চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সাংবাদিক কাজলের মুক্তি দাবি আর্টিকেল নাইনটিনের

অবিলম্বে বিনা শর্তে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের মুক্তি দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন।

এছাড়াও চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৪৫টি মামলা হওয়ায়, এ আইনকে ভয়ের সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চিহ্নিত করে তা বাতিলেরও দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন: করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার যখন কারাবন্দীদের মুক্তি দিচ্ছে, তখন কাজলকে যে প্রক্রিয়ায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে তার কোন যৌক্তিকতা নাই। খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো ভয়ঙ্কর কোনো মামলার আসামি কাজল নন। তার বিরুদ্ধে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিন্ন যে তিনটি মামলা হয়েছে, তাও কেবল ফেসবুকে মত প্রকাশের জন্য। এসব মামলার অন্তত একটিতে অন্য আসামীরা জামিনে মুক্ত আছেন। তাহলে কাজলকে আটকে রাখার জন্য কেন এতো তোরজোড়?

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন: আর্টিকেল নাইনটিন উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্র ক্রমাগতভাবে সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একের পর এক মামলার মাধ্যমে সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমকে কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে। এই প্রবণতা ভয়ের সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করছে, যা মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম তথা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত। আর্টিকেল নাইনটিন আইনটি বাতিলের দাবি জানায়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়: আর্টিকেল নাইনটিন ২০১৮ সালে সাংবাদিকসহ মত প্রকাশকর্মীদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া ৭১টি মামলার ঘটনা রেকর্ড করে। ২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মত প্রকাশজনিত অপরাধের ৬৩টি মামলা রেকর্ড করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ সংক্রান্ত ৪৫টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশই করা হযেছে গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গত ১ মে ২০২০ তারিখে নরসিংদীতে পুলিশের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আরও বলা হয়: এদিকে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ০৩ মে ২০২০ তারিখের মধ্য রাতে বেনাপোল সীমান্তে উদ্ধারের পর ’পক্ষকাল’ পত্রিকার সম্পাদক কাজলকে বেনাপোল বন্দর থানায় সোপর্দ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তখন তার বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে একটি মামলাও করা হয়। বেনাপোল বন্দর থানা থেকে কাজলকে যশোরে আনা হয় দুপুরের দিকে। পুলিশের গোয়েন্দা শাখা অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পিছমোড়া করে হাতকড়া পড়া অবস্থাতে বিকেলের দিকে তাকে নেওয়া হয় যশোরের আদালতে। বিচারক কাজলকে জামিন দেন। এরপরপরই পুলিশ কাজলকে কোতোয়ালি থানা হাজতে নিয়ে রাখে এবং সন্ধ্যার দিকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। কাজলের আইনজীবী ও পরিবারের অভিযোগ, ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে জামিন আবেদনের সুযোগই তারা পাননি এবং করোনা সংক্রমণের অজুহাতে কারাগারে কাজলের সঙ্গে তাদের দেখাও করতে দেওয়া হয়নি।

বিবৃতিতে ফারুখ ফয়সল বলেন: কাজল নিখোঁজ হওয়ার পর তার পরিবার অপহরণের একটি মামলা করেন। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে কাজল কোথায় ছিলেন, কে বা কারা কেন এবং কোথায় তাকে নিয়ে গেল, কীভাবে তিনি বেনাপোল সীমান্তে এলেন- এসব প্রশ্নের পরিষ্কার জবাব পাওয়াটা এখন জরুরী। কাজল নিখোঁজের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এই সময়ে হওয়া উচিত এবং কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচারহীনতাকে সরকার আসকারা দেওয়ার প্রবণতা যদি অব্যাহত রাখে, তাহলে বাংলাদেশে গণতন্ত্রও হুমকির মুখে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।