দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একজন তদন্ত কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার কথা নিজের মুখে স্বীকারের পরও পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে কেন গ্রেপ্তার করতে পারছে না দুদক? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
রোববার অন্য একটি মামলার (হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারি) শুনানির সময় দুদকের আইনজীবীর কাছে এমন প্রশ্ন তুলে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ বলেন, ‘আপনাদের (দুদক) একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। এটা তো এলার্মিং দেশের জন্য। আপনি শৃঙ্খলাভঙ্গ আর তথ্য পাচারের জন্য পিউনেটিভ অ্যাকশন নিয়েছেন? ঘুষের কোনো অ্যালিগেশন আপনি নেননি, অ্যাকশন নেননি। কোনো কিছু করেননি। ডিআইজি মিজান কি দুদকের চাইতে বড়? তাকে তো আপনি অ্যারেস্ট করতে পারছেন না। এই মামলায় তাকে কেন অ্যারেস্ট করছেন না?’
আদালতের এসব প্রশ্নের জবাব দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান তার মত করে দিয়েছেন। তবে ঘুষকাণ্ডে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বা নেওয়া হবে; তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেন নি।
আমরা জানি, একজন নারীকে জোর করে তুলে এনে বিয়ে করা, অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগসহ নানা ঘটনায় আলোচিত ও বিতর্কিত ডিআইজি মিজান। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের যে অভিযোগ তার তদন্ত করছে দুদক।
অনেক দিন আলোচনার বাইরে থাকা সেই ডিআইজি মিজান গত ৯ জুন নিজেই দাবি করেন, তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাছির। এমন অভিযোগের পর তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুদক। কিন্তু মিজানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। কেননা ঘুষ নেওয়া এবং ঘুষ দেওয়া দুটোই ফৌজদারী অপরাধ।
আর এ জন্য প্রশ্নটা উঠেছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা সরাসরি গণমাধ্যমে স্বীকার করছেন তিনি ঘুষ দিয়েছেন, অথচ এর জন্য কোনো আইন পদক্ষেপ দুদক নেবে না; তা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাশিরের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা (সাময়িক বরখাস্ত) নেওয়া যায়, তাহলে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনী পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ ছিল দুদকের।
অনেক ক্ষেত্রেই আমরা লক্ষ্য করেছি, যেসব প্রতিষ্ঠানে ঘুষের বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ সেখানে দুদককে চোখ বন্ধ করে রাখতে। তারপরও দুদকের প্রতি মানুষের একটা আশার জায়গা আছে। অন্তত বড় বড় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নেই আশা কিছুটা হলেও পূরণ করবে।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত আজকে যে প্রশ্ন দুদকের কাছে রেখেছেন, আমরা মনে করি তা শতভাগ যৌক্তিক।এ ধরণের স্বঘোষিত ঘুষদাতার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। না হলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি সাধারণ মানুষের যে প্রত্যাশা, তাতে ধাক্কা লাগবে।