সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিকতাকে কেন্দ্র করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন চেয়ে করা রিট সরাসরি খারিজ (সামারিলি রিজেক্ট) করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো.খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
তবে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন রিটকারি আইনজীবী।
এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের জন্য ৩০ জানুয়ারি তারিখ ঘোষণা করেন। তবে ঘোষিত ৩০ জানুয়ারির এই তারিখ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ সিটি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আজ রিটটি সামারিলি রিজেক্ট করে দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নূর উস সাদিক ও আইনজীবী মিজানুর রহমান।
রিটের শুনানিতে রিটকারি আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু পঞ্জিকা অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি সকাল ৯ টা ১৫ থেকে ৩০ জানুয়ারি সকাল ১১টা পর্যন্ত সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। আর ৩০ জানুয়ারি পঞ্চমীর আগে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া যায় না। তাই আমরা চাই নির্বাচনের তারিখটা পরিবর্তন করতে। কারণ এই পূজাটি দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়ে থাকে। আর ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন হলে এর কয়েক দিন আগে থেকেই ভোটের কার্যক্রম শুরু হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যাতে পূজা পালনে বিঘ্ন ঘটবে বা পূজার আচার-আনুষ্ঠানিকতা বাধাগ্রস্ত হবে। এছাড়া এই আইনজীবী আদালতে হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সংগঠনের ভোটের তারিখ পেছানের চিঠি তুলে ধরেন। এবং ৩০ জানুয়ারি তারিখে এই পূজার বিভিন্ন অনুষ্ঠানসূচি উপস্থাপন করেন।’
তবে শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম আদালতকে বলেন: ‘অনেক দিক বিবেচনা করে নির্বাচনের তারিখটা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর ২ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার এসএসসি পরিক্ষা আছে। তাই নির্ধারিত তারিখ পরিবর্তন করলে এরপর প্রায় ৩ মাস পিছিয়ে দিতে হবে ভোটের তারিখ। কারণ তারিখ নির্ধারণের সাথে পারিপার্শ্বিক অনেক বিষয় জড়িত থাকে। তাই তারিখ নির্ধারণে যদি ‘কো-ইন্সিডেন্ট’ হয়েও থাকে তবু নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতাকে বিবেচনায় নিয়ে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাটি একটু সংক্ষিপ্ত করার অনুরোধ করছি।’
তবে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীর কথার পর আদালতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকটে রানা দাশগুপ্ত।
তিনি বলেন: ‘মাই লর্ড, হিন্দু সম্প্রদায় শুধু দিনের ওপর নয়, ক্ষণের উপর নির্ভর করে। যেমন করে আমাদের একটি বৃহৎ ধর্মের মানুষ চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে। তাই আমাদের পূজার জন্য ক্ষণটি তাৎপর্যপূর্ণ।’
রিটটি খারিজ হওয়াতে আগামী ৩০ জানুয়ারি দুই সিটিতে নির্বাচন যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।