উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার টাউনসভিলের কাছে রোববার মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬ বছর বয়সে মারা গেছেন অজিদের দুই বিশ্বকাপজয়ী অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। ২০০৪ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর ১৯৮ ওডিআই, ২৬ টেস্ট ও ১৪টি টি-টুয়েন্টি খেলেছেন।
ক্যারিয়ারের বিভিন্ন বাঁকে বিতর্কে যেমন জড়িয়েছেন, সাইমন্ডস তেমনি খেলেছেন স্মরণীয় সব ইনিংসও। বিদায়বেলায় শোনা যাক সেসব মহামূল্যবান ইনিংসের গল্প-গাঁথা।
অপরাজিত ১০৮, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড (১৯৯৪)
১৯৯৪ সালে কুইন্সল্যান্ডের হয়ে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেছিলেন সাইমন্ডস। তখন বয়স সবে ১৯! তরুণ ব্যাটার ম্যাচে ইংল্যান্ডের বাঘা বাঘা বোলারদের সামনে রাজত্ব করেছেন ২২ গজে। ১২৭ বলে অপরাজিত ১০৮ রান করে জানিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্ব ক্রিকেটে আগমনী বার্তা।
১,৪৩৮ রান, কাউন্টি (১৯৯৫)
১৯৯৫ সালে কাউন্টিতে গ্লচেস্টারশায়ারের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন সাইমন্ডস। ক্যারিয়ারের প্রথম কাউন্টি যাত্রাকে রাঙিয়েছিলেন রানবন্যায়। ডানহাতি ব্যাটার সেই মৌসুমে ১,৪৩৮ রান করেছিলেন। অসাধারণ পারফরম্যান্সের পর অদ্ভুত এক প্রস্তাবও পেয়েছিলেন ২০ বছর বয়সী তরুণ। ইংল্যান্ড এ-দলের পাকিস্তান সফরের দলে ডাক পান। লোভনীয় সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি বার্মিংহামে জন্ম নেয়া রয়।
অপরাজিত ১৪৩, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান (২০০৩)
১৯৯৮ সালে ওয়ানডে অভিষেক হলেও প্রথম চার-পাঁচ বছর এ ফরম্যাটে নিজেকে তেমন একটা মেলে ধরতে পারেননি সাইমন্ডস। ২০০৩ বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়া নিয়েও ছিল শঙ্কা। পরে প্রথম ম্যাচেই সক্ষমতা প্রমাণ দেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৮৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া তখন ভীষণ বিপদে। খাদের কিনারা থেকে দলকে পরে একাই টেনে তোলেন। ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ে ১২৫ বলে ১৪৩ রান করে বিশ্বকাপেই ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটি তোলেন। সেই সাথে দলকে পার করান ২৫০ রানের গণ্ডি। ওই বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেমিতেও ম্যাচজয়ী ৯১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ডানহাতি মারকুটে তারকা।
১১২, প্রতিপক্ষ মিডলসেক্স (২০০৪)
২০০৩ সালে প্রথমবার কাউন্টিতে টি-টুয়েন্টি ফরম্যাট নিয়ে আসে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড। নতুন ফরম্যাটে শুরু থেকেই আলো ছড়ান সাইমন্ডস। প্রথম মৌসুমে টি-টুয়েন্টিতে অভিষেক ম্যাচেই ৩৭ বলে ৯৬ রানের অতিমানবীয় ইনিংস খেলেন। কেন্টের হয়ে পরের মৌসুমে আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। মিডলসেক্সের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৩৪ বলে শতকের রেকর্ড গড়েন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৯ বছর সেটিই ছিল টি-টুয়েন্টিতে সবচেয়ে কম বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড।
১৫৬, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড (২০০৬)
ওয়ানডেতে থিতু হতে সময় নিলেও টেস্ট ক্রিকেটে শুরু থেকেই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন সাইমন্ডস। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে ৭২ রান করে নজর কেড়েছিলেন। অভিষেকের দুবছর পর ২০০৬ সালে টেস্ট দল থেকে ছিটকে পড়েন। সেবছর অ্যাশেজের মাঝপথে আবারও দলে ডাক পান। সুযোগটা অবশ্য ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছিলেন। ১৫৬ রানের ইনিংস খেলে দলে শুধু জায়গাই পাকা করেননি, নিশ্চিত করেছেন দলের জয়ও।
১৬২, প্রতিপক্ষ ভারত (২০০৮)
ক্যারিয়ারের প্রায় শেষদিকে ২০০৮ সালে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে নিজের সেরা টেস্ট ইনিংসটি খেলেছিলেন সাইমন্ডস। দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১৩৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। ত্রাতা হয়ে আসেন তিনি। ব্র্যাড হগকে নিয়ে ১৬৩ রানের জুটি গড়ে সামাল দেন বিপর্যয়। পরের উইকেটে ব্রেট লি’র সাথে গড়েন ১১৪ রানের জুটি। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পাশাপাশি ক্যারিয়ারসেরা ১৬২ রান করে মাঠ ছাড়েন। ততক্ষণে ম্যাচ বাঁচানোর রান হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার। প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে থাকলেও শেষপর্যন্ত সেই টেস্ট জেতে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসেও ৬৩ রান করে ম্যাচসেরা হন সাইমন্ডস।
অপরাজিত ১১৭, প্রতিপক্ষ রাজস্থান রয়্যালস (২০০৮)
২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম আসরে ডেকান চার্জার্সে নাম লেখান সাইমন্ডস। সে আসরে সবচেয়ে দামি বিদেশি খেলোয়াড়ও ছিলেন। প্রত্যাশা পূরণ দিয়েছিলেন। তৃতীয় ম্যাচেই হায়দরাবাদের বিপক্ষে ৫৩ বলে ১১৭ রানের অতিমানবীয় ইনিংস খেলেন। যদিও শেষ ওভারের লড়াইয়ে ম্যাচটি হেরেছিল সাইমন্ডসের ডেকানরা।