চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘সাফল্য বা ব্যর্থতার নমুনায় কবিতাগুলোকেই সামনে রাখতে চাই’

হিজল জোবায়ের দ্বিতীয় দশকের সবচেয়ে আলোচিত কবি। তার কথাবার্তা, ঠিক তার কবিতার মতোই উজ্জ্বল। কবিকে তিনি শুধু কবিতা-লেখক হিসেবে দেখেন না, একটা আচরণিক সম্পূর্ণতার জায়গা থেকে দেখেন। কবিতার আধার এবং আধেয় তার কাছে সমান গুরুত্ব রাখে।

এবারের মেলায় এসেছে তার দ্বিতীয় বই ‘ধুলা পবনের দেশ’। তার কবিতা, কবিতার বই, কবিতা বিষয়ক বিবেচনা ইত্যাদি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে-

তিন বছর পর বই প্রকাশ করলেন। দ্বিতীয় বার। প্রথম বার আর দ্বিতীয় বারের মধ্যে অনুভবের পার্থক্য কেমন?
প্রথম বইয়ের উচ্ছ্বাস আসলে অনেক অনেক বেশি। সেই তুলনায় দ্বিতীয় বইয়ে তুলনামূলক নিস্তরঙ্গ একটা অনুভূতি। প্রথম বইয়ের আবেগ যেন দ্রুত ধাবমান একটা রণতরী, আর দ্বিতীয়তে মনে হচ্ছে দীর্ঘ যাত্রাপথে দুলকি চালে চলতে থাকা মালবোঝাই এক জাহাজ। প্রথম বই করার সময় লেখক চারপাশে একটা বিশাল কম্যুনিটি ফিল করে। কিন্তু দিন যেতে যেতে সে একা হতে থাকে। এই একাকীত্বে অভিযোজিত হতে পারলেই পরবর্তীতে যথার্থ নিবেদন। ধ্যান দিয়ে সাহিত্য করা যায় আসলে। এই স্তর পার হবার একটা চ্যালেঞ্জ মনে হয় দ্বিতীয় বই বের করতে করতে লেখক অনুভব করে।

কবিতা প্রসঙ্গে যাবার আগে প্রকাশনা নিয়ে কথা বলা যাক। অনেক সময়ই এই অভিজ্ঞতা সুখের হয় না। ‘আদিম পুস্তকে এইরূপে লেখা হয়েছিল’ বের হয়েছিল চৈতন্য থেকে। ‘ধুলা পবনের দেশ’ এলো মেঘ থেকে। এই দুই প্রকাশনার অভিজ্ঞতা যদি বলতেন…
আমার অভিজ্ঞতা ভালোই। টুকটাক খারাপ লাগা থাকে, সেগুলি উল্লেখ না করাই ভালো। বরং আমি সৌভাগ্যবান যে, আমার দুই প্রকাশকই আমাকে যথার্থ আন্তরিকতা, মর্যাদা উপহার দিয়েছেন। তাঁরা নিজেরাই আমার বই করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাদের যথা সর্বস্ব শ্রম দিয়েছেন বই নানা যায়গায় পৌঁছাবার ব্যাপারে। প্রোডাকশন আরও ভালো হইতে পারতো। ভালোর তো শেষ নাই।

প্রকাশনী বদলাবার কারণ সম্ভবত ভেরিয়েশন ট্রাই করার মানসিকতা। মনে হচ্ছিলো নিজেকে একটু ছড়িয়ে দেই নানা জায়গায়। চৈতন্য সিলেটবেজড, মেঘ ঢাকা বেজড। আর আমার আসলে একেবারে দোকানদার টাইপের প্রকাশকের কাছ থেকে বই করতে ইচ্ছা করে না। যাদের সাহিত্যের ব্যাপারে দরদ আছে, শুধু ব্যবসা না, কন্টেন্টকে গুরুত্ব দিতে জানে সিরিয়াসলি, তাদের কাছে আমি সহজবোধ করি। সেই জায়গা থেকেই রাজীব এবং শাহীন লতিফের ব্যাপারে আমার আগ্রহ। কেননা তাঁরা দুইজনই কবিতাকর্মী। একেবারে বাংলা বাজার ঘেঁষা প্রকাশকদের ব্যাপারে আমি কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ করি। নিরাপদবোধ করা যায়, আস্থা রাখা যায় আসলে তেমন প্রকাশনী আমাদের এখানে প্রায় নাই-ই বলা চলে। তবুও তুলনামূলক নিজের মতো করে একটা স্বস্তি আমি পেতে চাই।

আগের বইটার নাম ‘আদিম পুস্তকে এইরূপে লেখা হয়েছিল’ এবার ‘ধুলা পবনের দেশ’। দু’টাই যেন একটু মলিন দৃশ্য দেয়। বাদামি। অনেকটা ধূসর পাণ্ডুলিপি যেমন। এমন নাম কেন বেছে নিলেন?
‘ধুলা পবনের দেশ’ এই নামকরণের ভরকেন্দ্র আসলে এক উষর সময়। অনুর্বর, নিষ্ফলা যা। বাংলা বলতেই যেমন সবুজ, শ্যামল, শস্য আর নদীর নিসর্গ সম্বলিত একটা স্বর্গীয় ভূ-খণ্ড আমাদের সামনে ভাসে, বাংলা শুধু তাই নয়, সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলেও আমরা দেখতে পাবো বাংলাদেশের হোক কিংবা বৃহত্তর বাংলা ভূখণ্ডেরই হোক আছে এক ধুলা ওড়া নিষ্ফলা প্রান্তরের ল্যান্ডস্কেপ। ‘হুমায়ুন কবির’র ‘বাঙলার কাব্য’ প্রবন্ধটাতে বাংলার এই রূপটা আমরা আঁচ করতে পারি। এই রূপটা আজকে শুধুমাত্র ভৌগোলিক বস্তুজগতেই বিরাজমান যে তা না। বরং রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রেই আমাদের চলমান বাস্তবতার মধ্যে এই উষরতার আধিপত্য দৃশ্যমান।

দৃশ্যমান পুড়ে যাওয়া, খাক হওয়া এক তমসাঘন সময়, যা মারীর মতন ছাড়িয়ে গেছে আমাদের পূর্বেকার সবুজ-শ্যামল বাংলার ধারণাকে। শস্য শ্যামল বাংলা আজ কেবল এক ‘ইউটোপিয়া’। ‘ধুলা পবনের দেশ’ যুগপৎ এই দুইটি বাস্তবতাকেই অ্যাড্রেস করতে চায়। আবার এই এখানেই বাতাসে উড়তে থাকা ধুলার ঘূর্ণির ভেতর আছে এক গেরুয়া, মরমী সৌন্দর্য, যা হয়তো আমাদের উষর লোকালয়ে, উষর সমকালে কোনো এক উপশমের ইশারাচিহ্ন হয়ে আছে।

আর আমার প্রথম বই ‘আদিম পুস্তকে এইরূপে লেখা হয়েছিল’-তে আমি আপাত কাল পরিসরহীন এক অখন্ড মানবের ছবি নির্মাণের চেষ্টা করেছি। মহামানবের মহাজীবনের আদিম আর মৌল প্রবৃত্তি, প্রবণতাগুলিকে স্পর্শ করতে চেয়েছি। গহনতমসায় মোড়া দুর্বহ যে ‘অস্তিত্ব’ তার যন্ত্রণা, সংগ্রাম, ক্লেদ আর গ্লানি, আবার তাকেই বারবার ডিঙাবার যে অন্তর্গত শক্তি তার সন্ধানের চেষ্টা ছিল। মহাকালে ‘অস্তিত্ব’ নশ্বর কিন্তু অবিনশ্বরতার জন্য তার লড়াই-ই অবিনশ্বরতা! সেই শক্তিতেই ঈশ্বরের বিপরীতে দাঁড়ায় আর এক পৌরাণিকপরা-ঈশ্বর। তার সন্ধান ও ঘোষণা ছিল ‘আদিম পুস্তকে এইরূপে লেখা হয়েছিল’ কাব্যগ্রন্থে। মানুষেরই ভেতর থেকে অবিনাশী মানুষের উত্থান আর তাকেই আমি উত্তোলিত করতে চেয়েছি মহাপৃথিবীর দিকে। সে পথ দোজখের অন্ধকারে ছাওয়া। আর তারই কোনো এক ঘুলঘুলিবাহিত একটা আলোর রেখা, ওটুকুই হয়তো অস্তিত্বের অপভ্রংশ। অস্তিত্ব! এই দুইটা বাস্তবতা টাচ করতে এই দুইটা নামকে আমার বেশ প্রতিনিধিত্বশীল মনে হওয়ায় এগুলাই ফাইনাল করি।

তিন বছর পর বই প্রকাশ। প্রথম বইয়ের কবিতা থেকে এই বইয়ের উত্তরণের জায়গাটা কেমন করে দেখেন? কেমন কবিতাগুলো?
উত্তরণ, অধপতন এভাবে দেখার ভেতর একটা গলদ থেকে যাবার সম্ভাবনা আছে। আমি বরং ‘পরিবর্তন’ বা ‘রূপান্তর’ শব্দ দিয়ে এটাকে দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবো।

দুইটা বইয়ে কোন জায়গাগুলিকে আমি ছুঁয়ে আসতে চেষ্টা করেছি সেটা আগের প্রশ্নের উত্তরেই প্রায় বলা আছে। আসলে ‘আদিম পুস্তকে এইরূপে লেখা হয়েছিল’-তে একটা বিস্তৃত কালপরিধি নিয়ে কাজ করার পর, ‘ধুলাপবনের দেশ’-এ আমি সেই বিচরণশীল পরিধিকে সুচিন্তিতভাবেই পরিবর্তন করে, পূর্বেকার প্রোফেটিক, বিবলিকাল নায়ককে সাধারণ মানুষ-নায়কে রূপান্তরিত করতে চেয়েছি। এই রূপায়নের মাঝে একটা ক্রমহ্রাসমান নিম্নগামী অন্বয় আছে। অন্তর্গতভাবে লৌকিক আর লোকাতীতের একটা যোগসূত্র আছে দুই বইয়ের মাঝে। আমার মতে ‘সিসিফাস’ আর ‘ডিডেলাস’ একজনই, একই সত্তার দুই অভিক্ষেপ। উড়তে যেয়ে মরে যাওয়া সিসিফাস আসলে একলোকাতীত যাত্রা আর বেঁচে যাওয়া ডিডেলাস সেই সত্তারই এক লৌকিক যাত্রা। মিথ, পুরাণ এসবের চরিত্রগুলি খেয়াল করলেই দেখা যায় যুগপৎ এই দুই অভিক্ষেপ বহন করছে। সেই মিথের দুনিয়া, রূপকের দুনিয়া থেকে কোনো মানুষের মুক্তি নাই, কেননা আমরাই আসলে মিথ, আমরাই রূপক। আমিও এই আপাত বাইনারির অভিব্যক্তি। দুই বইয়ে ডিডেলাস আর ইকারুসের বিপরীতমুখী, অথচ একই সত্তার অভিক্ষেপ যা, সেই দুই যাত্রাপথের নিশানা আঁকার চেষ্টা আছে। এই সূত্রে বই দুইটাও পরস্পর সম্পর্কিত।

দুই বইয়ের রূপান্তরের যেমন একটা অন্বয় আছে। সেইসাথে দুই বইয়েরই শুরু থেকে শেষের কবিতা পর্যন্ত আছে এক কেন্দ্রীয় নায়কের ধারাবাহিক যাত্রার অন্বয়। সেই সুতা ধরে পাঠ করলে মনোযোগী পাঠকের জন্য আরও কিছুটা সুবিধা হতে পারে। তাতে করে হয়তো বইয়ের ভাব-সংহতির একটা কূলকিনারা মিললেও মিলতে পারে।

এই কবিতাগুলোর সাথে আগের বইয়ের কবিতার সম্পর্ক অভ্যস্ততা এবং নির্মাণের চ্যালেঞ্জগুলো কী ছিলো? সহজ করে বললে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ব্যাপারে…? 
সাদৃশ্য, বৈসাদৃশ্যের কথাই আসলে এতক্ষণ বলা হল। আমি খুব সচেতন ভাবেই চাইনি দ্বিতীয় বইয়ে প্রথম বইয়ের ভাব, আবহ, ভাষা বিন্যাসকে টেনে নিয়ে যেতে। আমার বই থেকে বইয়ে এক ধরনের শিফটিং পছন্দ করি। একই জগতের পুনরাবৃত্তি, ইলাস্টিসিটি আমার রুচিতে খুব স্বস্তিদায়ক লাগে না। ফলে প্রথম বইয়ের পর দ্বিতীয় বইয়ে আরেকরকম ভাবসংহতি নির্মাণের চ্যালেঞ্জটা ভয়ংকরভাবেই ছিল। নিজের সিগনেচারটাকে রেখে নিজেকে আরেকভাবে নির্মাণের একটা চেষ্টা, যাতে আমার নিজস্ব স্বতঃস্ফূর্ততা, সক্ষমতা, উৎকর্ষ সবকিছুকেই নিজের রুচি অনুযায়ী উতরে নিতে হয়েছে। একটা সমর্থন পেতে হয়েছে নিজের কাছ থেকেই, যেন শিফটিংটা অকাজে না যায়। এই জার্নিগুলি করতে হয়েছে মুহুর্মুহু। শেষমেশ আমার মনে হয়েছে যে ‘ধুলা পবনের দেশ’-এ যে রিয়ালিটিটা আমি এক্সপ্লোর করতে চেয়েছি এটাকে সমর্থন দেয়া যায়। একটা ভাবসংহতি মনে হয় দাঁড়িয়েছে।

আপনাকে বেশ ফর্ম সচেতন মনে হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। ছন্দ বিষয়ে বলতেও দেখা গেছে। তো এই বইয়ে আপনার এই সচেতন কবিত্ব কেমন করে হাজিরা দিয়েছে? ফর্মের দিকে নজর দিতে গিয়ে কতটা কম্প্রোমাইজ করতে হয়েছে কনটেন্টের সাথে?
দেখেন, আধার আর আধেয় আলাদা ব্যাপার না আমার কাছে। আমরা এক ধরনের জেনারালাইজাশন করে ফর্ম আর কনটেন্টকে আলাদা করে দেখি। কিন্তু ফর্ম আর কন্টেন্টের একটা মিলনবিন্দু আছে, যেখানে এই দুইটা আসলে এক হয়ে যায়, ফর্মই কন্টেন্ট, কন্টেন্টই ফর্ম সেই জায়গাটা রিচ করতে চেষ্টা করেছি। এবং আমি এই রিয়ালাইজেশনে পৌঁছেছি যে, এরা একই। ফলে আমাকে কোনো কম্প্রোমাইজ করতে হয়নি। মানুষ প্রথম জীবনে খুব মেকানিকালি বর্ণ চিনতে শেখে, শব্দ শেখে, বানান করে করে, অর্থ জানে, মুখস্থ করে, সেই শেখাটাই পরবর্তীতে স্বতঃস্ফূর্ততা হিসেবে ধরা দেয়, আপনি বা আমি আজকে আর কথা বলার সময় সেই মেকানিকাল  প্র‌্যাকটিসটার কথা ভাবি না, আমরা জানি যে আমরা এখন স্বতঃস্ফূর্ত ভাষা ও ভাব ব্যবহারের প্রশ্নে। কিন্তু এখানে আসার প্রক্রিয়াটা মেকানিকাল। শিল্পীকে যেভাবে ফিগার প্র‌্যাকটিস করার ভেতর দিয়েই বিমূর্ত চর্চার সমর্থন আদায় করতে হয়, এটা সেরকম। ফলে আপনি অযুক্তিতেও পৌঁছাতে পারেন, যুক্তিই আপনাকে সেখানে নিয়ে যাবে, বাট আপনি জন্ম থেকেই অযুক্তি নিয়ে বলছেন, বিমূর্ততার কথা বলছেন, অব্যাখ্যাত কিছুর কথা বলছেন, এগুলা আসলে এক ধরনের ফাঁকি। যে যুক্তি, ব্যাখ্যা নিয়ে কাজ করে, তাঁর ব্যাখ্যাতীত কোন টেক্সটে মনযোগী হবার অনেক বেশি অথরিটি তৈরি হয়। এবং তাঁর কাবিলিয়াতের ব্যাপারে অনেকবেশি ভরসা রাখা যায়। যে এসবের তোয়াক্কা না করে জন্ম থেকেই ব্যাখ্যাতীত, দিব্য তার চেয়ে।

দুই চারজন উল্লেখযোগ্য ব্যতিত বাংলাদেশের কবিতায় বিগত ৩০/৪০ বছরে এই ধরনের চিন্তার ক্রমাগত বাড়বাড়ন্তে আমরা ক্লান্ত। আমরা একটা বন্ধুমহল চেয়েছি এখান থেকে কবিতা ফিরুক, অনেক গঠনমূলক হোক আমাদের প্রচেষ্টাগুলি, ডিসিপ্লিনড হোক, চিন্তার চর্চা হোক নতুন প্রজন্মের লেখকদের দ্বারা। কবিতা একক কোনো বিষয় না, এর সাথে নিজের ভাষা, সুর, রাজনীতি, সংস্কৃতি সবকিছুর একটা যোগ আছে। সেই যোগগুলি নতুন করে পুনরাবিষ্কার করতে আজকের বাংলাদেশের কবিতাকে সাহায্য করতে পারে, ছন্দ, ফর্ম, যুক্তি, ফিগার এসব। ভাবালুতায় ভেসে যাওয়া, তথাকথিত ভাষা বা ভাবের মুক্তি (?), আবেগের গাদ এসব থেকে কবিতা ফিরুক। সেই চাওয়া থেকে আমরা ছন্দ নিয়ে অনেক কথাবার্তা বলার চেষ্টা করেছি। ছন্দ নিয়ে অভিনিবেশ তৈরি হলে, ধারাক্রমে লেখকের মধ্যে অন্যান্য বিবেচনাগুলো দানা বাধার সুযোগ তৈরি হবে বলে আমাদের মনে হয়। ছন্দ একটা উছিলা শুধুমাত্র সেই যাত্রাপথের। আমরা প্রাথমিকভাবে একটা উছিলাতেই জোর দিয়েছি। কিন্তু এটা একটা মাত্র বিষয় না। চোরকে যেমন চুরি ছাড়তে না বলে, বলা হয় চুরি করো, শুধু মিথ্যা বল না। আর দেখা যায় একদিন সে আর চুরি করে না, কারন মিথ্যা না বললে সে ধরা পড়ে যায়, অসফল চোরে পরিণত হয়। এভাবেই মিথ্যা না বলা তাকে চুরি ছাড়ায়। আমরা এভাবেই ছন্দকে হাজির করতে চেয়েছি। আমি প্রত্যাশা করি আমাদের সময়ের লেখকরা এইসব নিয়ে আরও গভীর পর্যবেক্ষণ তৈরি করুক নিজেদের ভেতর। ছন্দ এমন এক ভাষাকাঠামো খুঁজে পেতে হেল্প করে, যেটা কবির নিজস্ব স্বর খুঁজে পেতে অনেক বেশি সহায়ক, কার্যকরী। আমরা এভাবে ভেবে কী করতে পারলাম এ যাবৎ? আমাদের সাফল্য বা ব্যর্থতার নমুনা হিসেবে আমরা আমাদের কবিতাগুলোকেই সবার সামনে রাখতে চাই।

কবি হিসাবে আপনি এই দায় হয়তো বহন করেন না। তবু পাঠক, মানে যাদের জন্য প্রকাশ, তারা কেমন করে আপনার কবিতার সাথে রিলেট করে? কাদের জন্য লেখেন বা কারা আপনার পাঠক?
এটা আসলে আমি জানি না। কবিতা আসলে এমন একটা দৃষ্টিভঙ্গি যে এটা পাঠক বলে যা প্রচারিত আমাদের সমাজে সেই পাঠক লাভ করা বা না করায় এর কিছু যায় আসে না। কবি হয়তো সাধুসঙ্গ করতে চায়। আরেক সাধু খোঁজে, যার সাথে তার চিন্তার হৃদ্যতা তৈরি হবে। তেমন সাধু-পাঠক পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। জীবনে করাঙ্গুলিগণনীয় তেমন পাঠক যে কবে মেলে লেখকের সেটা বলা যায় না। আমি তাদের সন্ধান করতে চাই।

সাম্প্রতিক সময়ে যারা লেখেন, দৃশ্যত তারা আপনার দিকে চোখ রাখে। এটা কেমন উপভোগ করেন? চ্যালেঞ্জ ফিল করেন? কেমন?
না, চ্যালেঞ্জ ফিল করি না, আমি সময়কে অনেক বড় কালপরিসরে দেখতে অভ্যস্ত। সাম্প্রতিকতায় আমি আক্রান্ত নই। কখনও বিরক্তি বিবমিশা আসে সাম্প্রতিকতার অনেক ঘটনার অভিঘাতে। কিন্তু কবিতার প্রশ্নে আমি এভাবে দেখি না। আমাদের সাম্প্রতিকতা থেকে বের হয়ে সমগ্র সাহিত্য-ইতিহাসের ভেতর দিয়ে দেখতে শেখা উচিত। তাহলে নিজের লেখার অবস্থান নির্ণয়ে সুবিধা হয়। এমনিতে আমার লেখাপত্র নিয়ে সামান্য কিছু লোকের আগ্রহ আছে হয়তো। সেটা ভালো লাগে। সেই ভালো লাগাকে আমি চাপহীন, দায়হীন করে উপভোগ করতেই পছন্দ করি।

আপনার বইয়ের সাফল্য কামনা করছি। ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ। অনেক অনেক ভালোবাসা। কবিতার জয় হোক।