কক্সবাজারের টেকনাফে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকতসহ ১৬ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
রোববার কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘পুুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশনায় কক্সবাজার জেলা পুলিশ তাদের প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করার আদেশ দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকতসহ একজন এসআই, একজন এএসআই এবং ১৩ জন কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
এরআগে শনিবার সন্ধ্যায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলিকে আহ্বায়ক করে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি।
এ ঘটনার বিষয়ে অবহিত হতে চট্টগ্রাম রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি (অপারেশন্স এন্ড ক্রাইম) জাকির হোসেন এখন কক্সবাজার অবস্থান করছেন।
পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, অবসরপ্রাপ্ত একজন সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনার জেরে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। ঘটনার তদন্তের স্বার্থে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলিসহ ১৬ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার করা পুলিশ সদস্যদের ইতিমধ্যে কক্সবাজার পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে নতুন করে আরো ১৬ পুলিশ সদস্যকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর নিহতের ঘটনায় রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশের আগে কিছু বলা সমীচীন নয়। একটি নিরপেক্ষ তদন্তের পরই এ নিয়ে বলা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সাবেক সেনা সদস্য নিহতের ঘটনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি, পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি একং সামরিক বাহিনীর একজন প্রতিনিধি রয়েছেন। তাদের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছি আমরা। তারা বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত প্রকাশের পরই এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো যাবে। এর আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করলে তা তদন্তের ওপর প্রভাব ফেলবে। তাই এখনই এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনা হোক বা যাই বলেন ঘটনা তো একটা ঘটেছে। এটা অস্বীকারের কিছু নেই। সরকার এর সঠিক কারণ খুঁজে সামনে এনে দোষীকে শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর।’
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদের প্রাইভেট কারটি টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তল্লাশি চৌকিতে পৌঁছালে গাড়িটি তল্লাশি করা নিয়ে তর্ক হয়। তখন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ হাত তুলে গাড়ি থেকে বের হওয়ার পর পরই তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী তিন রাউন্ড গুলি করে হত্যা করে বলে স্থানীয়রা জানায়।
মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা রাশেদ খান ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন উপসচিব মো. এরশাদ খানের ছেলে। তিনি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে ২০০২ সালে এইচএসসি পাস করেছিলেন। তিনি গত ৩ জুলাই ঢাকা থেকে তিনজন বন্ধুসহ ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি ট্রাভেল ভিডিও তৈরি করতে কক্সবাজার গিয়েছিলেন। প্রায় এক মাস যাবত তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে শুটিং করছিলেন।