অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবারের বাজেট পেশ করে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষকে খেপিয়ে তুলেছেন। যারা স্বল্প আয়ের মানুষ, ভবিষ্যতের চিন্তায় তিল তিল করে টাকা সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ হয়, সেই মানুষদের পেটে লাথি মারার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। আর এই বাজেট পেশ করার পেছনে তাঁর কোনো দুরভিসন্ধি আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখার জন্য আমাদের সংসদের সম্মানিত সদস্যদের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
কে জানে, তিনি অন্য কোনো দলকে আগামী নির্বাচনে জয়ী দেখতে চান কি না। অন্য কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর কি না কে বলতে পারে। কিভাবে আওয়ামী লীগ সরকারকে জনরোষে ফেলা যায়, কিভাবে সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতি নাখোশ হয়ে যাবে, কি করলে নিম্ন আয়ের মানুষ বিপদে পড়বে, আর তার প্রতিশোধ হিসেবে ভোটের সময় নৌকায় ভোট না দিয়ে অন্য কোথাও দিবে, সেই চিন্তা থেকেই এবারের বাজেট পেশ করেছেন। তা না হলে যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বাজেটে কিছু ভুলক্রটি থাকলে সংসদে বসেই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। সেখানে তিনি নিজের ইচ্ছেমত রাবিশ থেকে শুরু করে যা ইচ্ছে বলে বেড়াচ্ছেন। আবগারী শুল্ক কমাবেন না, সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমাবেনই, এছাড়া অন্যসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রাখবেন। এসব তিনি কোন দায়িত্ব নিয়ে বলেন?
সংসদে সম্প্রতি তাকে নিয়ে যে ধরণের কথা শোনা যাচ্ছে সেখান থেকেই কথাগুলো মনে এল।
গত ১৯ জুন সংসদে আওয়ামী লীগে’র সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, ‘অর্থমন্ত্রী বাজেট দিয়েছেন ভালো কথা। কিন্তু জনগণের কষ্ট আওয়ামী লীগ মেনে নিতে পারে না। আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করুন। আপনার কিছু কথাবার্তা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। আপনি কম কথা বলেন। বয়স হয়ে গেছে কখন কী বলে ফেলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাজেটে সমস্যা থাকলে দেখা যাবে। আপনি হলমার্ক কেলেঙ্কারির সময় বলেছিলেন, হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকা না। চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকা না, এক লাখ টাকা, টাকা হয়ে গেল? আপনার দায়িত্ব এই সংসদে বাজেট পেশ করা, সংসদে এই ৩৫০ জন সদস্য ঠিক করবে জনগণের কল্যাণে কোনটা থাকবে কোনটা থাকবে না। এটা আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন না। আপনার এই একগুয়েমি ব্যবস্থাটা বন্ধ করেন।’
একইদিন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, ‘মাননীয় অর্থমন্ত্রী কী কারণে কার পরামর্শে এই বাজেটকে নির্বাচনমুখি না করে বরং অনেকটাই বলা যায়, নির্বাচনবিরোধী বাজেটে পরিণত করেছেন। ব্যাংকে জমা টাকার ওপর যে আবগারি শুল্ক ধার্য করেছেন, কী কারণে কার স্বার্থে, কার পরামর্শে এটা করেছেন-আমার বোধগম্য নয়। আমি গতকালকে পেপারে দেখলাম যে বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির জন্য এক হাজার কোটি টাকা সেখানে দেওয়া হয়েছে, তাদের মূলধনের জন্য। আমার জিজ্ঞাসা মাননীয় স্পিকার, কার টাকা আপনি দিচ্ছেন? জাতি এটা জানতে চায়, কী কারণে? যে সকল অযোগ্যতা, দুর্নীতির কারণে তারা ব্যাংকের মূলধন লুটপাট করে খাবে। আর তার টাকা আমাকে দিতে হবে? আমরা ওই টাকা দিতে চাই না।’
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট দিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্বাচনের আগে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন বলে মন্তব্য করেছেন সরকারি দলের আরেক সাংসদ সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। তিনি ‘সঞ্চয়পত্রে সুদের হার না কমানোর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘ঋণখেলাপীদের বিশাল লিস্ট দিচ্ছেন। কই তাদের তো ধরতে পারেন না। ব্যাংকের টাকা পাচার বন্ধ করতে পারছেন না। আর নিম্নমধ্যবিত্তদের ওপর কর চাপিয়ে দিচ্ছেন।’
গত ১৫ জুন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, ‘সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো ঠিক হবে না। তিনি বলেন, ১০ শতাংশ সুদ ধরলেও হবে ১ হাজার কোটি টাকা। এর সুবিধা পাবেন লাখ লাখ লোক। যাঁদের জন্য কোনো সামাজিক নিরাপত্তা নেই, তাঁরা ট্রাকের সামনে দাঁড়াতে পারে না, হাত পাততে পারে না। তাঁদের অনেকে সমাজের জ্যেষ্ঠ নাগরিক। আমরা অনেক শ্রেণীর মানুষকে ভর্তুতি দিই, যাঁরা এটা প্রাপ্য নন। তার চেয়ে বড় কথা, ঋণখেলাপিদের বিশাল বোঝা নিয়ে তোয়াজ করতে পারি, তা হলে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের সামান্য বোঝা নেব না কেন?’
যেখানে নীতিনির্ধারক পর্যায়ের লোকজন এসব কথা বলছেন অর্থমন্ত্রীর ব্যাপারে, সেখানে সাধারণ জনগণের মনে কি অবস্থা জন্ম নেবে, সহজেই অনুমান করা যায়।
১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হলে আবাসন খাত সবচেয়ে হুমকির মুখে পড়বে পত্রিকা মারফত জানা গেল। এখন যে জমির নিবন্ধন ফি ৭৫ হাজার টাকা লাগে, তখন লাগবে সাড়ে সাত লাখ টাকা। এটা তো মগের মুল্লুক ছাড়া আর কোথাও হওয়া সম্ভব না। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রেও পড়বে বিরাট প্রভাব। যার খেসারত দিকে হবে সাধারণ মানুষকেই।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেন সেখানে তাঁর অর্থমন্ত্রী দেশের মানুষকে পথে বসানোর পরিকল্পনা করে ফেলেছেন। তাই মাননীয় সাংসদদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, আপনারা পবিত্র সংসদে বসেই সিদ্ধান্ত নেন এই অর্থমন্ত্রীর পেশ করা বাজেট কোনোভাবেই পাশ করা যাবে না। বিশেষ করে যেসব খাতে সাধারণ মানুষের স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটবে। কারণ আগামী নির্বাচনে এই সাধারণ মানুষের ভোটই আপনাদের লাগবে। আর নির্বাচনে জনরোষ তৈরির বাজেটেরও বিরাট প্রভাব পড়বে। যেটা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত হয়ত চাচ্ছেন।
কে জানে কার মনে কি আছে!
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)