নিরাপদ সড়কের জন্য ৯ দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল, এক সপ্তাহ পর তা ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। গতকাল রাজধানীর জিগাতলাসহ একাধিক এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হেলমেটধারী কিছু দুর্বৃত্তের হামলার পর তা ভিন্নতা পায়। নিরাপদ সড়কের দাবির সাথে হামলায় জড়িতদের বিচার এবং নৌ-পরিবহনমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি যুক্ত করে ৩ দফা দাবিতে রোববার মাঠে নামে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী।
কিন্তু তাদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতেও শনিবারের মতো একই কায়দায় দফায় দফায় হামলা চালায় হেলমেটধারীরা। ঘটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও। হামলায় আহত বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করার খবর পাওয়া গেছে। তাদের অনেকের শরীর থেকে রক্ত ঝরতে দেখা গেছে।
শুধু শিক্ষার্থীদের উপরই নয়, এদিন হামলা হয়েছে সাংবাদিকদের উপর, গণমাধ্যমের গাড়িতেও। ভেঙে ফেলা হয়েছে সাংবাদিকদের ক্যামেরা। হামলায় আহত হয়েছেন বার্তা সংস্থা এপি’র ফটোগ্রাফার এএম আহাদ। আরো কয়েকজন সাংবাদিক মারধরের শিকার হন। এই আন্দোলন শুরুর পর এই প্রথম গণমাধ্যম কর্মীরা এমন হামলার শিকার হলেন।
আমরা লক্ষ করেছি, বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর যে আন্দোলন শুরু হয়, প্রথমদিন কিছু যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই আন্দোলন করে আসছে। ওইদিনের পর থেকে গাড়িতে আগুন এবং ভাঙচুরের যে ঘটনা ঘটেছে তা একটি ‘বিশেষ মহল’ করে বলে স্বীকার করেছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী। সেই ‘বিশেষ মহলের’ ইন্ধনেই শেষ দুইদিনে আরো বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটলো।
কিন্তু এই সহিংসতা কারোরই কাম্য নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের সব দাবিই মেনে নেয়া হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যেতে হবে। তারা এটাও দাবি করছেন, এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এমনকি তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢুকে নাশকতাও ঘটাতে পারে। এ কারণেই স্কুল-কলেজে পড়া শিশু-কিশোরদেরকে ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, এই আন্দোলন থেকে সুযোগসন্ধানীরা তাদের সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করবে। সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যেমন সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরও সচেতন থাকতে হবে।
তবে, আমরা মনে করি, এ আন্দোলন যে বার্তা দিচ্ছে সব পক্ষকে তা বুঝতে হবে। একইসঙ্গে আমরা বলতে চাই, সহিংসতা কোনোভাবেই সমাধান নিয়ে আসে না। এ জন্য সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।