শে মার্চ। নির্বাচনী দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে ততোই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নির্বাচনী পরিবেশ। এ উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে বিএনপি’র একক প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের সবকটিতেই রয়েছে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী।
নিবাচনী পরিবেশ নিয়ে প্রার্থীদের একে অপরের প্রতি ছোটখাট অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ থাকলেও এ উপজেলায় নির্বাচন কার্যক্রম চলছিলো শান্তিপূর্ণভাবেই।
তবে গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার ফলদা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধুবলিয়া গ্রামের পূর্বের বিবাদমান দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘটিত হামলা, দোকানপাট ভাংচুর ও আহতের ঘটনা এবং এক পক্ষকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা বিড়াজ করছে।
আর এ ঘটনায় হতবিহব্বল ক্ষতিগ্রস্থ বৃদ্ধ আবেদ আলী কান্নাজড়িত কন্ঠে করে বলেন ‘সারা জীবন নৌকায় ভোট দিছি আর নৌকার লোকেরা আমাকে পথের ফকির বানিয়ে দিল!’
সরেজমিনে জানা যায়, স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই নেতা ধুবলিয়া গ্রামের ময়না গ্রুপ এবং একই গ্রামের ফজল গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে। তাদের এই বিরোধকে কেন্দ্র করে পূর্বে হামলা ও মামলার ঘটনা রয়েছে। সেই ঘটনার রেশ ধরে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তা আবার প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।
ফজলু গ্রুপ আসন্ন নির্বাচনে ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী মজিবর এবং চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাইদুল ইসলাম তালুকদার দুদুর পক্ষ নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে। অপরদিকে ময়না গ্রুপ একই ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আমীর আলী এবং বিএনপি’র চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিমুজ্জামান সেলুর পক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে।
এতে বিবাদমান উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে। বিরাজ করতে থাকে উত্তেজনা। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত প্রায় ১২টার দিকে ফজলু গ্রুপের কাছে খবর আসে ময়না গ্রুপের লোকজন হামলার জন্য ধুবলিয়া গ্রামের সাগরের বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র মজুদ করে রেখেছে। এই খবরে ফজলু গ্রুপের লোকজন হানা দেয় সাগরের বাড়িতে। সাগরকে না পেয়ে তার মাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে চলে আসে।
পরে ফজলু গ্রুপ জানতে পারে সাগর ময়নার বাড়িতে মিটিং করছে। এই খবরে ফজলু গ্রুপ ময়নার বাড়িতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। আর কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে বাদশা, মিলন ও হাফিজুর নামের ৩ জন আহত হয়।
আহতের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ফজলু গ্রুপের সাথে যোগ দেয় মাদারীয়া গ্রামের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইদুল ইসলাম দুদুর লোকজন। পরে তারা রাত ২টার দিকে একত্রিত হয়ে ধুবলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন আব্দুর রহিম মল্লিক, মুক্তার হোসেন, সাগর ও হামেদ আলীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এতে ওই চার প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতির কথা জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থরা।
রাতের উত্তেজনা মঙ্গলবার দিনভর ধরেই চলেছে। বেলা ১২টার দিকে লাঠি-সোটা ও দেশীয় অস্ত্র হাতে আওয়ামী দলীয় প্রার্থী সাইদুল ইসলাম দুদুর সমর্থকদের ধুবলিয়াতে মহড়া দেয়ার ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই এলাকার সাধারণ জনগণ।
দরিদ্র দোকানী আবেদ আলী (৬০) কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। তারা আমার দোকানের প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়া গেছে। আমরা কোন নির্বাচনের কাজের সাথে জড়িত নই। সারা জীবন নৌকায় ভোট দিছি আর নৌকার লোকেরা আমাকে পথের ফকির বানিয়ে দিল!
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফজলু বলেন, ময়না এখন আওয়ামী লীগের কেউ না। সে বিএনপি-জামায়াতে যোগ দিয়েছে। দোকান ভাংচুর বা লুটতারাজের ঘটনা তাদের সাজানো। আমাদের লোকজনের ওপর তারা গত রাতে হামলা করছে। হামলার মামলা থেকে বাঁচতেই এই ধরনের নাটক সাজিয়েছে।
অপর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ময়না বলেন, আমরা জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন প্রচারণায় অংশগ্রহণ না করলেও দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে যাওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। ওই পক্ষ গতকাল রাতে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়িতে হামলা চালায়। প্রতিবেশিরা সেই হামলা প্রতিহত করলে তারা পালিয়ে যায়।
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক জাহিদুজ্জামান জুয়েল বলেন, রাত ৩টার দিকে ৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।
ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ ফজলুল কবির বলেন, আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।