জৈব সুরক্ষা বলয় ভেঙে নামাজের ইমামকে ড্রেসিংরুমে এনেছেন, দল নির্বাচনে দিয়েছেন মুসলিমদের প্রাধান্য, এমন একাধিক প্রশ্ন ও বিতর্ক ওঠায় বিরক্ত হয়ে রঞ্জি ট্রফির দল উত্তরাখণ্ডের প্রধান কোচের দায়িত্বই ছেড়ে দিলেন ভারতের সাবেক ওপেনার ওয়াসিম জাফর।
দলের ক্ষতি করেছেন, সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়েছেন, এমন সব প্রশ্নের কড়া জবাবও দিয়েছেন ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের কিংবদন্তি।
জাতীয় দলের হয়ে ক্যারিয়ার বড় করতে না পারলেও ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে রীতিমত একজন কিংবদন্তি সাবেক ডানহাতি ওপেনার ওয়াসিম জাফর। মাঠের খেলা ছেড়ে কোচিং করাচ্ছেন এখন। বাংলাদেশ হাই-পারফরম্যান্স টিমের ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবেও কিছুদিন কাজ করে গেছেন। পরে দায়িত্ব নেন উত্তরাখণ্ডের প্রধান কোচ হিসেবে।
জাফরের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ আনেন উত্তরাখণ্ড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব মহিম ভার্মা। দলের অধিনায়ক নির্বাচনে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়েছেন জাফর, এমন কথাও আছে বিবৃতিতে।
চাকরি ছেড়ে সংবাদ সম্মেলনে সমস্ত অভিযোগ খণ্ডন করেছেন ওয়াসিম জাফর। সব অভিযোগকে ‘ক্ষুদ্র’ দাবি করে নাকোচ করেছেন।
‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো খুব গুরুতর। আমার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এটা খুব দুঃখজনক। সেই কারণেই এসব কুৎসার বিরুদ্ধে কথা বলতে আমার এখানে আসা। আপনারা তো অনেকদিন থেকেই আমাকে জানেন। আশা করি আমাকে খুব ভালো করেই চেনেন। আমার দিকে ছুঁড়ে দেয়া ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কোনো সাজেসান আমি নিইনি।’
‘যারা সৈয়দ মুস্তাক আলিতে খেলেছে, প্রত্যেককে আমার বিশ্বাসের উপর ভরসা রেখে খেলিয়েছি। শেষ ম্যাচের জন্য সামাদ ফাল্লাকে পর্যন্ত বসিয়েছি। আমি সাম্প্রদায়িক হলে সামাদ ফাল্লা, মহম্মদ নাজিম প্রত্যেকটা ম্যাচে খেলত। তাই না? এটা অত্যন্ত ক্ষুদ্র ব্যাপার। এইধরনের ক্ষুদ্র চিন্তাভাবনা কোনদিন করি না।’
ক্রিকেটারদের জয়শ্রী রাম বা জয় হনুমান না বলা নিয়ে তার নির্দেশ দেয়া নিয়েও বলতে হয়েছে জাফরকে, ‘‘এইরকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আমাদের হাডেলে বলা হত ‘রানি মাতা সাচ্চে দরবার কি জয়।’ কখনো কাউকে আমি ‘জয়শ্রীরাম’ বা ‘জয় হনুমান বলতে শুনিনি বা কাউকে বাধাও দিইনি।’’
‘যদি সাম্প্রদায়িক হতাম, তাহলে কি জয় বিস্তাকে নিয়ে আসতাম দলে। ওকে অধিনায়ক করার সুপারিশও করেছিলাম। নির্বাচকদের মনে হয়েছিল ইকবাল আব্দুল্লাহ বেশি যোগ্য এবং প্রতিভাবান। তাই ওকেই অধিনায়ক করা হয়। বরোদাতে পৌঁছানোর পরে দলকে বলেছিলাম আমরা উত্তরাখণ্ড রাজ্যের হয়ে খেলছি। তাই ‘গো উত্তরাখণ্ড’ ‘লেটস ডু ইট উত্তরাখণ্ড’ ‘কাম অন উত্তরাখণ্ড’ স্লোগানগুলো অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হবে।’
নামাজ নিয়ে ওঠা বিতর্ক নিয়েও কথা বলেছেন ওয়াসিম, ‘মৌলভী যিনি শুক্রবার এসেছিলেন, আমি তাকে ডাকিনি। ইকবাল আবদুল্লাহর দেরাদুনে পরিচিতি রয়েছে এবং মৌলানা সাহেবকে সে-ই ডেকেছিল। যদি সাম্প্রদায়িক হতাম, তাহলে তো সকাল ৯টায় অনুশীলন ডেকে ১২টায় শেষ করে দুপুর ১:৩০টার সময় নামাজ পড়তে যেতাম। তাই না? সাম্প্রদায়িক হলে আমাকে বরখাস্ত করা হতো, তাই না? কিন্তু নিজেই পদত্যাগ করেছি।’
ওয়াসিমের কথা ধরে ইমাম ডাকার বিষয়টি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে খণ্ডন করেছেন উত্তরাখণ্ডের অধিনায়ক ও যুব বিশ্বকাপজয়ী স্পিনার ইকবাল আব্দুল্লাহও, ‘‘শুক্রবারের জুম্মা নামাজ আমরা মৌলভী ছাড়া পড়তে পারি না। আমরা অনুশীলন শেষ করে বিকাল ৩.৪০ দিকে নামাজ পড়তে গিয়েছি। মৌলভী ডাকবো কিনা সেজন্য আমি ওয়াসিম ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন, ‘ম্যানেজারের অনুমতি নিতে।’ ম্যানেজার নভনিত মিশ্রার কাছে অনুমতি চাইতেই তিনি বললেন, ‘আরে এটা কোনো ব্যাপারই না। সবার আগে ধর্ম।’ এরপর আমরা ম্যানেজারের অনুমতি নেই এবং নামাজ পড়ি।’’
মহিম ভার্মার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মৌলভী ডাকায় ক্রিকেটারদের জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝুঁকিতে পড়েছে। যে বা যারা এই কাজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমন অভিযোগের জবাবে ইকবাল আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, দুইবার মৌলভী ডেকে নামাজ পড়েছেন তারা। আর এটা এমন অভিযোগও নয় যে তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ উঠে যাবে, ‘জৈব নিরাপত্তা যদি সঠিকভাবে মানা হতো, তাহলে কী আমরা মৌলভী ডাকতাম? ম্যানেজার যদি না বলতেন, তাহলে আমরা কখনই মৌলভী ডাকতাম না।’
‘ওয়াসিম ভাই সবসময় দলকে আগে রেখেছেন, কখনোই সাম্প্রদায়িক কিছু করেননি। একজন ক্রিকেটার হিসেবে কেউই চায় না তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠুক। ওয়াসিম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি খুবই কষ্ট পেয়েছেন। গুরুতর বিষয়কে ঢাকতেই এসব সাম্প্রদায়িক অভিযোগ তোলা হয়েছে।’