মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায় হবে ২৯ জুলাই।
আসামীপক্ষের যুক্তি এবং রাষ্ট্রপক্ষের আরো কিছু বক্তব্য উপস্থাপনের পর রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। অন্য বিচারপতিরা হলেন: বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
শেষ দিনের শুনানিতে সাকা চৌধুরীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট এএসএম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা ঘটনা অস্বীকার করিনি, তবে সালাউদ্দিন সেখানে ছিলেন না বলেছি।কারণ হিসেবে সাকার আইনজীবী বলেন,ভাগ্যবান ব্যক্তিদের ছেলে-মেয়েরা বাংলাদেশে থাকে না। আর সেসময়ের চরম মুহূর্তে ২২ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবক সালাউদ্দিন সেরকম কোনো কিছুতে জড়াতে পারেন না’।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, সেসময় সাকা চৌধুরীর দেশে ছিলেন না এটা বলাটা মিথ্যা। এতো সাক্ষীর সাক্ষ্য ও প্রমাণ থাকার পরও সাকা সেখানে ছিলেন কি না এটা নিয়ে প্রশ্নই উঠতে পারে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, আসামীপক্ষ দণ্ড কমানোর আবেদন করলেও তার দাবি ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ড বহাল রাখার পক্ষে।অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সালাউদ্দিন কাদেরের আইনজীবী বলেছেন তাকে যেনো মৃত্যুদণ্ড না দেয়া হয়। তার দণ্ড যেনো কমানো হয় অর্থাৎ যাবজ্জীবন দেয়া হয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আসামীপক্ষের এমন দাবির বিরোধীতা করেছে বলে জানান তিনি। অ্যাটর্নি বলেন,চারটি অভিযোগে সাকাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিলো, সম্ভাব্য রায়েও তা বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছেন তারা।
তবে অপরাধ সংগঠনের কথা স্বীকার করলেও আসামী দেশে না থাকার বিবেচনায় খালাস পাওয়া বিষয়ে আশাবাদী আসামীপক্ষ।২৯ জুলাই হতে যাওয়া রায়ের ব্যাপারে আসামী পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আশা করি যদি আমাদের বক্তব্য বিবেচনায় নেয়া হয়, বিশেষ করে ২৯ মার্চের পর ঢাকায় না থাকার বিষয়টি যদি আদালত বিশ্বাস করেন সেক্ষেত্রে সালাউদ্দিন কাদের অব্যাহতি পাবেন’।
গণহত্যা, হত্যার ৪ অভিযোগে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল-১। একই সাথে গণহত্যা, হত্যার আরও ৩ অভিযোগে ২০ বছর করে এবং নির্যাতনের ২ অভিযোগে ৫ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় আসামীকে। এর বিরুদ্ধে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আপিল করলে শুনানি শুরু হয় ১৬ জুন। এতে প্রথমে মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত ৯ অভিযোগ, সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং রায় আদালতে উপস্থাপন করে আসামীপক্ষ।
তবে আসামীপক্ষ সময় চাইলে আপিল বিভাগের নির্দেশে প্রথমে দুদিন আইনি যুক্তি উপস্থান করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পরে আসামীপক্ষ তিন দিনে বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করে।
একাত্তরে অপরাধের সময়কালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দেশে না থাকা বিষয়ে দুপক্ষই যুক্তি দেন। উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে সিদ্ধান্ত জানান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ।
এসময় হাইকোর্টের একজন বিচারপতির ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় সাক্ষ্য দিতে চেয়েছিলেন সে সম্পর্কে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। ট্রাইব্যুনালে পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ার যুক্তি খন্ডন করে প্রধান বিচারপতি মুলতবি বিভিন্ন আবেদন নিষ্পত্তির বিষয় তুলে ধরে ওই অভিযোগ নাকচ করে দেন।একজন বিচারপতির সাক্ষ্যদানের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের মতামত তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, আদালত বলেছেন কোনো বিচারপতি যদি সাক্ষী দিতে চাইলে তাকে প্রধান বিচারপতির অনুমতি নিতে হবে এমন কোনো আইন নেই।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ভিত্তিতে রাষ্ট্র ও আসামীপক্ষ কি রায় আশা করেন, তা জানান তারা। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে অন্য মামলায় গ্রেফতার হলেও পরে তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল। কিছুদিন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকলেও পরে কাশিমপুর বিশেষায়িত কারাগারে রাখা হয়েছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে।
এ নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দ্বিতীয় কোনো মামলায় যার তারিখ জানিয়ে দিলেন আপিল বিভাগ। এর আগে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মামলাতেও রায় ঘোষণার জন্য সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করেছিলেন আপিল আদালত।