সাদামাটা বালিকা মিনা। ১৯৬৪ সালে সবেমাত্র উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী! স্কুল, পড়াশোনার বাইরে একটু আধটু নাচ করেন! অথচ সেই সময়েই প্রখ্যাত পরিচালক সুভাষ দত্তের আবদার, তাকে অভিনয় করতে হবে চলচ্চিত্রে!
মায়ের অনিচ্ছা, কিন্তু বাবার আছে সমর্থন! সেই শুরু। ‘সুতরাং’ দিয়ে! আর পেছনে ফিরতে হয়নি। চলচ্চিত্রের রঙিন দুনিয়ায় পা রেখেই মিনা হয়ে উঠেন কবরী! নতুন নাম, নতুন কাজ, নতুন চ্যালেঞ্জ!
এরপর একে একে হীরামন, সুজন সখী, ময়নামতি, চোরাবালি, পারুলের সংসার, বিনিময়, আগন্তুক সহ জহির রায়হানের তৈরি উর্দু ছবি ‘বাহানা’ এবং ভারতের কিংবদন্তী চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের ছবি ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এ দুর্দান্ত অভিনয় করে একেবারের ঘরের মেয়ে হয়ে উঠেন কবরী। চলচ্চিত্রের মানুষের কাছে ‘মিষ্টি মেয়ে’!
ষাটের মাঝামাঝি থেকে সত্তর ও আশির দশক মাতিয়ে রেখেছেন তিনি। শুধু অভিনয় নয়, চলচ্চিত্র পরিচালনাতেও সুনাম কুড়িয়েছেন কবরী। রাজনীতিতে নাম লিখিয়েও পেয়েছেন সফলতা। একবার হয়েছেন সংসদ সদস্য।
জীবনের বিচিত্র পথচলার গল্প বলে গেছেন তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’ এ। ঢাকাই সিনেমার অন্দর–বাহিরের পাশাপাশি এই শিল্পের ওপর মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী রাজনীতির নানা কথা তুলে ধরেছেন কবরী।
‘স্মৃতিটুকু থাক’ একটি ছবির নাম। তাতে অভিনয় করেছেন কবরী। নিজের অভিনীত ছবির নামটি তিনি কেন বেছে নিয়েছেন বইয়ের জন্য? এমন প্রশ্নের উত্তরে চ্যানেল আই অনলাইনকে কবরী বই প্রকাশের প্রাক্কালে বলেছিলেন, পুরো বইটিই তো স্মৃতি থেকে লেখা। আমার স্মৃতিগুলো পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করেছি। কেউ যদি মনে করেন, এই বইয়ে আমাকে পুরোপুরি খুঁজে পাবেন, সেটা ঠিক হবে না। কারণ অল্প সময়ে বইটি লিখেছি। এই বইয়ে আমার জীবনের অনেক ঘটনাই নেই।
কবরীকে খুঁজে পেতে সিনেমাপ্রেমী বাঙালি পাঠক, দর্শক কতোটা বইয়ে চোখ গুঁজবেন- এটা মুশকিল! তবে এটা ঠিক, কবরীকে খুঁজে পেতে বার বার বাঙালির অজস্র চোখ আরো বহুকাল টেলিভিশন কিংবা সিনেমার পর্দায় সন্নিবেশিত হবে!
রবিবার ঢাকাই সিনেমার ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাত কবরীকে হারানোর এক বছর। গত বছরের এই দিনে ‘দুই জীবন’ এর নায়িকা পাড়ি জমান অনন্তলোকে।
২০২১ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ। করোনায় আক্রান্ত হন ঢাকাই সিনেমার এই সারেং বউ। এরপর ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে পরিবর্তন করা হয় হাসপাতাল। কিন্তু ফেরানো যায়নি এই কিংবদন্তীকে।
তাঁর মৃত্যুতে শুধু শোবিজ অঙ্গন নয়, শোকের সাগরে ভাসে সারা দেশের মানুষ। যদিও চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা এখনও বলেন, শারীরিকভাবে বাংলার কিংবদন্তী অভিনেত্রী কবরী দূরে চলে গেলেও তিনি আছেন বাঙালির হৃদয়ে। তার কর্মে। তার অভিনীত অসংখ্য চলচ্চিত্রে।
তারা মনে করেন, বহুকাল তিনি বেঁচে থাকবেন বাংলা ভাষাভাষি মানুষের মননে। সুতরাং এর জরিনা, রংবাজ এর চিনি, বধূ বিদায় এর মায়া কিংবা সারেং বউ হয়ে। তাঁর মৃত্যুর প্রথম বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁকে ও তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে চলছে আলোচনা। অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী থেকে শুরু করে শোবিজ অঙ্গনের মানুষেরাও স্মরণ করছেন তাঁকে।