চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সামরিক শাসনের বৈধতায় ধর্ম ব্যবহার করছে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান

মিয়ানমারে গত বছরের সেনা অভ্যুথানের নেতা এবং দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সামরিক শাসনের বৈধতা অর্জনের জন্য বৌদ্ধধর্মের রক্ষক এবং প্রচারক হিসেবে কাজ করছে।

তারই অংশ হিসেবে দেশটিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ ভাস্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সেনাপ্রধান।

যদিও বর্তমানে বৌদ্ধধর্মের প্রচারক এই সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে গত বছর দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, যা বৌদ্ধধর্মের মূলনীতি জীব হত্যা থেকে বিরত থাকার সাথে সাংঘর্ষিক। আর তিনিই এখন বৌদ্ধধর্মের প্রচারণা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

মান্দালয়ের বৌদ্ধ ভিক্ষু আজ্ঞা ওয়ান্তু বলেন, তাদের এই বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারণা হলো লোক দেখানো, তারা বৌদ্ধ না, বৌদ্ধরা কখনো মানুষ খুন করে না। তারা এখন যা করছে, তা বৌদ্ধ ধর্মের ঠিক বিপরীত।

মিন অং এই ৯০ শতাংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর দেশ যা গত ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে সামরিক শাসনাধীন ছিলো তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সামরিক শাসনে বৈধতা অর্জনের জন্য পূর্বের কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করছে।

যার মধ্যে দেশটির উচ্চ স্তরের ভিক্ষুদের সাথে জোট গঠন এবং বুদ্ধের প্রতি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভক্তি সমুন্নত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে সেনাপ্রধান,পাশাপাশি তিনি দেশটিতে সহিংসতাও অব্যাহত রেখেছেন।

অক্টোবর মাসের শেষের দিকে সামরিক বাহিনী দেশটির উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে চীন প্রদেশের থান্টলাং এ আদিবাসী উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে শত শত ঘরবাড়ি এবং হাজার হাজার মানুষকে বাধ্য করেছে দেশত্যাগ করতে।

এই সেনা অভিযানের পরেই মিন অং হ্লাইং দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শন করেন, শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং ভিক্ষা দেন। সেখানে তিনি উচ্চ স্তরের ভিক্ষুদের সরকার নিযুক্ত সংস্থা রাজ্য সংঘ মহানায়ক কমিটির চেয়ারপারসন ভামো সায়াদাউ এর সাথে সাক্ষাৎ করেন।

জনসংযোগের অংশ হিসেবে সামরিক নেতার এই মন্দির এবং উচ্চস্তরের ভিক্ষুর সাথে সাক্ষাৎকারের ঘটনা রাষ্ট্রায়ত্ত সব গণমাধ্যমে প্রায় প্রত্যেকদিন প্রচার করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব পিস এর একটি প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, সেনা অভ্যুত্থানের পর বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি সামরিক শাসকের আনুগত্যতার প্রচারণা চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

পিডাংসু ইনস্টিটিউট ফর পিস এন্ড ডায়ালগের মিয়ানমার প্রতিনিধি সাই থেত নাইং ও বলেন, সেনারা ধর্মকে বেশ চাতুর্যের সাথে তাদের সেলিং পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা জানে জনগণের কাছে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের স্থান সবার উপরে। তাই জনগণকে প্রভাবিত করতে তারা ভিক্ষুদের সাথে সাক্ষাৎ এবং বৌদ্ধ ধর্মকে ব্যবহার করে যাচ্ছে।

এছাড়া ২০২০ সালে নভেম্বরে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির নেতা অং সান সুচি এবং তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) ক্ষমতাচ্যুত করার পর সেনাবাহিনী যথেষ্ট বিরোধিতার সম্মুখীন হয়।

এর পরেও দেশের কট্টরপন্থী বৌদ্ধ মতবাদে বিশ্বাসী ভিক্ষুদের সাথে দেশের বাইরের নানান কূটনৈতিক ভ্রমনে তাদের সঙ্গী করে সামরিক এই শাসক। সেপ্টেম্বরের শুরুতে আশিন উইরাথুকে নামের এক ভিক্ষুকে মুক্তি দেয় সামরিক কর্তৃপক্ষ, যে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী এবং মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত।

এছাড়া সেনাবাহিনী তাদের বিরোধী দলদের বৈধতা নষ্ট করতেও ব্যবহার করছে বৌদ্ধ ধর্মকে। দ্রুত বর্ধনশীল আন্দোলন ঠেকাতে সেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারও চালায় সামরিক বাহিনী।

রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমগুলো প্রচার করে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় দেশটির বিরোধী দলগুলো বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হত্যা করছে নির্বিচারে।

সেনা অভ্যুথানের পূর্বে সামরিক বাহিনী সুচি এবং তার দলকেও বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি যথেষ্ট সহায়ক নয় বলে তুলে ধরে দেশটির জনগণের কাছে। এছাড়া ধর্মযাজকদের সমর্থন পেতে বিরোধী দলেরা অতিরিক্ত উদার এবং ধর্ম নিরপেক্ষ বলে প্রচার করে।

আজ্ঞা ওয়ান্তু বলেন, যদিও সেনাপ্রধান মিন অং অনেক ভিক্ষুর সমর্থন লাভ করেছেন, কিন্তু আমরা অনেক ভিক্ষুই আছি যারা এই সামরিক শাসনের তীব্র বিরোধিতা করি। তাই মানুষ হত্যা এবং নিজ দেশ ত্যাগে বাধ্যকারী এই শাসকের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।