মস্তিষ্কের কিছু বিশেষ অংশ চকোলেট খেলে অথবা লটারি বা টাকা জিতলে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ঠিক একই রকম সক্রিয়তা দেখা যায় কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্কের ওই অংশগুলোতেই যখন তারা সামাজিক মাধ্যমে নিজের বা একই বয়সী পরিচিত বা অপরিচিত মানুষের ছবিতে অনেক বেশি সংখ্যক ‘লাইক’ পেতে পায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস (ইউসিএলএ)-এর একটি গবেষণায় এমন তথ্যই বেরিয়ে এসেছে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের সময় কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে পরিচালিত গবেষণা এটিই প্রথম।
এই গবেষণার জন্য ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সের ৩২ জন ছেলেমেয়েকে জনপ্রিয় ফটো শেয়ারিং অ্যাপ ইনস্টাগ্রামের মতো, তবে তুলনামূলক ছোট একটি সামাজিক মাধ্যমে অংশ নিতে বলা হয়। ইউসিএলএ’র আহম্যানসন-লাভলেস ব্রেন ম্যাপিং সেন্টার-এর গবেষকরা তাদের প্রত্যেককে কম্পিউটারে ১২ মিনিট ধরে মোট ১৪৮ টি ছবি দেখান এবং ভালো লাগা ছবিতে লাইক বাটন ক্লিক করতে বলেন। এর মধ্যে ৪০ টি ছবি ছিল সেই ছেলেমেয়েদের নিজেদের জমা দেয়া।
প্রতিটি ছবির সঙ্গে আবার সেটি কতগুলো লাইক পেয়েছে সেই সংখ্যাটিও দেখানো হয়। অবশ্য লাইকের সংখ্যাটি ছিল ভুয়া, গবেষকদের বসানো। ছেলেমেয়েদের দু’টি দলের কাছে একই ছবির লাইকের সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন দেখিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
ছবিগুলো দেখানোর সময় ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং বা এফএমআরআই-এর মাধ্যমে ওই কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছিল। এফএমআরআই স্ক্যানে দেখা গেল, ছেলেমেয়েরা যখনই নিজেদের ছবিতে বেশি সংখ্যক লাইক দেখছে, তাদের মস্তিষ্কের অনেকগুলো এলাকা সক্রিয় হয়ে উঠছে।
বেশি লাইক পাওয়া ছবিগুলোতে ছেলেমেয়েদের লাইক দেয়ার প্রবণতা দেখা যায় গবেষণায়। আবার সমবয়সীদের ছবি হলে বা সমবয়সীরাও লাইক দিয়েছে – এমন মনে হলেও সেখানে কিশোর-কিশোরীদের বেশি লাইক দিতে দেখা যায়।
গবেষণা দলটির প্রধান এবং ইউসিএলএ’র ব্রেন ম্যাপিং সেন্টার ও চিলড্রেন’স ডিজিটাল মিডিয়া সেন্টারের গবেষক লরেন শারম্যান জানান, এই পরীক্ষায় মস্তিষ্কের সক্রিয় অংশগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল স্ট্রায়াটাম অঞ্চলের নিউক্লিয়াস একামবেন্স নামের একটি অংশ।
সাধারণত মানুষ কোনো ধরণের পুরস্কার পেলে এই অংশটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। নিউক্লিয়াস একামবেন্স উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেশি সংবেদনশীল থাকে। অর্থাৎ নিজে লাইক পাওয়া এবং সমবয়সীদের জনপ্রিয় ছবিতে লাইক দেয়াকে তাদের মস্তিষ্ক পুরস্কার হিসেবে গণ্য করে।