প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন দেশে কিংবা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা প্রদান করা হয়। যদিও বাউল শিক্ষায় কিংবা সহজিয়া ধারায় এমন বৃত্তি প্রদানের নজির নেই বললেই চলে। এমনকি বাউল শিক্ষার জন্য পুরো ভারত বর্ষ জুড়ে প্রতিষ্ঠানই রয়েছে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি।
বাংলা সহজিয়া গানের ধারার বিখ্যাত সাধক পার্বতী দাস বাউল অবশ্য বাউল শিক্ষায় প্রচলিত ধারাটি ভেঙেছেন। সম্প্রতি তিনি বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে দিক্ষা দিয়েছেন বাংলাদেশি বাউল শিল্পী মোহাম্মদ মিলনকে।
গেল মে মাসের ২২ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত নিজের আশ্রমে নিয়ে গিয়ে যোগ সাধনা, কণ্ঠশীলন ও ভাববাদের সঙ্গে মিলনকে গভীর ভাবে পরিচয় করে দিয়েছেন তিনি।
সহজিয়া জীবনকে পুরোপুরি জানতে হলে নতুনদেরকে অগ্রজ বাউলের আশ্রমে গিয়ে থাকতে হয়। তবে পার্বতী দাস বাউল মেধা যাচাই এর মাধ্যমে মিলনকে নিজের আশ্রমে দীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির একটি বাউল প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভালো পারফর্ম করায় মিলনকে পুরস্কৃত করেন তিনি। এরপর এ বছরে মিলনকে নিয়ে যান নিজের দেশ ভারতে।
কেমন হলো মিলনের বাউল সাধনা? এমন প্রশ্নের জবাবে মিলন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ভাববাদের যে শাখায় আমি বিচরণ করতে চাই, পার্বতী মা আমাকে তার সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছেন। আমি মায়ের কাছে কৃতজ্ঞ। এতোটুকু দেওয়ার ভাবে কেউ আমাকে বাউল শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দেবেন সেটা কখনোই ভাবিনি আমি। যা ভাবিনি তাই যেন সত্যি হলো।
পার্বতী বাউলের আশ্রমের শিক্ষা প্রসঙ্গে মিলন বলেন, আমি সেখানে যে কয়দিন ছিলাম প্রতিদিন ভোর রাতে উঠে যোগ সাধনা করতাম। সকালে প্রাতরাশ শেষে শুরু হতো কণ্ঠশীলন। এছাড়াও সারাদিন জুড়ে গান ও নাচের সঙ্গে হত বাউল সাধনার বিবিধ ভেদ প্রসঙ্গে আলোচনা। মা খুব চমৎকারভাবে সাধনার এসব গুপ্ত জ্ঞানের সন্ধান দিতেন আমাদের।
মিলনের স্কুলিং প্রসঙ্গে পার্বতী দাস বাউল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বাউল সাধনের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার জাগ্রত মন ও আধ্যাত্মিক বিষয়ে জ্ঞান। তার জন্য এইরকম শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। এটিকে স্কুলিং না বলে বাউল সাধন শিক্ষা পদ্ধতি বলা যায়। এই শিক্ষা পদ্ধতিতে মিলন অনেক ভালো করেছে। সে খুবই গুণী ছেলে। ওকে নিয়ে আরো কাজ করতে পারলে ভালো লাগবে।
বাউল শিক্ষার এই পদ্ধতিটি নিয়মিত চালু থাকবে বলেও জানিয়েছেন পার্বতী দাস বাউল। একই সঙ্গে এই পথ অনুসরণ করে বাউল বাল্য জ্ঞান হৃদয় নামে নতুন একটি প্রোগ্রামও শুরু হবে।
তিনি জানান, এ মাসের ১৯ তারিখ থেকে গ্রামের বাচ্চাদের জন্য প্রতিমাসে গান, নৃত্য, যোগ ব্যায়াম, নাটক এবং প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষি ও যোগিক পুষ্টিকর আহার তৈরি করা শেখানো হবে। যেখানে অংশ নেবে ১০ জন ছেলে শিশু ও ১০ জন মেয়ে শিশু। কেউ একই রকম স্কলারশিপ প্রোগ্রামের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গত, পার্বতী বাউল উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত বাউল সংগীত শিল্পী। বাউল গানের তত্ত্ব কথাগুলি তিনি তার সাধক শিষ্যদের কাছে গানের সাথে সাথে গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। শৈশবে পার্বতী বাউল এর নাম ছিল মৌসুমী পারিয়াল। দেশভাগের আগে তার পূর্বপুরুষদের বাস ছিল বাংলাদেশের রাউজানের পশ্চিম গুজরার গ্রামে।