আমাদের সাগর ভাই, পরিবারের স্বজন। আমাকে দেখেছেন খুব ছোটবেলাতেই। আমার তাকে মনে আছে “নতুন কুঁড়ি”র শুরুর সময় থেকে। তখন তিনি সদ্য কৈশোরত্তীর্ণ তরুণ। নতুন কুঁড়ির পরিকল্পনা, নানা যোগাড়যন্ত্র, ছোট ছোট প্রতিযোগিদের নানা অভাব অভিযোগ আর আবদার শোনা..কত কাজ সামলাতেন হাসি মুখে। আবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে বসে যখন প্রতিযোগি আর অভিভাবকরা ক্লান্ত, বিরক্ত অবসন্ন তখনও সাগর ভাই হাজির তার মজার মজার কথা নিয়ে আমাদের ক্লান্তি দূর করতেন।
সেই দেখার পর আবার হঠাৎ একদিন দেখা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে, আব্বু আম্মুর সাথে পিঠা খেতে গিয়ে। ঢাকার বিখ্যাত ‘খাবার দাবার’। সবাই এক নামে এই অভিজাত দোকান চেনেন। আমার আব্বু এবং সাংস্কৃতিক জগতের অনেকেরই আড্ডা ছিল সেই খাবারের দোকানে যার স্বত্বাধিকারী সাগর ভাই ও তাঁর পরিবার। সাগর ভাইয়ের কাছেই শুনেছি আমার আব্বুই তার দেখা প্রথম রূপালি পর্দার নায়ক।
শৈশবে সাগর ভাইয়ের বাবার বন্ধু ছিলেন আমার আব্বু। একদিন তাদের বাড়িতে গেলে ভাইয়া ছুঁয়ে দেখেছিলেন একজন নায়ক। তারপর শুধু পর্দাতেই দেখা হয়, কখনো সঞ্চালক সাগর ভাই, কখনো টেলিভিশন অনুষ্ঠানের অভিনব পরিকল্পনা আর পরিচালকের ভূমিকায়। আমি নিজে শিশুদের নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসি। শিশুদের মনস্তত্ত্বের যে নানাবিধ বাঁক, সাগর ভাইয়ের লেখায় সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র জগতের এতো এতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের পরও কীভাবে সাগর ভাই এখনও শিশুদের মন পড়তে পারেন অবিকল! কীভাবে শিশুদের কল্পনাকে ছুঁয়ে দেখতে পারেন সব সময়! তার কিশোরদের জন্য লেখা গল্প উপন্যাসের ভীষণ ভক্ত আমি।
কেউ ভালো নেই, কেউ হয়ত অসুস্থ হয়েছেন সাগর ভাইয়ের কান পর্যন্ত সেখবর পৌঁছতে পারলে হলো। সাগর ভাই একটা না একটা ব্যবস্থা করবেনই। দেখা গেছে কোনো শিল্পী কিংবা তার প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মচারী-কর্মকর্তা কিংবা সাংবাদিক- যে কেউ অসুস্থ হয়ে বা কোনো বিপদে পড়ে তার শরণাপন্ন হয়েছেন অমনি তিনি তাঁর সর্বস্ব দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন তার। এক্ষেত্রে আমি সব সময় দেখেছি সাগর ভাইয়ের সাগর-সম মন।
আমার আব্বুর আশিতম জন্মদিন আমরা করি ২০১৫ সালে তখন প্রকাশনার জন্য লেখা, অর্থ সংগ্রহ, ডকুমেন্টারির জন্য সাক্ষাৎকার দেয়া সব কাজে নিজের বড় ভাইয়ের মতো সাগর ভাইকে পাশে পেয়েছি। অনেক বড় মানুষ সাগর ভাই কতবড় একটি গণমাধ্যমের কর্ণধার তবু তার কাছে কত সহজেই পৌঁছানো যায়। বিপদে আপদে সব সময় মাথায় তার আশ্বাসের হাতটি পাওয়া যায়। সেই সাগর ভাইয়ের আজ জন্মদিন, এই দিনে ভাই আপনাকে বলি আপনার আশেপাশের মানুষদের জন্যই আপনাকে সুস্থতায় দীর্ঘায়ু হতে হবে। আপনার প্রতি আমাদের ভালোবাসা আছে। আপনি আমাদের সকলের ভালোবাসায় আরও অনেক কাল ভালো থাকুন।